ঢাকা

বাড়তি ভাড়া আদায় করে চলেছে গোপালগঞ্জ বাস মালিক সমিতি

  প্রতিনিধি ২৭ জুন ২০২২ , ৮:৫৯:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ

স্টাফ রিপোর্টার:

বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠছে ঢাকা-গোপালগঞ্জ রুটে চলাচলকারি ইমাদ পরিবহন, টুংগিপাড়া এক্সপ্রেস ও দোলা পরিবহনের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) থেকে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া হলেও ওই রুটের চলাচলকারি বাস মালিকেরা মানছেন না এ নির্দেশনা। যা নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে গোপালগঞ্জবাসীর মাঝে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপ ও নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্নভাবে তারা এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জের ফেরিওয়ালা নামক পেজে সাব্বির আহমেদ লিখছেন, বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া ৩৯২ টাকা হওয়া সত্তে¡ও গোপালগঞ্জের পরিবহন গুলি জোর পূর্বক ৪৭০ থেকে ৪৩০ টাকা করে নিতে চায় তাহলে আমাদের সকলের উচিত হবে এসব পরিবহন বয়কট করা। যদি আমরা সত্যি বয়কট করতে পারি তাহলে ঢাকা গোপালগঞ্জ ভাড়া ৩৯২ টাকা করতে ওরা বাধ্য হবে। ওদের বিকল্প অনেক গাড়ি এখন আছে। আমরা চাইলেই সম্ভব।

সহমত জানিয়ে কমেন্টে ওবায়দুল ইসলাম লিখছেন, ৩৯২ টাকার জায়গায় ৪০০ টাকা নিতে পারে তার বেশি নয়। একই পোষ্টের কমেন্টে মো. মুসা শিকদার লিখছেন, কোন ভাবেই বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার বেশি ভাড়া দিয়ে গাড়ী ভ্রমন করবেন না। যে কোন ভাবেই হোক বিআরটিএ থেকে নির্ধারিত ৩৯২ টাকা ভাড়া বাস্তবায়ন করতে হবে। একই পেজে তাপস বাকচি লিখছেন, ঢাকা-গোপালগঞ্জ বাস ভাড়া ৩৯২ টাকা কিন্তু পরিবহন কোম্পানীগুলো সেটা তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত ভাড়া হিসেবে ৪৩০ টাকা রাখছে। এটা অনিয়মে পরিনত হয়েছে। এর আশু প্রতিকার হওয়া দরকার। তার এই পোষ্টে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে কমেন্টস করেছেন।

এক কমেন্টে আমান উল্লাহ বলেন, এই রুটের বাস কোম্পানিগুলো কোনোদিনই সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেয়নি। সব সময় তার থেকে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া আদায় করেছে। কিছু বলতে গেলেই যাত্রীদের সাথে মাস্তানি শুরু করে।

“আমাদের গোপালগঞ্জ” নামক পেজে রিয়াদুল করিম প্রতিবাদ করতে গিয়ে লিখছেন, ঢাকা-গোপালগঞ্জ রুটে চলাচলকারি বাস মালিকেরা আমাদের গোপালগঞ্জ এর জনগনের সাথে ভাড়া নিয়ে টালবাহানা করেছে। বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া ৩৯২ টাকা কার্যকর না করে তারা ৪৩০ টাকা ভাড়া নির্ধারন করছে। তাদের ভাষ্যমতে, তারা গুলিস্থান থেকে পাটগাতি পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারন করছে যা গোপালগঞ্জ এর জনগনের সাথে পুরোপুরি একটা চালাকি।

ঢাকা গোপালগঞ্জ রুটে চলাচলকারি বাস এর ৯৫ ভাগ যাত্রী মোকসেদপুর, ভাটিয়াপাড়া, গোপালগঞ্জ নামে বাকি ৫ ভাগ যাত্রী পাটগাতী নামে তাহলে আমরা কেন পাটগাতীর ভাড়া দিব? কমেন্টে তিনি আরো লিখছেন, আসুন আমরা সবাই মিলে এই অন্যায় অনিয়মকে রুখে দেই। পোষ্টে কমেন্ট করতে গিয়ে রিয়াজুল ইসলাম লিখছেন, সরকার বলে দিয়েছে ঢাকা টু গোপালগঞ্জ ৩৯০ টাকা আর বাস মালিকেরা নিচ্ছে ৪৩০ টাকা। এটা ভয়ংকর জুলুম। এর বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন হওয়া উচিত।

আমরা টুংগীপাড়াবাসী নামক পেজে মো. শরিফুল ইসলাম জুম্মান লিখছেন, টুংগীপাড়া-গোপালগঞ্জ-ঢাকা বাস ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ এর মধ্যে নির্ধারন করা হোক। এই পোষ্টে সহমত জানিয়ে কামাল আহমেদ কমেন্টে লিখছেন, গোপালগঞ্জ জেলার সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে নায্য ভাড়া নির্ধারন করার চেষ্টা করা উচিত। কারন সবাইতো ধনী না। স্বল্প আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে ভাড়া নির্ধারন করা উচিত। একই পোষ্টের কমেন্টে শুভ চৌধুরী লিখছেন, আন্দোলনে না নামলে এদের ভাড়া ডাকাতি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবেনা।

এ দিকে পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে, বিআরটিএর দেয়া নতুন ভাড়ার তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছেনি। তবে নতুন নির্ধারিত ভাড়া সম্পর্কে তারা যেটা জানতে পেরেছেন তাতে তারা সন্তুষ্ট নন। শিগগিরই পরিবহন মালিকরা বিআরটিএর সংশ্লিষ্টদের সাথে ভাড়া নিয়ে বৈঠক করবেন।

গত ৭ জুন বিআরটিএ পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলকারী বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা-রাজৈর-গোপালগঞ্জ রুটে ভাড়া দেখানো হয় ৫০৪ টাকা। এতে গোপালগঞ্জের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানায়। বিষয়টি নিয়ে ঢাকাস্থ গোপালগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম বাবুল হোসেন বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দূরত্ব নিরূপণে সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় বিআরটিএ। ১৪ জুন সওজ থেকে পাঠানো চিঠিতে দূরত্ব দেখানো হয় ১৪৫ কিলোমিটার। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ জুন বিআরটিএ এক বৈঠকে ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করে ৩৯২ টাকা ২১ পয়সা। অথচ সেই ৩৯২ টাকার ভাড়ার যায়গায় প্রতিটি বাসে ভাড়া আদায় করছে ৪৩০ টাকা। কেউ এই ভাড়ার প্রতিবাদ করলে সেখান থেকে বলা হচ্ছে এই ভাড়ায় গেলে যাবেন, না গেলে যাবেন না। অনেকটা বিপদে পড়ে বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।

রাজধানীর গুলিস্তান ও সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় ইমাদ পরিবহন, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, দোলা পরিবহন বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করছে। ঢাকা-গোপালগঞ্জগামী ইমাদ পরিবহনের ম্যানেজার সেলিম শেখ জানান, বিআরটিএর পুনর্র্নিধারণ ভাড়ায় বাস মালিকরা সন্তুষ্ট নন। তবে বিআরটিএর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আপাতত গুলিস্তান থেকে পাটগাতী ৪৩০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছেন। বিআরটিএ কর্তৃক পুনর্র্নিধারিত ভাড়ার তালিকা এখনো মালিক সমিতির কাছে পৌঁছেনি বলে দাবি করেন। তালিকা পেলে বিআরটিএতে আপিল করবেন বলে জানালেন ইমাদ পরিবহনের ম্যানেজার।

 

 

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by