ঢাকা

বোয়ালমারীতে জন্ম নিবন্ধন সনদ জালিয়াতির অভিযোগ ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে

  প্রতিনিধি ২৭ জুন ২০২১ , ৬:৩৫:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

এস এম রুবেল, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

সত্যব্রত খাঁ সুব্রত পিতা সচিন্ত্য কুমার খাঁ গ্রাম শ্রীনগর, ইউনিয়ন পরমেশ্বরদী বোয়ালমারী ফরিদপুর। ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তার জন্ম নিবন্ধন করান। পরবর্তিতে দেখা যায় তার জন্ম সনদটি অনলাইনে নেই। অনলাইনে তার জন্ম সনদ সার্চ দিলে একই জন্ম নিবন্ধন নম্বরে দেখা যায় সত্যব্রত খাঁর পরিবর্তে সেটি তামিন পিতা জাকির শেখ গ্রাম ময়েনদিয়া নামে হয়ে গেছে। তেমনি ওই গ্রামের সৃজন সাহা পিতা মধূসুদন সাহা হয়ে গেছে আব্দুল্লাহ সিয়াম পিতা ছবির শেখ গ্রাম ধুলজোড়া, প্রত্যয় কুমার সাহা পিতা প্রতাপ কুমার সাহা হয়ে গেছে আ. আহাদ মোল্যা পিতা জাহাঙ্গীর মোল্যা গ্রাম ধুলজোড়া, দয়িতা সাহা পিতা দিপায়ন সাহা হয়ে য়ায় মারজিয়া ইসলাম পিতা মো. জিন্নাত মোল্যা গ্রাম পরমেশ্বরদী, বাবলী রানী সাহা মিমি পিতা দুর্লভ চন্দ্র সাহা হয়ে যায় দীপু মন্ডল পিতা দেব কুমার মন্ডল গ্রাম পুতন্তীপাড়া, তিশা দত্ত পিতা দিনেশ দত্ত হয়ে যায় লামিয়া সুলতানা পিতা টিটু মোল্যা গ্রাম জয়পাশা। এ রকম ৩৪জনের সন্ধান পাওয়া গেছে যাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ পরিবর্তিত হয়ে অন্যেরে নামে হয়ে গেছে। পরিবর্তিত এ সকল জন্ম নিবন্ধন সনদে স্বাক্ষর করেছেন পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ রিবুল হোসেন। অভিযোগ উঠেছে এ সকল জন্ম সনদ জাল করে সচিব বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। তবে সনদ জালিয়াতি ও অর্থ নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন সচিব রিবুল হোসেন। জন্ম নিবন্ধন সনদ পাল্টে যাওয়ায় বিপদে পড়া পরমেশ্বরদী গ্রামের ৩৫জন ব্যক্তি এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। এ ছাড়াও সচিবের বিরুদ্ধে জন্ম নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ নানাবিধ কাজে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

জন্ম নিবন্ধন সনদ পরিবর্তন হওয়ায় বিপদে পড়া উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিযোগ করেন তাঁর ছেলের পাসপোর্ট রয়েছে এবং বেতনের জন্য ইলেক্ট্রিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) করার জন্য কাগজপত্র প্রস্তুত করতে গিয়ে দেখেন ছেলের জন্ম নিবন্ধন সনদ নেই। বিষয়টি নিয়ে ইউপি সচিবের নিকট গেলে তিনি উল্টাপাল্টা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে সচিব তাকে এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। বাড়াবাড়ি করলে তাকে ভারত পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। শাহ জাফর টেকনিক্যাল কলেজের একজন অধ্যাপকও ইএফটি করতে গিয়ে বিপদে পড়েন অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকায়।

পরবর্তিতে খোঁজাখুজি করতে গিয়ে দেখা যায় আরও অনেকেরই জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইনে নেই। তখন তাঁরা দৌড়ঝাপ শুরু করেন। কারণ ইএফটি করতে না পারলে তাদের বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। ছেলে-মেয়েদের পাসপোর্ট ভিসা করতে পারবেন না। দৌড়ঝাপে কাজ না হওয়ায় শ্রীনগর গ্রামের ৩৫জন ব্যক্তি জটিলতা নিরসনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই সচিবকে ডেকে ভূক্তভোগীদের জন্ম নিবন্ধন সনদ ঠিক করে দেওয়ার নির্দেশ দিলে সচিব পর্যায়ক্রমে তাদের সনদ ঠিক করে দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে শ্রীনগর নিবাসি ময়েনদিয়া বাজারের ব্যবসায়ী দুর্লভ চন্দ্র সাহা বলেন, আবেদন দেয়ার পাশাপাশি আমার এক চাচা সচিব, তাঁকে দিয়ে ফোন করিয়ে জন্ম নিবন্ধন ঠিক করা হয়। তবে এখনও সবারটা ঠিক হয়নি। আমাদের টা ঠিক করার সময় টাকা পয়সা লাগেনি কিন্তু পরে যারা গিয়েছে তাদের কাজ এমনি হয়নি। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আপনি ময়েনদিয়া বাজারে এসে খোঁজ নেন সব জানতে পারবেন।

পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ রিবুল হোসেন অবশ্য সনদ জালিযাতি ও অর্থ নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আগে জন্ম নিবন্ধনের কাজ উদ্যোক্তারা করতো। তারা কোন কাজ ঠিকমতো করতে পারেনি। তিনি বরঞ্চ বিপদে পড়া ব্যক্তিদের উপকার করেছেন সনদ ঠিক করে দিয়ে। সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ দিবে জানলে তাদের কাজ করে দিতাম না। একজন ব্যবসায়ীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ওর হাত-পা ভেঙ্গে দিয়ে আসতাম। ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সাথে ওই শিক্ষকের চ্যালেঞ্জ হয়েছিল- আমি সৌদি চলে যাবো আর না হলে তাকে ভারত পাঠিয়ে দেবো। জন্ম নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন কাজে টাকা নেয়ার বিষয়ে বলেন, দুজন উদ্যোক্তা আছে, নেট ক্রয়সহ আরও অনেক কাজ আছে। সে সকল কাজের জন্য কিছু টাকা বেশি নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম মিনা বলেন, জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়ে কিছু অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কথাও কেউ কেউ বলেছেন। তবে এ সব বিষয়ে আমি তাকে সতর্ক করেছি। পাল্টে যাওয়া জন্ম নিবন্ধন সনদে আপনার স্বাক্ষর আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জন্ম নিবন্ধন একটা টেকনিক্যাল বিষয়। সচিব এ কাজগুলো করে থাকে। তাই তার স্বাক্ষর দেখে আমি স্বাক্ষর করেছি।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঝোটন চন্দ অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আবেদনকারীদের জন্ম নিবন্ধন সনদ পাওয়ার কাজটা তখন জরুরী ছিল। তাই সচিবকে ডেকে দ্রুত তাঁদের কাজ করে দেয়ার নির্দেশ দেই। তবে বেশ কিছু দিন কেউ কিছু বলেনি। অভিযোগকারীরাও কেউ আসেনি। হয়তো কাজ হয়ে গেছে বলেই কেউ আর যোগাযোগ করেনি। তবে সচিব রিবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। মৌখিক আরও কিছু অভিযোগ আছে। নতুন করে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকির বিষয়ে সে (সচিব) স্বীকার করে বলেছে, ওই শিক্ষক তার বন্ধু হয় সেজন্য ইয়ারকি করে বলেছে।

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by