ঢাকা

মনোহরদীতে উপজেলা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে, প্রতিবাদ করায় সুপারভাইজারের বদলি

  প্রতিনিধি ১১ জানুয়ারি ২০২২ , ৬:০৮:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি:

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেহানা আক্তার যোগদানের পর থেকেই ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরীচ্যুত এবং বদলীসহ নানা ধরণের হুমকী দেওয়া হয়। প্রতিবাদের ফল স্বরূপ মাঠ সুপারভাইজার হাবিবুর রহমানকে চট্রগ্রামে বদলী করা হয়েছে।

দূর্নীতি ও অনিয়ম উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগীরা।

অভিযোগে জানা যায়, কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থীদের নাস্তার টাকায় নয়-ছয়, ক্লাব ম্যানেজমেন্ট মিটিং (সিএমসি)’র প্রায় একলাখ টাকা আত্মসাৎ, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে অসহযোগীতা, কিশোর-কিশোরী ক্লাব বন্ধ করে দেওয়া এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন কর্তকর্তা রেহানা আক্তার।

জানা যায়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মনোহরদী উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১২ টি ইউনিয়নে একটি করে কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর প্রত্যেকটিতে কো-অর্ডিনেটর, জেন্ডার প্রমোটার, আবৃত্তি ও সংগীত শিক্ষক হিসাবে ২৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিটি ক্লাবে ৩৫ জন করে সদস্য রয়েছে। এদের সপ্তাহে দুইদিন ক্লাস নেওয়া হয়।

 

এই সব কিশোর-কিশোরী ক্লাবের নাস্তা বাবদ জনপ্রতি ৩০ টাকা অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছেন সরকার। কিন্তু তাদেরকে ৮-১০ টাকার নাস্তা সরবরাহ করছেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেহানা আক্তার। বেশির ভাগ টাকা যাচ্ছে কর্মকর্তার পকেটে। নিয়মানুযায়ী ক্লাবের শিক্ষক, প্রমোটার অথবা কো অর্ডিনেটররা নাস্তা সরবরাহ করার কথা।

কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্পের লোকজন দিয়ে খাবার সরবরাহ করা হয়। এসব বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ জানালে তাদেরকে চাকরিচ্যুত করার হুমকী দেওয়া হয়।

অনিয়মের বিষয়ে গত বছরের জুলাইয়ে মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেন নাস্তা সরবরাহকারীরা। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সকল প্রমোটার এবং ক্লাবের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে সভা করেন। সেখানে অনিয়মের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ওই কর্মকর্তাকে জনপ্রতি ২৫ টাকার নাস্তা বিতরনের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হেলিম মিয়া জনপ্রতি ২৩ টাকার নাস্তা বিতরণের জন্য ক্লাবের শিক্ষকদেরকে নির্দেশ দেন।

নির্দেশ মোতাবেক শিক্ষকরা চারদিন নাস্তা সরবরাহ করার পর টাকা না পেয়ে তারা নাস্তা বন্ধ করে দেন। কিছুদিন বিরতির পর পুনরায় আইজিএর লোকজন দিয়ে ১০-১২ টাকার নাস্তা সরবরাহ শুরু হয়। যা এখনো চলমান।
নাস্তা সরবরাহের দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, শিক্ষার্থীদের নাস্তার জন্য ৩০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমাকে ১৫ টাকা দেন। বিভিন্ন কেন্দ্রে নাস্তা পৌঁছাতে গাড়ি ভাড়া লাগে। ফলে কোনভাবেই ৮-১০ টাকার বেশি নাস্তা দেওয়া সম্ভব হয় না।

মাঠ সুপারভাইজার হাবিবুর রহমান জানান, প্রতি বছরে সিএমসির দুটি সভার জন্য সরকার ৯৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। কিন্তু ওই কর্মকর্তা কোন সভা না করে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছেন। তাছাড়া গত বছরের বিভিন্ন মাসে ৩৪ দিন নাস্তা সরবরাহ না করে চার লাখ ৬৩ হাজার টাকা পকেটে ভরেন কর্মকর্তা রেহানা আক্তার। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ জানালে আমাকে বদলি করা হয়েছে। বিষয়টি গতকাল (সোমবার) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এস এম কাসেম বলেন, আমাকে কয়েকজন মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। তাদেরকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। লিখিত পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Powered by