চট্টগ্রাম

বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐহিত্য গরু দিয়ে ধান মাড়াই

  প্রতিনিধি ১৮ এপ্রিল ২০২১ , ৬:২১:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ

আধুনিক সভ্যতার ছোয়ায় নবীনগরে বিলুপ্তির পথে এক সময়কার গ্রামবাংলার ঐহিত্য গরু দিয়ে ধান মাড়াই। কৃষি ক্ষেত্রে যান্ত্রিকতার প্রচলনে এখন ধান বপন, রোপণ, কাটা ও মাড়াই করা, এমনকি ধান থেকে চাল করা সহ প্রত্যেকটা কাজই সম্পন্ন হচ্ছে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার দ্বারা। গরু দ্বারা লাঙ্গল টানা সেই জরাজীর্ণ কৃষককে এখন আর দেখা যায় না। কৃষকরা হালের গরু ছেড়ে চাষাবাদসহ সকল কৃষি কাজে এখন সাহায্য নেয় ট্রাক্টরের পাশাপাশি সব আধুনিক যন্ত্রের। রূপ, রং আর ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। শস্য শ্যামলতা ভাটিয়ালী সুরের গান, রাখালের বাঁশি, কৃষকের উদার জমিন, কৃষাণীর ধান ভানার উল্লাস, ছয় রূপের ছয়টি ঋতু সব মিলিয়ে এ যেন কোনো শিল্পীর নিপুণ হাতে রং তুলিতে আঁকা স্বপ্নের দেশ।

এ দেশে সন্ধ্যা-সকালে ডাহুক, দোয়েল, কোকিলের ডাকে মানুষের ঘুম ভাঙত। প্রকৃতির পালাবদলে প্রতিবছর ফিরে আসে ছয়টি ঋতু। ঋতু চক্রের ঘূর্ণায়মান রূপকালে যখন হেমন্তের আগমন ঘটতো তখন গ্রাম বাংলার কৃষকরা ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠতো। কৃষকরা দিনে ধান কেটে বাড়িতে আনার পর সন্ধ্যার আধাঁরে মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠতো। এত কর্মব্যস্ততার মাঝে ও কৃষক-কৃষাণীর মুখে হাসির বলিরেখা ফুটে উঠত। ধান মাড়াইয়ের পর গ্রাম বাংলার প্রতিটি কৃষক পরিবার মেতে উঠত নবান্ন উৎসবে।

নতুন চালের ভাত, পিঠা-পুলি, আর পায়েসের গন্ধ ভেসে আসতো প্রায় প্রতিটি ঘর থেকে। এখন উন্নত মানের পাওয়ার টিলারের সাহায্যে দ্রুত জমি প্রস্তুত করা যাচ্ছে। আগের মত চাষাবাদে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা না করে পাম্পের সাহায্যে সেচ কাজ করে পানির চাহিদা মিটানো হচ্ছে। জমিতে বীজ ছিটানোর জন্যে এখন আছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। দিনব্যাপী চাষাকে আর গায়ের ঘাম ঝরিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে না।

আধুনিক যন্ত্রপাতির দ্বারা ধান কাটার পর হালের গরু দিয়ে রাত জেগে হৈ হল্লা করা, গুর গুর করে কৃষক-কৃষাণীর হুক্কা খায়ে ধান মাড়াইয়ের দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। তবে আধুনিক সভ্যতার ভিড়ে পুরানো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে অনেকটাই শখের বসে মাঝে মাঝে হালের গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ করে বলে জানান কৃষক আবু রহিম।

কৃষক মনির হোসেন বলেন, বিজ্ঞানের নিত্য নতুন অবিষ্কার ও আধুনিক সভ্যতার প্রচলন এই দুইয়ের সমন্বয় কৃষিতে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তবে এটাও ঠিক বিজ্ঞানের এই নব নব আবিষ্কারের ভিড়ে আমরা হারাতে বসেছি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে, আমাদের স্বকীয়তা ও আমাদের সত্তাকে। আগামী প্রজন্মের কাছে এক সময়কার এ সব ঐতিহ্যকে পরিচিত করতে চাষাবাদে আধুনিক যন্ত্রপাতির পাশাপাশি এ সব পুরনো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার দরকার বলে মনে করি ।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by