দেশজুড়ে

যমুনা এখন ধূ ধূ বালুচর দশ হাজার জেলে ও মাঝি-মাল্লার দুর্দিন

  প্রতিনিধি ৪ এপ্রিল ২০২০ , ৬:১৭:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

মো. মুমীদুজ্জামান জাহান, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতুনি, কৈজুরি, গালা, খুকনি ও জালালপুর এ ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ১৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত যমুনা নদীর পানি শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই শুকিয়ে ধূ ধূ বালুর চরে পরিণত হয়েছে। যেটুকতেু পানি আছে সেখানে অসংখ্য ডুবোচর জেগে ওঠায় তাও মরা খালে পরিণত হয়েছে। এ কারণে এখন আর এ নদীতে আগের মত নৌকা চলেনা। মাছও নেই। ফলে এ চার ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার জেলে ও ৫ হাজার মাঝ-মাল্লা কর্মহীন হয়ে বেকার হয়ে পড়েছে। এদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে তারা এখন চরম দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছে। এর উপর করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ঘর থেকে তারা বাইরে কাজে যেতে না পারায় তাদের মরার উপর খারার ঘাঁ শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে বানতিয়ার গ্রামের জেলে প্রেমা হলদার, গুরু হলদার, কালু শেখ, লুৎফর রহমান, উজ্জল হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস বলেন, যমুনা নদীর পানি আশংকাজনক হারে হ্রাস পাওয়ায় নদীতে আর আগের মত মাছ নেই। ফলে আমরা বেকার জীবন যাপন করছি। এর মধ্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ঘর থেকে বাইরে কাজে যেতে না পারায় ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে খুবই বিপদে পড়েছি।
এ বিষয়ে বানতিয়ার গ্রামের নৌকার মাঝি রজব আলী, আমীর হামজা, ময়নাল প্রাং বলেন, আমাদের জমিজনা নাই। যমুনার ভাঙনে শেষ হয়ে গেছে। এখন নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। এ বছর শুষ্ক মৌসুম শুরু না হতেই নদীতে পানি শুকিয়ে ধূ ধূ বালুচরে পরিণত হয়েছে। ফলে নৌকা চালানো বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষজন পায়ে হেঁটে চলাচল করছে। এর উপর করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ঘর থেকে বাইরে কাজে যেতে না। ফলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছি। অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে দিন চলছে।
এ বিষয়ে বানতিয়ার বাজারের হার্ডওয়ার দোকানদার ও ছোট চানতারা বাজারের মুদি দোকানদার সোলায়মান হোসেন বলেন, নদীতে পানি না থাকায় নৌকা চলে না। দোকানের মালপত্র মাথায় নিয়ে দুপুরের রোদে তপ্ত ধূ ধূ বালুর চর পাড়ি দিতে খুবই কষ্ট হয়। ঘোড়ার গাড়িতে মাল নিতে গেলে বস্তা প্রতি ৩/৪ গুণ বেশি ভাড়া দিতে হয়। 
সানাতুনি গ্রামের পল্লিচিকিৎসক জিয়াউল হক বলেন, যমুনায় পানি না থাকায় জরুরী প্রয়োজনে মূমুর্ষ রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া খুবই কষ্ট হয়। বিশেষ করে ডেলিভারি রোগীর হয় পথেই ডেলিভারি হয়ে যায় নয়তো মারা যায়। পানি থাকলে কম খরচে দ্রæত এ সব রোগী হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়। এ জন্য দ্রæত এ নদী ড্রেজিং প্রায়োজন। 
এ বিষয়ে সোনাতুনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মরতুজ আলী বলেন, নাব্য সংকট নিরসনে দ্রæত যমুনা নদীর এ অংশে ড্রেজিং প্রয়োজন। এখানে ড্রেজিং করলে জেলে ও মাঝিরা উপকৃত হওয়ার পাশিপাশি বর্ষা মৌসুমে বাড়িঘর ও ফসলিী জমি নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। 
সোনাতুনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে যমুনায় ড্রেজিং না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে নদী নাব্য হারায়। আর বর্ষা মৌসুমে পানি ধারণ ক্ষমতা না থাকায় বাড়িঘর ভেঙে নদীগর্ভে বিলিন হয়। ফলে আমার ইউনিয়নের মানুষ প্রতি বছর সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এ থেকে এলাকাবাসিকে রক্ষা করতে হলে বর্ষা আসার আগেই দ্রæত এ নদীর এ অংশে ড্রেজিং প্রয়োজন।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, মেগা প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীরবন্দর সচল করতে অচিরেই আরিচা থেকে চিলমারীবন্দর পর্যন্ত যমুনা নদীর ড্রেজিং কাজ শুরু হবে। এ কাজ শুরু হলে পর্যায়ক্রমে আমাদের এ অংশেও ড্রেজিং হয়ে যাবে। তখন আর এ সমস্যা থাকবে না।
সিরাজগঞ্জ পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ডেল্টা প্রকল্পের আওতায় একটি মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীরবন্দর সচল করতে অচিরেই আরিচা থেকে চিলমারীরবন্দর পর্যন্ত যমুনা নদীর ড্রেজিং কাজ শুরু হবে। এ কাজ শুরু হলে পর্যায়ক্রমে আমাদের এ অংশের শাখা নদীসহ সম্পূর্ণটাই ড্রেজিং হয়ে যাবে। তখন এ এলাকার নাব্য সংকট দূর হওয়ার পাশাপাশি আবাদি জমি ও বাড়িঘর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। ফলে তখন আর এ সমস্যা থাকবে না। 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by