রাজশাহী

বিআরটিসি বগুড়া বাস ডিপোর কোটি টাকা লুটে সম্পৃক্ত ম্যানেজার গোলাম ফারুক একাধিক ডিপোর দায়িত্বে

  প্রতিনিধি ২০ আগস্ট ২০২২ , ৮:৫১:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

বিআরটিসি বাস, ফাইল ছবি ।

এস এম বাবুল: বগুড়া বিআরটিসি বাস ডিপোর অজমা রাজস্বের লুুট হওয়া এক কোটি বার লাখ বাষট্টি হাজার ছয়শত টাকা বিগত আট বছরেও আদায় করতে পারিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিসি)। তবে লুটপাটের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে প্রত্যাহারকৃত সেই ম্যানেজার গোলাম ফারুককে (টেকনিক্যাল) দিনাজপুর বাস ডিপোর বাড়তি দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিআরটিসি’র এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, লুটপাটে অভিযুক্ত বগুড়া বাস ডিপোর তৎকালীন ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) গোলাম ফারুক বর্তমানে রংপুর বাস ডিপো ও ট্রেনিং সেন্টারের দায়িত্বের পাশাপাশি দিনাজপুর বাস ডিপো ও ট্রেনিং সেন্টারের বাড়তি দায়িত্ব পালন করছেন।

ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) বর্তমান চলতি দায়িত্বে (ডিজিএম) গোলাম ফারুক ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল বগুড়া বাস ডিপোতে যোগদানের পর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকে বাহিরের লোক দিয়ে বিধিবহির্ভূত শর্ট লিজ নামক কথিত পদ্ধতিতে বাস পরিচালনা করে কর্পোরেশনের এক কোটি বার লাখ বাষট্টি হাজার ছয়শত টাকা রাজস্ব অজমা রাখেন যা আজও ওই ডিপোতে জমা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোলাম ফারুক বগুড়া বাস ডিপোতে যোগদানের পর বহিরাগত শফিকুল ইসলাম বাচ্চু ও আপেল মাহমুদকে দিয়ে বিভিন্ন রুট পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে এবং এ সকল রুট থেকে যে আয় (রাজস্ব) আসে তা জমা না দিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয় এবং এভাবে বগুড়া বাস ডিপোকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করার কথা জানিয়েছে ওই সময়ে বগুড়া বাস ডিপোতে দায়িত্বরত চালক ও কন্ডাক্টররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চালক ও কন্ডাক্টর এ প্রতিবেদককে জানান, বগুড়া বাস ডিপোর আওতায় ওই সময় উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২৫ টি রুটে চলাচল করে ৪৪ টি এসি-ননএসি বাস। এ সব বাস বিআরটিসির নিজস্ব চালক, কন্ডাক্টরদের পরিচালনা করার কথা থাকলেও ম্যানেজার গোলাম ফারুক বহিরাগতদের দিয়ে তা পরিচালনা করেন।

তাছাড়া সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ডিপোর হিসাব শাখায় দৈনন্দিন রাজস্ব আদায় জমা করার কথা থাকলেও আদায় করা হয়েছে ডিপো ম্যানেজারের আস্থাভাজনদের দিয়ে গোপন আস্তানায়। এক পর্যায়ে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পেরে তৎকালীন ম্যানেজার গোলাম ফারুককে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে বগুড়া থেকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার (স্ট্যান্ড রিলিজ) করে ওই মাসের শেষ সপ্তাহে নতুন ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) আব্দুর রহিমকে বগুড়া বাস ডিপোতে পাঠায়। বহিরাগতদের দাপট ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তবে ওই সময়ের অজমা রাজস্ব সরকারি খাতে জমা না হওয়ায় কাগজে-কলমে যে সকল চালক ও কন্ডাক্টরদের নামে বাস পরিচালনা দেখানো হয়েছিল তাদের কে অজমা রাজস্ব জমা দেওয়ার জন্য নতুন ম্যানেজার চিঠি ইস্যু করে। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত চালক ও কন্ডাক্টররা কর্পোরেশন সহ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব বরাবরে আবেদন করে।

তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় ও কর্পোরেশন থেকে আলাদা আলাদা তদন্ত করে চালক ও কন্ডাক্টরদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) গোলাম ফারুককে বকেয়ার নামে লুটপাট হওয়া টাকা জমা দেওয়ার জন্য কর্পোরেশন থেকে ২০১৬ সালে কয়েক দফায় এবং ২০১৯ সালে চিঠি দেয় বিআরটিসি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে লুট হওয়া টাকা আজও জমা হয়নি। এর আগে প্রধান কার্যালয়ের প্রশাসন বিভাগের শ্রম শাখায় কর্মরত সিনিয়র শ্রম কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান এবং উচ্চমান সহকারী রাশেদুল আলম সিরাজীর সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ডিপোর ইন-আউট রেজিষ্টার, সেল রেজিষ্টার, ট্রিপ সিট ও ওয়েবিল ইত্যাদি সরেজমিন পর্যালোচনা করে রাজস্ব অজমার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করলে ওই প্রতিবেদনেও ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) গোলাম ফারুকের সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়।

অভিযোগ উঠছে বিআরটিসি প্রধান কার্যালয়ের অসাধু কিছু কর্মকর্তার যোগ সাজসে অজমা রাজস্ব জমা না দিয়েও বহাল তবিয়তে আছেন রাজস্ব লুটে সম্পৃক্ত তৎকালীন বগুড়া বাস ডিপোর ম্যানেজার গোলাম ফারুক। হেড অফিসের অসাধু কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দাপটের সাথে একাধিক ডিপোর দায়িত্ব পালনের মধ্যে দিয়ে নানাবিধ সুবিধা ভোগ করে চলছেন বলে জানান এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, হেড অফিসকে ম্যানেজ করে গোলাম ফারুক বছরের পর বছর অজমা রাজস্ব জমা না করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। নিজের অপরাধ আড়াল করতে এবং লুটপাটের টাকা না দিতে হেড অফিসকে দিয়ে নিরপরাধ চালক ও কন্ডাক্টরদের শুনানীর নামে চিঠি ইস্যু করে কালক্ষেপণ করে চলছেন। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ইতিপূর্বে চালক ও কন্ডাক্টরদের কয়েক দফায় শুনানী করা হলেও অজ্ঞাত কারণে বারবার তাদের কে হেড অফিসে তলব করা হচ্ছে।

অজমা রাজস্ব জমার বিষয় জানতে চাইলে বগুড়া ডিপোর সাবেক ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) বর্তমান চলতি দায়িত্বে (ডিজিএম) গোলাম ফারুক ভোরের দর্পণকে বলেন, অজমা রাজস্ব জমা হচ্ছে, তবে কোথায় কিভাবে জমা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত বগুড়া বাস ডিপোর বকেয়া রাজস্ব জমার বিষয় জানতে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (পিএন্ডএস) মনিরুজ্জামান বাবুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভোরের দর্পণকে বলেন, ওই সময়কার অজমা রাজস্ব আজ পর্যন্ত বগুড়া বাস ডিপোর হিসাব শাখায় জমা হয়নি।

 

২০১৩-২০১৪ সালে বগুড়া বাস ডিপোর অজমা রাজস্ব লুটে সম্পৃক্ত ম্যানেজারকে শাস্তির আওতায় না এনে অতিরিক্ত ডিপোর দায়িত্ব প্রসঙ্গে জানতে বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ভোরের দর্পণকে বলেন, ওই সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। কাগজপত্র না দেখে এ বিষয় কিছু বলা যাবেনা। আমার যোগদানের পর কোন বিষয় থাকলে তা বলতে পারেন। তবে পুরানো কোন বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে অফিসে এসে তথ্য কর্মকর্তার কাছ থেকে জানার পরামর্শ এ শীর্ষ কর্মকর্তার।

 

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by