রাজশাহী

মান্দায় অরক্ষিত বধ্যভূমি ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল

  প্রতিনিধি ১২ অক্টোবর ২০২১ , ৭:৩৭:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

পলাশ চন্দ্র সরকার, মান্দা (নওগাঁ) : নওগাঁর মান্দায় পাকহানাদার বাহিনীর ব্রাশফায়ারে নিহত ১৬ শহীদের স্মৃতিবিজড়িত মনোহরপুর বধ্যভূমি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অরক্ষিত রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। এটি রক্ষার জন্য পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছেন ভালাইন ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামপুলিশ সদস্যরা। বধ্যভূমি ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকায় শহীদ পরিবার ও স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছেন, বধ্যভূমিতে প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করা হলেও ভূমি জটিলতায় তা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এটি বাস্তবায়ন হলেই প্রাচীর নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।

 

মনোহরপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আলতা বিবি জানান, মনোহরপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প রয়েছে রাজাকারদের এমন সংবাদে একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে গ্রামটি আক্রমণ করে হানাদার বাহিনী। হানাদার বাহিনীর সদস্যরা আগুনে পুড়িয়ে দেয় গ্রামের ১০-১২টি বসতবাড়িসহ একটি মসজিদ। এ সময় তাঁদের হাতে আটক হন মনোহরপুর, তুড়ুকগ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের ১৬ জন নিরীহ মুক্তিকামী মানুষ। পরে গ্রামের পশ্চিমধারে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয় তাঁদের।

 

গ্রামের জিল্লুর রহমান বলেন, একাত্তরের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে মনোহরপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী প্রামানিকের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা একটি ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন। এ ক্যাম্প থেকে ৬ ডিসেম্বর নিয়ামতপুর থানা আক্রমণসহ অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় রাজাকাররা ক্ষুব্ধ হন।

পরে রাজাকাররা কালিকাপুর স্কুল মাঠে স্থাপিত পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান বিষয়ে অবহিত করেন। সেই সংবাদে ১৩ ডিসেম্বর কালিকাপুর থেকে পায়ে হেঁটে সদলপুর হয়ে ওই দিন বিকেলে মনোহরপুর গ্রাম আক্রমণ করে হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। গ্রামের কেয়াম হোসেন বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বধ্যভূমির পশ্চিমধারে শহীদ মিনারসহ একটি ফলকে ১৬ শহীদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়।
উপজেলা প্রকৌশলী মোরশেদুল হাসান বলেন, ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারের পাশে উপজেলা এলজিইডির তত্ত্বাবধানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে বধ্যভূমির চারপাশে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করে এলজিইডি। কিন্তু ভূমি জটিলতায় কাজটি বন্ধ রয়েছে।

 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মনোহরপুর মৌজার আরএস ১২০ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ২৫০ দাগের ১৮ শতক জমিতে একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। ওই খতিয়ানের মালিক হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন ব্যক্তি। খতিয়ানে উল্লেখিত অন্য ৪টি দাগে দেবস্থান ও হিন্দু জনসাধারণের ব্যবহার্য উল্লেখ থাকলেও ২৫০ দাগের শ্রেণিতে গড়লায়েক পতিত ও মন্তব্য কলাম ফাঁকা রয়েছে। এতে করে ওই সম্প্রদায়ের লোকজন বধ্যভূমির প্রাচীর নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করায় জটিলতার সৃষ্টি হয়।

 

জমির দাবিদার নিরঞ্জন চন্দ্র সরকার বলেন, বধ্যভূমি চত্বরে তাঁদের খতিয়ানভ‚ক্ত ১৮ শতক সম্পত্তিতে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। আদালতে এ সংক্রান্ত একটি মামলা করা হলে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। জমির নায্য মূল্য দেওয়া হলে বধ্যভ‚মির অনুকুলে জমি হস্তান্তর করা হবে।

শহীদ পরিবারের দাবি, ২৫০ নম্বর দাগে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। এ দাগের পূর্বধারে গণকবর ও পশ্চিমধারে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে। একই দাগে স্থাপিত হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। সেখানে গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে আগামি প্রজন্ম সহজেই মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।

তাই ভূমি জটিলতা কাটিয়ে শহীদের স্মৃতি রক্ষায় বধ্যভূমিতে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জরুরি হস্তক্ষেপ্ত কামনা করেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

এ প্রসঙ্গে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, মনোহরপুর বধ্যভূমির রক্ষণাবেক্ষণ ও ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন হলেই গ্রাচীর নির্মাণসহ অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by