প্রতিনিধি ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ২:৫৩:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
যৌবনের পরিচ্ছন্নতাঃ কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহ বান্দাকে বলবেন, দাঁড়াও! আমার কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দাও। তারপর তুমি নড়াচড়া করতে পারবে। আমার প্রথম প্রশ্ন, আমি তোমাকে একটি জীবন দান করেছিলাম। এই জীবন তুমি কোথায় ব্যায় করেছো, তার হিসাব দাও। বিশেষ করে যৌবনের দিনগুলো, চাকচিক্যপূর্ণ্য দিনগুলো, আনন্দের দিনগুলো, উৎসব-উল্লাসের দিনগুলো কোথায় ব্যায় করেছো হিসাব দাও। তাহলে বোঝা গেল আল্লাহ আমাদের দেওয়া পুরো জীবনের হিসাব গ্রহণ করবেন, বিশেষভাবে আমাদের যৌবনের হিসাব চাইবেন। এ জন্য আল্লাহ আমাদের যৌবনকালকে পবিত্র রাখার জন্য বার বার উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন ব্যাভিচারের নিকটেও যেও না। (সূরা ইসরাঃ ৩২)
আল্লাহ এ কথা বলেননি যে, তোমরা ব্যাভিচার বা অবৈধ যৌনাচার করো না। অবৈধ যৌনাচার করাতো দূরের কথা, অবৈধ যৌনাচারের কাছে যেতেও নিষেধ করেছেন। এমন কোন কাজও করতে নিষেধ করেছেন যা মানুষকে অবৈধ যৌনাচারের দিকে নিয়ে যায়। অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। পবিত্র সুন্নাহ তাগিত দিয়েছে, হে যুবক! তোমার যৌবন হেফাযত করো, দাগমুক্ত রাখো। আল্লাহ কেয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে ভি.আই.পি দের জন্য নবী-রাসূলদের এবং শহিদদের জন্য যে প্যান্ডেল করবেন সেখানে এমন যুবককেও আশ্রয় দিবেন যার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হলো সে আপন যৌবন দাগমুক্ত রেখেছে। আল্লাহর ভয়ে অন্যায় করেনি, অপকর্মে লিপ্ত হয়নি। যৌবন পবিত্র রাখা প্রতিটি যুবকের এবং যুবক সম্প্রদায়কে পবিত্র রাখা প্রত্যেক জাতির কর্তব্য ও ঈমানী দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালন করা সরকারের জন্য ফরজ, অভিভাবকদের জন্য ফরজ এবং জনগনের জন্য ফরজ। আমাদের সন্তান যেন দাগমুক্ত থাকতে পারে সে জন্য আমাদেরই সচেষ্ট ও সজাগ থাকতে হবে। যে জাতির যুব সমাজ যত পবিত্র সে জাতি ততোই পবিত্র। পক্ষান্তরে, যে জাতির যুব সমাজ বিপথগামী সে জাতি বিপথগামী হতে বাধ্য।
নতুন দিবস নতুন আগ্রাসনঃ
মুসলমানদের চরিত্রহীন করার জন্য, মুসলিম যুবক সমাজকে বিপথগামী করার জন্য আন্তর্জাতিক শক্তি নানা ধরনের আয়োজন করে যাচ্ছে। বিভিন্ন চাকচিক্যের মাধ্যমে তারা যুবকদের বিপথগামী করছে, অন্যায়ের পথে তাদের অগ্রসর করছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে এক শ্রেনির লোক এই মুসলিম দেশে নতুন এক ধরনের সংস্কৃতি আমদানি করেছে। ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবসের নামে নতুন এক দিবস তারা পালন শুরু করেছে। এ দিবসের প্রচলনের মাধ্যমে যুব সমাজকে বিবাহপূর্ব অবৈধ নর-নারী সম্পর্ক স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করছে। এই দেশ মুসলিম দেশ। মুসলিম দেশসমূহের রাজধানীগুলোতে ইতিপূর্বে এই ধরনের কোন দিবস পরিচিত ছিল না। ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস কেউ পালন করতো না। সম্প্রতি কয়েক বছর থেকে দেখা যায় কিছু সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, টিভি চ্যানেল, সাপ্তাহিক পত্রিকা এই দিবসের সাথে যুবক সমাজকে পরিচিত করেছে। বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চার আগ্রহ তারা উসকে দিচ্ছে। ১৪ ই ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার ফুলের দোকানগুলোতে একটি গোলাপ ফুলও থাকে না। দ্বিগুন মূল্যে সব বিক্রি হয়ে যায়। