বিশেষ প্রতিবেদন

বিআরটিসিতে দুর্নীতির মহোৎসব
ম্যানেজারের বিরুদ্ধেই সব অভিযোগ

  প্রতিনিধি ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৬:০৫:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

এস এম বাবুল :

বিআরটিসিতে টায়ার টিউব, লুব্রিকেন্ট, তেল-গ্যাস, কম্প্রেসার কেনা, বাস মেরামত, ডিপোর নির্মাণ ও সংস্কারসহ যাবতীয় দিক নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে এর অভ্যন্তর থেকেই। এতে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ডিপো ম্যানেজার মাসুদ তালুকদারের বিরুদ্ধেই উঠেছে এ অভিযোগের আঙ্গুল।
অভিযোগকারীরা বলছেন, মাসুদ তালুকদার ইতিপূর্বে যে সকল ডিপোর দায়িত্ব পালন করছেন, ওই সকল ডিপোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে অনিয়ম-দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। ঢাকার যাত্রীবাড়ি বাস ডিপো ও কুমিল্লা বাস ডিপোতে দায়িত্ব পালনকালে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল। ওই মামলার একটিতে তাকে শাস্তিসহ তিরস্কর প্রদান করা হয়েছিল।
সংস্থাটির একাধিক চালক ও কন্ডাক্টর জানিয়েছেন, ম্যানেজার মাসুদ তালুকদারের বিরুদ্ধে পেট্রোল পাম্প থেকে কমিশন বাণিজ্য, বাসের ট্রিপ চুরি, চুঙ্গি আদায়, খাতায় রাজস্ব আয় কম দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, বাস মেরামতের নামে টাকা লুটপাটের অভিযোগ এর আগেও হয়েছে। কিন্তু কর্পোরেশনের যে সময় যে চেয়ারম্যান দায়িত্বে থাকেন তাকে ম্যানেজ করে তিনি বারবার পার পেয়ে যান।
ট্রিপ চুরি, রাজস্ব লুট, রক্ষণাবেক্ষণের নামে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো, দরপত্র ছাড়া নির্মাণ ও মেরামতের কাজ নিজের পছন্দের লোক দিয়ে করানো অভিযুক্ত এমন কর্মকর্তাকে শাস্তি না দিয়ে উপহার স্বরূপ মতিঝিল বাস ডিপো থেকে জোয়ারসাহারা ডিপোতে সম্প্রতি বদলি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিআরটিসির অনেক শ্রমিক।
বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা জানান, বাসের ট্রিপ চুরি, যন্ত্রাংশ কেনার নামে অতিরিক্ত ব্যয় ও নিজের পকেট ভারী করেছেন ডিপো ম্যানেজার মাসুদ তালুকদার ও তার সিন্ডিকেটের লোকজন। ডিপোতে যানবাহন মেরামত ব্যয়, গাড়িতে অতিরিক্ত জ্বালানি তেল ব্যবহারসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগও রয়েছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
কাউন্টার সংস্কার কাজে টেন্ডার আহবান না করে পছন্দের লোক দিয়ে কাজ করিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করছেন ওই ডিপোর এক কর্মচারী। এছাড়াও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের এক কর্ণধার ও একই অভিযোগ করেছেন। সংশোধিত দরপত্রে সিডিউল কিনতে গেলে সিডিউল না দেওয়ার অভিযোগ করছেন ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ (রবিবার) সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বরাবরে কমলাপুর ডিপোর মো. ইকবাল হোসেন ও ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ (সোমবার) একই ডিপোর হিসাব শাখার মো. মাহবুবুর রহমান এবং ২৩ আগস্ট ২০২২ (মঙ্গলবার) ৩৬, কমলাপুরের বাসিন্দা মো. শহিদুল ইসলাম ও ১১ আগস্ট ২০২২ (বৃহস্পতিবার) মো. কামাল হোসেন ও মতিঝিল বাস ডিপোর বেশ কয়েকজন চালক কর্তৃক বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান বরাবরে দায়ের করা পৃথক পৃথক অভিযোগ থেকে এ সব জানা যায়।
এছাড়া মতিঝিল বাস ডিপোর দূরপাল্লায় চলাচলের গাড়ীর সামনের চাকাতেও রাবার টায়ার ব্যবহারের অভিযোগ আছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক বলেন, ম্যানেজার মাসুদ তালুকদার দূরপাল্লার বাসের সামনের চাকাতেও রাবার টায়ার ব্যবহার করে বছরের পর বছর গাড়ী চালিয়েছেন। এসব টায়ারের নতুন বিল দেখিয়ে রাবার টায়ার ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করছেন মতিঝিল ডিপোর অনেক চালক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক চালক বলেন, দূর পাল্লার বাসের সামনের চাকার রাবার টায়ার ব্যবহার নিষেধ থাকলেও ম্যানেজার মাসুদ তালুকদার তা মানেননি। তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সচিবালয়ের এক অনুষ্ঠানে দুটি বাস রাস্তায় বিকল হয়। তাছাড়া জোড়াতালি দিয়ে গাড়ী চালানোর জন্য গাড়ীতে অতিরিক্ত তেল অপচয় হয় যা চালকদের বেতন থেকে মাস শেষে কর্তন করার কথা বললেন এ চালক।
এসি বাসের ইঞ্জিন বাইরে বিক্রি করে ওই বাসে টিসি বাসের ইঞ্জিন যুক্ত করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন ৩৬, কমলাপুরের বাসিন্দা মো. শহিদুল ইসলাম। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, মতিঝিল বাস ডিপোর সাবেক ম্যানেজার মো. মাসুদ তালুকদার ওই ডিপোতে কর্মরত তার চাচাতো ভাই আমজাদ কে দিয়ে অশোক এসি বাসের ইঞ্জিন যার নম্বর (ব-১১-৬৭৯৮) বাইরে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করে ওই বাসে টিসি ইঞ্জিন লাগিয়ে রাখেন। এক পর্যায়ে নিজের দুর্নীতি ঢাকতে বাসটি অকেজো তালিকায় যুক্ত করে হেড অফিসে নোট পাঠান বলে জানান অভিযোগকারী।
অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে মুঠোফোনে মাসুদ তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। গাড়ীর ইঞ্জিন বিক্রি প্রসঙ্গে বলেন, এসি গাড়ীর ইঞ্জিনের স্থলে টিসি গাড়ীর ইঞ্জিন লাগানো যায় না। তাছাড়া এসি গাড়ীর ইঞ্জিনের যে ছাঁচ তাতে টিসি গাড়ীর ইঞ্জিন লাগানো সম্ভব নয়। এ ছাড়াও যে গাড়ীর ইঞ্জিন বিক্রির অভিযোগ করা হয়েছে ওই গাড়ীটি আমার যোগদানের আগেই অকেজো গাড়ীর তালিকায় ছিল। লগসীটে প্রমাণ আছে বললেও লগসীট দেখাতে রাজি হননি এ কর্মকর্তা। সরেজমিনে অকেজো গাড়ীটি দেখতে চাইলে মতিঝিল ডিপোর বর্তমান ম্যানেজার মোশারফ হোসেন হেড অফিসের জিএম (ফাইনান্স) আমজাদ হোসেনের অনুমতি ব্যতিত গাড়ী দেখাতে অপাগরতা প্রকাশ করেন।
সরেজমিনে ইঞ্জিন বিক্রির অকেজো গাড়ীটি দেখার অনুমতি চেয়ে মুঠোফোনে জিএম আমজাদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট ডিপোর ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানান, এসি গাড়ীর ইঞ্জিন বাইরে বিক্রি করার তথ্য সঠিক নয়।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by