খুলনা

বিদ্যালয়ের নাম বলতে লজ্জা পায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা!

  প্রতিনিধি ১৩ আগস্ট ২০২০ , ৮:১৭:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

যশোর প্রতিনিধি : যশোর জেলার ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম নিয়ে প্রায়ই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বিকৃত এসব নাম থাকলেও ডিজিটাল যুগে পরিবর্তন চায় শিক্ষার্থীরা। সূত্রে জানাগেছে, ১৯৮৮ সালে যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের মাংগিরপাড়া গ্রামে এলাকবাসীর উদ্যোগে গ্রামের নামেই প্রতিষ্ঠা হয় ‘মাংগীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৩ সালে সারাদেশে ২৬ হাজার রেজিস্টার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের তালিকায় ছিল এটিও। ‘মাংগীরপাড়া’ শব্দটি নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অস্বস্তি বেশি। তাদেরকেই সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। অন্য বিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা বিদ্রæপ করায় অনেকেই ভর্তি হতে চায় না এখানে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে মাত্র ৬৬ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। শিক্ষক শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীও চায় বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হোক। শুধু মাংগীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, যশোর জেলায় আরও অনেকগুলো বিদ্যালয় রয়েছে, যার নাম শ্রæতিমধুর নয়। এমন প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে তালিকা করতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তালিকা প্রস্তুত করবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসূত্রে মতে, যশোর জেলায় শ্রæতিমধুর নয়, এমন অন্তত ২৫টি বিদ্যালয়ের নাম পাওয়া গেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো হলো- যশোরের চৌগাছা উপজেলার মাংগীরপাড়া, গুয়াতলী, কাদবিলা ঝাউতলা, আড়ারদহ নিমতলা, চুটারহুদা, বাজে খড়িঞ্চা, আগমপুর হোগলডাঙ্গা, মশ্মমপুর, তজবীজপুর, পেটভরা। সদর উপজেলার শ্রীপদ্দি, জোত রহিম, টিকেজি সম্মিলনী, নোঙরপুর, মাথাভাঙ্গা, সিরাজসিংহা তরফদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কেশবপুরের গড়ভাঙ্গা মাঝপাড়া, নেপাকাটি, পাত্রপাড়া, অভয়নগর উপজেলার আদিলপুর বিভাগদি, কলারাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মণিরামপুরের চেৎলা ডুমুরখালী, হানুয়ার কোমলপুর, সুন্দ্রা ও বিবিজিএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও আরও বেশ কিছু বিদ্যালয় রয়েছে। যাচাই শেষে জেলা শিক্ষা অফিসের চূড়ান্ত তালিকায় প্রকৃত সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এইসব নামকরণ নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরও আপত্তি আছে। আবার কোথাও কোথাও এলাকাবাসীর আপত্তিও আছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের নামটি বিব্রতকর। শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবাইকে প্রতিনয়ত অস্বস্তিতে পড়তে হয়। যে কেউ নামটি শুনলে পাল্টা প্রশ্ন করেন এমন নাম হয় নাকি। বেশিরভাগ মানুষ বিদ্যালয়ের নাম শুনে হাসাহাসি করেন। কোমলমতি শিশুরাও প্রতিনিয়ত বিদ্রæপের শিকার হন। অন্য বিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা এই বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরতদের বিদ্রæপ করে। কোমলমতি শিশুদের মন খারাপ করে। অনেকেই বিদ্যালয়ে পড়তে চায় না। এছাড়াও গ্রামে লোক সংখ্যা তুলনামূলক কম। সবমিলিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যাও কম। আমরা আছি বিপাকে।
প্রধান শিক্ষক মফিজুর রহমান বলেন, তিন বছর দায়িত্ব পালন করছি। কয়েক বার বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছি হয়নি। শিক্ষক শিক্ষার্থী ও গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ চায় নাম পরিবর্তন হোক। এই অস্বস্তি থেকেই সবাই মুক্তি চায়। মানুষের উপহাসের পাত্র আর কেউ হতে চায় না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আবারও অবহিত করেছি, যাতে দ্রæত নাম পরিবর্তন সম্ভব হয়।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম বলেন, যশোরের ৮ উপজেলায় এক হাজার ২৮৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে পাঁচ শতাধিক জাতীয়করণকৃত। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে যাচাই বাছাই করে, শ্রæতিমধুর নয় এমন বিদ্যালয়ের তালিকা করবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। এরপর জেলার চূড়ান্ত তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, মাংগিরপাড়া বিদ্যালয়ের বিষয়য়ে আমি অবহিত আছি। নাম পরিবর্তন করে শ্রæতিমধুর করা হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শাম্মী ইসলাম জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে দেশের যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম শ্রুতিমধুর না সেসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নতুন করে নাম রাখা হবে। সে নাম হবে শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে শ্রুতিমধুর। এ লক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক ( পলিসি ও অপারেশন) খালিদ আহমেদ সাক্ষরিত চিঠি এসেছে। সেই চিঠিতে শ্রুতিমধুর নাম না এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামের তালিকা পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শ্রুতিমধুর নাম না এমন বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার কাজটা সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ। কারন শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে মিল না রেখে যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে সেগুলো পড়তে বিব্রতকর লাগে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by