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, এ দেশের যুবসমাজ এই দিবস কীভাবে পালন শুরু করেছে। এটা কোনো নিউইয়র্ক সিটি নয়। আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিতে ভ্যালেন্টাইনস ডে রাতে একটি গোলাপ ফুল বিশ ডলারেও বিক্রি হয়। বর্তমান মূল্য অনুযায়ী এক ডলার সমান ৮৫ টাকা। এখন এই দেশকেও একইভাবে তাদের সাথে পরিচালিত করার চেষ্টা হচ্ছে।
ভ্যালেন্টাইনস ডের পরিচয়ঃ
এই দিবসের ঐতিহাসিক ভিত্তি কোথায়? গবেষক এবং লেখকদের গবেষণার আলোকে দেখা যায়, যিশু খ্রিষ্টের জন্মের আগে চতুর্থ শতকে পৌত্তলিক বা মূর্তিপুজারীদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের প্রচলন ছিল। তারা বিভিন্ন দেবতার পূজা করতো। বিষয়ভিত্তিক দেবতা ছিল। পশু-পাখির জন্য তারা একটি দেবতাকে কল্পনা করতো। জমির উর্বরতার জন্য একটি দেবতাকে বিশ্বাস করতো। ভালোবাসার জন্য একটি দেবতাকে তারা বিশ্বাস করতো। যার নাম ছিল লুপারকালিয়া। এই দেবতার সম্মানে তারা একটি অনুষ্ঠান করতো। এই অনুষ্ঠানের একটি কর্মসূচী ছিল যুবতীদের নামে লটারি ইস্যু করা। লটারিতে যে যুবতী যে যুবকের ভাগে পড়তো আগামি বছর এ দিন আসা পর্যন্ত যুবকটি সে যুবতীকে ভোগ করার অনুমোদন পেত। পরবর্তী বছরের লটারি না দেওয়া পর্যন্ত যুবতীটি এই যুবকের সাথে থাকত। সেদিন দেবতার নামে পশু বলি দেওয়া হতো। বলি দেওয়া পশুর চামড়া তুলে যুবতীর গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হতো। তারপর ছাগল এবং কুকুরের রক্তে রন্জিত একটি চাবুক যুবকের হাতে দেওয়া হতো। যুবকটি সে চাবুক দিয়ে কাঁচা চামড়া পরিহিতা যুবতীকে আঘাত করতে থাকতো। তাদের ধারনা ছিল চাবুকের এই আঘাতের কারনে যুবতীটি সন্তান জন্ম দেওয়ার উপযুক্ত হবে। অনুষ্ঠানটি পালিত হতো ১৪ই ফেব্রুয়ারি। এরপর আবির্ভূত হলো খ্রিষ্টধর্ম। খ্রিষ্ট ধর্ম আহলে কিতাবের ধর্ম। ইন্জিলের ধর্ম। কাজেই এই জাতীয় পৌত্তলিক কুসংস্কারকে খ্রিষ্টধর্ম আসমানি ধর্ম হিসাবে সমর্থন করতে পারে না। এ জন্য তারা এই কুপ্রথা ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করলো। কিন্তু রোধ করতে পারলো না। তাই তারা এই অনুষ্ঠানকে বিশুদ্ধ করার চেষ্টা শুরু করলো। ঠিক হলো, অনুষ্ঠান ঠিক থাকবে তবে একটু বিশুদ্ধ করা হবে। আগে অনুষ্ঠানটি ছিল দেবতার নামে এখন হবে পাদরির নামে। যুবতীর নামে লটারি দেওয়া বন্ধ হলো। পাদরির নামে লটারি দেওয়া হলে যে যুবকের ভাগে যে পাদরির নাম আসবে যে যুবক সে পাদরির সোহবত বা সংস্পর্শে এক বছর কাটাবে। অনুষ্ঠানের ধরন পাল্টে গেল। আগে ছিল যুবতীকে লটারির মাধ্যমে যুবকদের মাঝে বন্টন করা এবং যুবকের ভোগ করা। এবার অনুষ্ঠান পবিত্র করার লক্ষ্যে যুবকদের পাদরির সোহবতে দেওয়া হলো। যাতে পাদরির কারনে যুবকদের চরিত্র ভালো হয়। ৪৭৬ সনে পোপ জুলিয়াস বললেন, দিবসের নাম পরিবর্তন করা দরকার। আগে ছিল একজন দেবতার নামে এটা পরিবর্তন করে একজন যাজক- যার নাম ছিল ভ্যালেন্টাইন- তার সম্মানে দিবসটি পালন করা হোক। ফলে ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে এই দিবসের নামকরন করা হলো ভ্যালেন্টাইনস ডে।
ভ্যালেন্টাইন কে ?
