ধর্ম

শাবান মাসের ফযিলত

  প্রতিনিধি ৩ মার্চ ২০২২ , ৫:২০:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

মুফতী খালিদ সাইফুল্লাহ:

শা’বানের ফযীলতের কারনেই রাসূল (সাঃ) অন্য সব মাসের তুলনায় এ মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন। মা আয়েশা সিদ্দিকা রাযি. রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞাস করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ আপনি শা’বান মাসে এতো বেশি রোজা রাখেন কেন? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন- এ মাসে মালাকুল মাউতের নিকট সে সমস্ত লোকের তালিকা দেওয়া হয় যারা এ বছর মারা যাবে। সুতরাং আমি চাই যে আমার মৃত্যুর পরোয়ানা টা এমন সময় লেখা হোক যে সময় আমি রোজাদার।

চন্দ্র মাসের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে যে মাস শুরু হতে যাচ্ছে সেটা হলো শা’বান মাস। শা’বান আরবি শব্দ। এর অর্থ বিস্তৃত, চারিদিকে ছড়িয়ে পড়া। এ মাস রহমত বিস্তৃত হওয়ার মাস। এ মাসে আল্লাহ তা’য়ালা পৃথিবীবাসীর উপর তাঁর রহমত বিস্তার করেন। এ কারনে একে শা’বান বলা হয়। হযরত আনাস রাযি. বলেন-
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- শা’বানের নাম এ জন্য শা’বান রাখা হয়েছে যে, এতে রমাজানের জন্য বেশি বেশি পূণ্য প্রকাশ পায়, সৎকাজ প্রকাশ পায়। আর রমাজান কে এ জন্য রমাজান করে নাম রাখা হয়েছে যে, এটা গুনাহকে জ্বালিয়ে দেয়। (গুনিয়াতুত তালিবীন, পৃঃ৪৪৫)

শাবানের তাৎপর্যঃ

শেখ আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) বলেন শা’বান শব্দের মাঝে মোট ৫টি হরফ (অক্ষর) রয়েছে। শীন, আইন, বা, আলিফ, নূন। এই পাঁচটি হরফ দ্বারা পাঁচ জিনিসের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে
১/ শীন দ্বারা শারফুন । অর্থাৎ সম্মান।
২/ আইন দ্বারা উলূউন। অর্থাৎ সমৃদ্ধি।
৩/ বা দ্বারা বিররুন। অর্থাৎ নেকী।
৪/ আলিফ দ্বারা উলফাত। অর্থাৎ ভালোবাসা।
৫/ নূন দ্বারা নুরুন। অর্থাৎ আলো।
এক কথায় কোন বান্দা যদি শা’বান মাসে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগী করে তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সে সম্মান, সমৃদ্ধি, নেকী, আল্লাহর ভালোবাসা ও ঈমানের আলো অর্জন করতে পারবে। (গুনিয়াতুত তালিবীন, পৃঃ ৪৪৫)

শা’বান আমার মাসঃ

হযরত উসমান (রাযি.) বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-
শা’বান আমার মাস আর রমাজান আল্লাহর মাস।

আর একটা নিয়ম রয়েছে যে জিনিসের সম্বন্ধ প্রিয়জনের প্রতি হয় তার মূল্য বেড়ে যায়। যেমন হযরত যায়েদ বিন হারেছা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর গোলাম ছিলেন। কিন্তু যেহেতু তার গোলামীর সম্বন্ধ রাসূলের প্রতি তাই তার মর্যাদা গোটা পৃথিবীর রাজা-বাদশাহদের চেয়ে বেশি। মসজিদ পৃথিবীতে অনেক রয়েছে, তবে যে মসজিদের সম্বন্ধ নবীর দিকে ‘মসজিদে নববী’ তার মর্যাদা পৃথিবীর সমস্ত মসজিদ থেকে বেশি। এক রাকাত নামাজ পড়লে এক হাজার মতান্তরে পঞ্চাশ হাজার রাকাতের সওয়াব পাওয়া যায়।

এমনিভাবে যখন শা’বানের সম্বন্ধ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজের দিকে করেছেন, তাই যেমনিভাবে তিনি সমস্ত নবীদের মধ্যে থেকে শ্রেষ্ঠ, তেমনিভাবে এ মাস ও রমাযান ব্যাতীত সকল মাস থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ মাস। এক হাদিসে হযরত আনাস ইবনে মালিক রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-
রজবের ফযিলত সমস্ত মাসের উপর এমন, যেমন কুরআনের ফযিলত সমস্ত কালামের উপর। আর শা’বানের ফযিলত সমস্ত মাসের উপর এমন, যেমন আমার ফযিলত সমস্ত নবীদের উপর। আর রমাযানের ফযিলত সমস্ত মাসের উপর এমন, যেমন আল্লাহর ফযিলত সমস্ত মাখলুকের উপর।

