রাজশাহী

ভাঙ্গুড়ায় দ্বিগুন দামে রাসায়নিক সার বিক্রি চাষাবাদ নিয়ে চরম বিপাকে কৃষক

  প্রতিনিধি ৬ ডিসেম্বর ২০২২ , ৭:৫২:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

ময়নুল হক, ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি :

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় পৌরসদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজারগুলোতে দ্বিগুন দামে রাসায়নিক সার এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) কিনতে বাধ্য হচ্ছে স্থানীয় কৃষকেরা। এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সারের চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কিছুটা কম থাকার সুযোগে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সরকারের নির্ধারিত ৭৫০ টাকা দামের ৫০ কেজির এক বস্তা এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার ১ হাজার ৩শ ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪ শ টাকা বিক্রি করছে বিসিআইসি ডিলার, সাব ডিলার ও বিএডিসি ডিলাররা। ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুন দামে সার কিবতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকেরা। এতে চলতি রবি শস্য মৌসুমে চাষাবাদ নিয়ে চরম বিপাকে এবং উৎপাদন খরচ নিয়ে কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে দ্বিগুন দামে প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষক ইতোমধ্যে চাহিদা অনুযায়ী সার ক্রয় জমিতে ব্যবহার করেছে। ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ৬হাজার ৬শ ৮০ হেক্টর জমিতে ধান, গম, ভূট্টা, পেঁয়াজ, রসুন ও শাকসরজিসহ বিভিন্ন ধরণের ফসল উৎপাদন হয়। এসব ফসল উৎপাদনে সরকার নভেম্বর মাসে বরাদ্দ দিয়েছে ইউরিয়া সার ৪শ ৮৫ মেট্টিক টন, টিএসপি সার ৭৫ মেট্টিক টন, ডিএপি সার ৫০০ মেট্টিক টন এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার ২শ ৩০ মেট্টিক টন। এ ছাড়া ডিসেম্বর মাসে বরাদ্দ পেয়েছে ইউরিয়া ৫শ ১৪ মেট্টিক টন, টিএসপি ১শ মেট্টিক টন, ডিএপি সার ৫শ ৭০ মেট্টিক টন, এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার ২শ ৫০ মেট্টিক টন। কোন প্রকার সারের সংকট নেই বলছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ও দিলপাশার ইউপির চলনবিলের দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম অংশ ও বড়বিলের দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম অংশ বিভিন্ন ইউনিয়নের ফসলি মাঠে রবি শস্য রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সারের চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কিছুটা কম থাকার সুযোগে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত ৭শ ৫০টাকা দামের ৫০ কেজির এক বস্তা এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার ১ হাজার ৩শ ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪শ টাকা বিক্রি করছে বিসিআইসি ডিলার, সাবডিলাররা। খানমরিচ ইউনিয়নের পুকুর পাড় গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম ফকির বলেন, আমি ৪০ বিঘা জমিতে ধান, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন, আলুসহ শাকসবজির আবাদ করি। এ সময় আমার সব ধরণের রাসায়নিক সার প্রয়োজন কিন্ত ডিলারদের কাছ থেকে ১ বস্তা পটাশ সার কিনতে গেলে সার নাই বলে বিদায় করে দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে ৭শ ৫০ টাকা মূল্যের এক বস্তা পটাশ সার ১ হাজার ৩শ ৫০ টাকায় কিনেছি। তার মত একই ইউনিয়নের কঠোবাড়িয়া গ্রামের ইনসাফ আলী, সাইদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম একই অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্ত বিসিআইসি ডিলার মেসার্স জগন্নাথ শীল খানমরিচ ইউপির প্রতিনিধি মো. জহুরুল ইসলাম ও মেসার্স খাদিজা এন্টার প্রাইজ দিলপাশার ইউপির প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম বাবলু আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত দামেই সার বিক্রি করছি। তারা বলেন, উপজেলার শস্যভান্ডার খ্যাত খানমরিচ ও দিলপাশার ইউনিয়ন এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামে যে পরিমাণ কৃষকের সারের চাহিদা রয়েছে সে পরিমাণ সার সরকারী ভাবে বরাদ্দ পাচ্ছি না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিসিআইসি ডিলার প্রতিনিধি জানান, আমরা (সার ব্যবসায়ী) অন্য উপায়ে বেশি দামে সার সংগ্রহ করে বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। অন্য উপায়ে সার না কিনলে কৃষকেরা সময় মত সার পাবেন না। ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এনামুল হক বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত সার মজুত রয়েছে। কোনো সারের সংকট নাই। তবে বর্তমানে এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার বিসিআইসি ডিলারদের কাছ থেকে বেশি বা দ্বিগুন টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ বিষয়ে জানা নেই বলে তিনি জানান।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, বিসিআইসি ডিলাররা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে রাসায়নিক সার বিক্রি করছে এমন অভিযোগ পাননি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভিজ্ঞ মহল জানিয়েছেন, উপজেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটি মাঠ পর্যায়ে তদারকির অভাবেই ব্যবসায়ীরা সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সরকারের বেধে দেওয়া নির্ধারিত মূল্যের দ্বিগুণ মূল্য সার বিক্রি করছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by