প্রশ্ন জাগে ভ্যালেন্টাইন কে? খ্রিষ্টানদের ইতিহাসে ৫০ জন ভ্যালেন্টাইন নামক ব্যাক্তির নাম পাওয়া যায়। তবে খ্রিষ্টানদের ইতিহাসে দুজন ভ্যালেন্টাইন অত্যন্ত বিখ্যাত। একজন ভ্যালেন্টাইন সম্পর্কে জনৈক ইসলামি চিন্তাবিদ এক আর্টিক্যাল লিখেছেন এই ভ্যালেন্টাইনকে রোমান রাজা কারাবন্দী করেছিল। অন্তরিন হওয়ার পর তিনি জেলারের মেয়ের প্রেমে পড়েন। সে মেয়েটির সাথে তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করতেন। মৃত্যুর পূর্বে যাজক তার নামে একটি চিরকুট লিখে রেখে যান। এ জন্য এই যাজক খ্রিষ্ট সমাজে ‘প্রেমিক যাজক’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। প্রেমিকদের যাজক ভ্যালেন্টাইন ১৪ই ফেব্রুয়ারী মারা যাবার পর তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয় এবং তার নামানুসারে এই দিনের নাম ভ্যালেন্টাইনস ডে রাখা হয়।
ভ্যালেন্টাইনস ডে পালনের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধানঃ-
এই দিবসের ইতিহাস জানার পর আমাদের জানার দ্বিতীয় পয়েন্ট হলো, কোন মুসলমান ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করতে পারবে কিনা? উত্তর স্পষ্ট বলতে হয়, না- না- না। কারন এই দিবসের সাথে কুসংস্কার জড়িত। দেবতার নাম জড়িত। এই দিবসের প্রচলনকারী পৌত্তলিক বা মুশরিক সমাজ। কাজেই যার সাথে এতগুলো ঈমানবিরোধী উপকরনযুক্ত এ ধরনের একটি দিবস কী করে মুসলমানরা পালন করতে পারে? মুসলমান থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করতে পারে না। ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করতে পারে না। পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে পারে না। বসন্তবরণ উৎসব পালন করতে পারে না। কারন এই দিবসগুলি পালন করতে গিয়ে যুবক যুবতীরা যেনার দিকে ধাবিত হয়। অথচ আল্লাহ তা’য়ালা যেনার কাছে ও না যাওয়ার জন্য বলেছেন। (সূরা ইসরাঃ ৩২)
ভ্যালেন্টাইনস ডে এইটা যেনা নয়। কিন্তু আমাদের যেনার স্পর্শে নিয়ে যাবে। আল্লাহ আরও বলেছেন, “হে নবী! আপনি মুমিন যুবকদের বলে দিন, তোমাদের চক্ষু নত করো, অপর যুবতীদের দিকে তাকানো থেকে বিরত হও এবং নিজেদের লজ্জাস্থান পবিত্র রাখো। হে রাসূল! আপরি যুবতীদের বলেন তারাও যেন নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে কোন যুবকের দিকে চোখ না দেয় এবং নিজেদের সম্বল রক্ষা করে।” (সূরা নূরঃ ৩১,৩২)
কুরআনের এই আয়াতের আলোকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, নর-নারীর বিবাহপূর্ব ভালোবাসা অবৈধ। এটা অন্যায় এটা পাপ। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে পাপ মুক্ত জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন। আমিন
মুফতী খালিদ সাইফুল্লাহ, 01916980308
খতীবঃ মেরাদিয়া কবরস্থান মাদরাসা মসজিদ
খিলগাঁও ঢাকা