প্রতিনিধি ২৪ জুলাই ২০২১ , ৩:৪২:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ
ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ
করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে ঈদের পরের লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে ঢাকায় চলাচল বাড়লেও বেরিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জেরার মুখেও পড়তে হচ্ছে।
শনিবার সকালে মিরপুর সড়কে অনেক রিকশা চলতে দেখা গেছে। পুলিশ সদস্যরা থাকলেও তাদের ‘মানবিক’ মনে হয়েছে রিকশাচালক মো. ফরহাদের।
তিনি বলেন, সকাল থেকে তার পাঁচশ টাকার মতো আয় হয়েছে। পুলিশ দেখেও কিছু বলেনি।
রিকশাচালকরা ছাড় পেলেও গাড়িগুলো থামিয়ে জেরা করতে দেখা যায় পুলিশকে। প্রয়োজনের কথা বলে অনেকে বেরিয়ে যেতে পারলেও কাউকে কাউকে ফিরিয়ে দিতেও দেখা গেছে। সকাল ১০টার দিকে গাবতলীতে ব্যাটারিচালিত এক অটোরিকশাকে আটক করে ‘ডাম্পিং’য়ে দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ।
সেখানে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী আহমেদ বলেন, “এই গাড়ি চলা নিষিদ্ধ। তাই ডাম্পিংয়ে দিয়েছি।”
গাড়ির মালিক মমিনুল হক দাবি করছেন, এক রোগীকে সাভার থেকে ঢাকায় আনতে তিনি গাড়ি বের করেছিলেন।
তিনি বলেন, “আমিনবাজারের ব্রিজের ওপারে রোগীসহ দুইজনকে নামিয়ে দিয়ে ব্রিজের উপরে গাড়ি ঘোরানোর সময় পুলিশ ধরে ফেলে।”
“আমার স্ত্রী নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা, দুটি শিশু সন্তানও রয়েছে। ৯৯ হাজার টাকা ঋণ করে গাড়ি কিনেছি, লকডাউন জেনেও বিপদে পড়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলাম,” বলেন তিনি।
আমিনবাজার সেতু পার হয়ে শতশত মানুষকে সকালে হেঁটেই ঢাকায় ঢুকতে দেখা গেছে। পথে প্রায় সবাইকে পুলিশের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
নাটোর থেকে আসা একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মচারী আতিকুল্লাহ বলেন, “নাটোর থেকে মোটর সাইকেলে করে সাভারের আমিনবাজারে নামি। এরপর হেঁটে ব্রিজ পার হই।”
রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো যথারীতি খোলা দেখা গেছে অন্যদিনের মতো। তবে ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম। প্রধান সড়কে দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অলিগলিতে দোকানে কেনাবেচা হতে দেখা যায়।
পুরান ঢাকার, আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লারমোড়, বকশীবাজার ও পলাশীর অলিগলিতে মানুষ, ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা শুক্রবারের চেয়ে বেশি চলাচল করতে দেখা গেছে।
অলিগলিতে ভ্যানগাড়িতে ফল আর সবজির পসরার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মানুষের আনাগোনা। তবে মহল্লার অনেক খাবারের হোটেল বন্ধ রয়েছে, আর মাংসের দোকানও বন্ধ।
আজিমপুর চৌরাস্তায, বকশীবাজার, চানখারপুলে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে।
মালিবাগ, রামপুরা, খিলগাঁওয়ের সড়ক রিকশা ও ভ্যান ছাড়া একেবারেই ফাঁকা। মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পিকআপভ্যান টহল দিচ্ছে দেখে ফুটপাতে মানুষজনও বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছে না।
রিকশাচালক আজাদ বলেন, “বড় কষ্টে আছি স্যার। কাস্টমার কম। এই দেখেন না মালিবাগ মোড়ে দেড় ঘণ্টা বসে আছি, কোনো খ্যাপ পাচ্ছি না।”
শান্তিনগর বাজারের রাস্তায় শাখ-সবজি বিক্রেতারা পসরা সাজিয়ে বসেছে। জামাল শেখ এক সবজি বিক্রেতা বলেন, “কাস্টমার এক্কারে কম। সকাল থেইক্কা ১০০ টাকাও বিক্রি হয় নাই।”
কাকরাইল মোড় থেকে যে সড়কটি গেছে রমনা পার্কের দিকে, সেই সড়ক একেবারে ফাঁকা ছিল সকালে। কিছু রিকশা চলছে। পল্টনের বিভিন্ন লেন ও গলিতেও একই অবস্থা। ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের কর্মকর্তা ছায়েদুল হক বলেন, “এবারের লকডাউনে কড়াকড়ি বেশি। সেজন্য দেখবেন রাস্তায় কোনো প্রাইভেট কার নেই।”
শান্তিনগরের কাছে প্রতিদিনই কিছু দিনমজুর বসে থাকে। শনিবার তাদের দেখা যায়নি। সেখানে চা দোকানি মো. জয়নাল বলেন, “লকডাউনে কাজ পাওয়া যায় না। গতকালও তারা ১০/১২ জন ছিল। আজকে আর আসে নাই।”
কাকরাইল, বিজয় নগর, ফকিরাপুল, তোপখানা রোডসহ এই এলাকায় মানুষজন বেশি চলাফেরা বা ঘুরাঘুরি করলেও শনিবার তেমন দেখা যায়নি।
ফকিরাপুলের কাছে কয়েকজনকে ফুটপাতে হাঁটা-চলা করতে দেখে পুলিশ সদস্যরা তাদের বাসায় চলে যেতে বলেন।
বাজার করে আসা মতিঝিল কলোনির বাসিন্দা শিহাব উদ্দিন তালুকদার বলেন, “মানুষজন কম। অনেক দোকান বন্ধ আছে। লকডাউন যে কার্যকর হচ্ছে, তা রাস্তার চিত্র দেখলে বোঝা যায়।”
তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে মোহাম্মদপুরে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে। মাস্কহীন মুখে সামাজিক দূরত্বকে দূরে ঠেলে জটলা করে খোশগল্প করতে দেখা গেছে অনেককে।
ওই এলাকার জরির কারিগর জুলহাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ক্যাম্পের ভেতরে গাদাগাদি করে থাকতে হয়, তা সবাই বাইরে বেরিয়ে আসে।
ইয়াসিন পাক্কি বিরিয়ানীর মালিক মো. নাদিম দাবি করেন, তাদের ক্যাম্পে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নাই।
তিনি বলেন, “সব আল্লাহর রহমত, আমাদের এখানে কোনো করোনাভাইরাস নাই। এই কারণে এখানে কেউ মারা গেছে শুনিও নাই।”