শা’বান মাসে রাসূল (সাঃ) এর আমলঃ

শা’বানের ফযীলতের কারনেই রাসূল (সাঃ) অন্য সব মাসের তুলনায় এ মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন। মা আয়েশা সিদ্দিকা রাযি. রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞাস করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ আপনি শা’বান মাসে এতো বেশি রোজা রাখেন কেন? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন- এ মাসে মালাকুল মাউতের নিকট সে সমস্ত লোকের তালিকা দেওয়া হয় যারা এ বছর মারা যাবে। সুতরাং আমি চাই যে আমার মৃত্যুর পরোয়ানা টা এমন সময় লেখা হোক যে সময় আমি রোজাদার।

আর অন্য এক হাদিসে আছে-

তোমরা যেভাবে মৃত্যুবরন করবে সেভাবে হাশরে উঠবে। আর তোমাদের মৃত্যু সেভাবে হবে যেভাবে তোমরা জীবন-যাপন করবে। সুতরাং শা’বান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসে কেবল রমাযানের অপেক্ষায় থাকলে হবে না। বরং রমাযান আসার আগেই যাবতীয় গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে হবে। আর রমাযানে আমলের দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।

শা’বান মাসে সাহাবায়ে কেরামের আমলঃ

হযরত আনাস ইবনে মালিক রাযি. বলেন যে- সাহাবা কেরাম শা’বানের চাঁদ দেখলে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতে মশগুল হয়ে পড়তেন। যাদের উপর যাকাত ফরয হয়েছে তারা মালের যাকাত আদায় করে দিতেন যাতে গরীব মুসলমানদের রোযা রাখার ব্যাবস্থা হয়ে যায়। বিচারকগন কয়েদি দেরকে ডেকে হয় শাস্তির ফায়সালা করে দিতেন , না হয় মুক্তি দিয়ে দিতেন। আর রমাযানের চাঁদ দেখলেই গোসল করে পবিত্র হয়ে ইত্বিকাফ শুরু করে দিতেন। অর্থাৎ শা’বান মাস আসলেই তারা তাদের দুনিয়াবি কাজকর্ম গুটিয়ে আনতেন যাতে মাহে রমাজানে নিরবচ্ছিন্নভাবে আল্লাহর মাসকে আল্লাহর ইবাদাতে কাটাতে পারেন। এ হলো শা’বান মাসের আমল আর ফযীলত। আর এ মাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো শবে বরাত। যেটা আমাদের সামনে আসছে।

সুতরাং এখন থেকেই আমাদেরকে আমল শুরু করতে হবে। কারন শবে বরাত, রমাজান, শবে-কদর আমরা পাবো কিনা তা আমাদের জানা নেই। আগামীকালতো দূরের কথা, এক মিনিটের ভরসাই তো নেই। বিগত কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের একজন নামি দামী গায়ক ফিরোজ সাঁই শিল্পকলা একডেমীতে গান গেয়েছিল ’এক মিনিটের নাই ভরসা, সাঙ্গ হবে রং তামাশা! এক মিনিটের নাইরে ভরসা!! বেশ, গান ও শেষ তার দুনিয়ার লীলা খেলাও শেষ। সাথে সাথে এ স্টেজেই বসা অবস্থায় মারা গেছে। মানুষ নামাজ-রোজা না করলেও মিনিটের যে ভরসা নেই এ কথা সবাই বিশ্বাস করে।

সুতরাং আগামীকালের উপর কারও ই কোন নিশ্চিত ভরসা নেই। অতএব আজকের দিনকে গনিমত মনে করতে হবে। সুবর্ন সুযোগ মনে করতে হবে। ঠিক শা’বান মাসের অবস্থাও তাই। রজব মাস চলে গেছে, রমাযান ভাগ্যে জুটবে কিনা তা বলা যায় না। তাই শা’বান মাসকে খোদার ইবাদতের জন্য গনিমত মনে করা উচিত। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে এই শা’বান মাস ইবাদত বন্দেগীতে কাটানোর তৌফিক দান করুন।

খতীবঃ মেরাদিয়া কবরস্থান মাদরাসা মসজিদ, খিলগাঁও ঢাকা।

Powered by