প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সোনাইল গাছ

এস.এম আল আমিন,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

সোনার মতো দেখতে তাই তো এই ফুলের নাম সোনাইল। মেয়েদের কানের অলঙ্কার ঝুমকোর মতো বৈশাখী হাওয়ায় দুলতে থাকে হলুদে সোনালি রঙের থোকা থোকা ফুল। সেই ফুলের ফাঁকে উকিদেয় লম্বা লম্বা ফল। হলুদবরণ সৌন্দর্যে মাতোয়ারা করে রাখে চারপাশের পরিবেশ। গ্রীষ্ম কালে আমাদের দেশে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে যেসব ফুল তার মধ্যে সোনাইল উল্লেখযোগ্য। গ্রীষ্ম রাঙানো এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি তার নামের বাহার সোনাইল, সোনালু, সোঁদাল, বান্দরলাঠি ইত্যাদি। সিরাজগঞ্জে অনেকই এই ফুল বান্দরলাঠি নামেই বেশি চেনেন! ইংরেজি নাম- এড়ষফবহ ঝযড়বিৎ ঞৎবব, বৈজ্ঞানিক নাম- ঈধংংরধ ভরংঃঁষধ। ঈধবংধষঢ়রহরধপবধব পরিবারের সদস্য। আদিনিবাস পূর্ব এশিয়া। তবে হাজার বছর আগেও এ গাছ আমাদের উপমহাদেশে ছিল। উদ্ভিদবিষয়ক একাধিক জার্নাল মারফত জানা যায়, সোনাইল গাছ আকারে ছোট। ডালপালা ছড়ানো-ছিটানো। দীর্ঘ মঞ্জুরিদন্ডে ঝুলে থাকা ফুলগুলোর পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। সবুজ রঙের একমাত্র গর্ভকেশরটি কাস্তের মতো বাঁকানো। এ গাছের ফল বেশ লম্বা, লাঠির মতো গোল। তাছাড়া এর ফল, ফুল ও পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এজন্য এ ফুলের আরেক নাম বান্দর লাঠি। গাঢ় সবুজ রঙের পাতাগুলো যৌগিক, মসৃণ ও ডিম্বাকৃতির। ফুল এক থেকে দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া হয়। এ গাছের কাঠ জ্বালানি ছাড়াও অন্যান্য কাজে লাগে। ফলের শাঁস বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজে লাগে। বাত, বমি ও রক্ত¯্রাব প্রতিরোধে উপকারী। বীজ সহজেই অঙ্কুরিত হয়, যদিও এ গাছের বৃদ্ধি মন্থর। এছাড়াও এ গাছের বাকল, ফল, ফুল ও পাতাও ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে গ্রামে মেঠো পথে অথবা ঝোপঝাড়ে একসময় অনেক সোনাইল গাছ চোখে পড়তো। এছাড়াও হাট, বাজার ও গঞ্জের চারপাশেও দেখা যেত হলুদিয়া সাজের সোনাইল এর উপস্থিতি। এখন হাতেগোনা কিছু গাছ দেখা যায় পথে প্রান্তরে। দিন দিন কমে আসছে সোনাইল গাছের সংখ্যা।কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করেন, এ গাছের কাঠ খুব একটা দামি নয়, কিংবা গাছটি খুব ধীরে বাড়ে বলেই কেউ আর তেমন উৎসাহ নিয়ে সোনাইল গাছ রোপণ করে না। সোনাইল গাছ সাধারণত যতœ করে লাগানো হয় না বরং সে নিজেই বেড়ে ওঠে অযতেœ অবহেলায়। নিরবে বেড়ে ওঠে, থাকেও নিষ্প্রাণ নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে। যখন ফুল ফোটে তখন কারো সাধ্য নেই এই গাছকে দৃষ্টি না দিয়ে এড়িয়ে যাবার। বেড়ে ওঠার সময় তেমন দৃষ্টিতে না পড়লেও ফুল ফোটার পর দেখে সবার মনপ্রাণ প্রশান্তিতে ভরে যায়। প্রাকৃতিক ভাবে যা হয়, তার ওপর ভর করেই হলুদ সোনালি রঙের সৌন্দর্য বিতরণ করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে সোনাইল। এক সারিতে বেশ কয়েকটি গাছে যদি ফুল ফোটে তাহলে সে দৃশ্য বেশী উপভোগ্য হয়ে ওঠে।