প্রতিনিধি ১১ এপ্রিল ২০২৩ , ১:৪৪:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ
ভোরের দর্পণ ডেস্ক :
আগামী মে ও জুন মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ‘ফাঁদ’ বলে মনে করছে বিএনপি। এ অবস্থায় নির্বাচন বিষয়ে আগের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে পাঁচ সিটির নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না দলটি। গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। তবে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা বলছেন, তারা এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের পরীক্ষা নিতে চান।
গতকাল বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘এবার জনগণ সরকারের কোনো ট্রাপে (ফাঁদে) পা দেবে না, বিএনপি কোনো ট্রাপে পা দেবে না। আমাদের সরাসরি বক্তব্য- আমরা কোনো ট্রাপে যাচ্ছি না। তাদের ট্রাপকে উল্টে ফেলে দেব। আমাদের আন্দোলন একটাই, এই সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। আর স্থানীয় সরকার নির্বাচন তো অনেক আগেই বাদ দিয়েছি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমানকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে তার দল। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা- এটা আমাদের আগের সিদ্ধান্ত। এর আগে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আমরা অংশগ্রহণ করেছি। সেখানে দেখেছি, দেশের মানুষ ভোট দিতে পারছে না। এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তা প্রমাণ করছি, প্রতিবাদ করছি। আমরা নির্বাচনের অনিয়মগুলো চিহ্নিত করছি। আমরা এখনো জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিইনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, তা হলে আমরা কেন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেব?’
যদিও দলের নির্বাচনমুখী নেতারা মনে করেন, পাঁচ সিটি করপোরেশনের এ নির্বাচন দেশের পাঁচটি অঞ্চলের মানুষের মনোভাব বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষ সরকারের ওপর বিক্ষুব্ধ। তারা ফাঁকা মাঠে কাউকে গোল দিতে দেখতে চায় না। এ কারণে এ নির্বাচন নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে আগ্রহ আছে। তা ছাড়া মানুষের মধ্যে এই আলোচনাও আছে যে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকা কেমন হয়, এটাও দেখার বিষয় আছে। তাই জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারের ভোট চুরি বা ভোট ডাকাতি হলে, তারও সর্বশেষ পরীক্ষাটা হওয়া দরকার।
যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, ‘নির্বাচন হলেই তো যাওয়ার প্রশ্ন আসে। যেখানে নির্বাচনই হয় না, সেখানে জেনেশুনে যাওয়ার কী আছে। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, এই সরকারের অধীন নির্বাচনে যাওয়া অর্থহীন। নির্বাচনের নামে এখানে যা হয়, এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর থেকে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না বিএনপি। তবে বিএনপি অংশ না নিলেও ইসলামী আন্দোলন আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে গাজীপুরে মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, খুলনায় হাফেজ মাওলানা আবদুল আউয়াল ও সিলেটে হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে দলটি। বরিশাল ও রাজশাহীর মেয়রপ্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান নেতারা।
ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সব সময় দলীয় সরকারের অধীনেই হয়ে থাকে। এখানে সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতার পরীক্ষা নিতে চাই। এ ছাড়াও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লক্ষ্য দুর্নীতি, দুঃশাসনমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
এ প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার ও মিডিয়া উপকমিটির সহকারী সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম কবির আমাদের সময়কে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা এই লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরা অনেক আগেই বলেছি, দলীয় সরকারের অধীনে নয়, জাতীয় নির্বাচন হতে হবে জাতীয় সরকারের অধীনে।
ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মাওলানা উবাইদুর রহমান। তিনি অসুস্থ থাকায় বিকল্প প্রার্থী কেন্দ্রীয় সভাপতিম-লীর সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন এবং বরিশাল জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক মুফতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের আলোচনায় আছেন। মুফতি আবুল খায়ের চরমোনাই পীরের ছোট ভাই এবং চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। মেয়র নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে তাকে দল থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন দেওয়া হয় তার আরেক ছোট ভাই সৈয়দ মুহাম্মাদ জিয়াউল করিমকে। তিনি বর্তমানে ওই ইউপির চেয়ারম্যান।
দলটির নেতারা জানান, আশরাফ আলী দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে দলের ভেতরে বেশ জনপ্রিয় তিনি। এ ক্ষেত্রে দুজনই বরিশাল সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে শক্তিশালী প্রার্থী। তাদের দুজনের মধ্যে একজনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে।
সাংগঠনিকভাবে বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের শক্ত অবস্থান থাকলেও রাজশাহীতে ওই অর্থে তেমন কোনো অবস্থান নেই। তবে দলের নেতারা জানান, সেখানেও একাধিক প্রার্থী আলোচনায় থাকলেও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক তারিফ উদ্দিনকে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হতে পারে।