ধর্ম

সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য

  প্রতিনিধি ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৫:৪৭:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ

Mufti Khalid Saifullah

পৃথিবীতে যত ভালোবাসা রয়েছে সকল ভালোবাসার পেছনে স্বার্থ জড়িত রয়েছে। একমাত্র নিঃস্বার্থ ভালোবাসা হলো সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ভালোবাসা। এ ভালোবাসার তাগিদেই প্রতিটি মানুষ তাঁর সন্তানের শান্তি, স্বস্তি ও সুখ্যাতির জন্য জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত প্রানন্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। এটাই হলো মানুষের ফিতরাত বা স্বভাব।
আর ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম, স্বভাব ধর্ম। তাই ইসলাম চায় মানুষের এই স্বভাব ধর্মকে স্থায়ী রুপ দিতে। তার চিন্তা-চেতনাকে এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের সীমিত পরিসরে না রেখে আরও সম্প্রসারিত করে দুনিয়ার জগত ছেড়ে আলামে বারযাখ হয়ে আখিরাতে নিয়ে যেতে। তাই ইসলামের আবেদন হলো – তুমি তোমার ও তোমার পরিবারবর্গ বিশেষত সন্তানাদিকে শুধু দুনিয়ার কষ্ট থেকে বাচাবার চিন্তা করো না। কেবল দুনিয়ার সুখ-শান্তি সমৃদ্ধির কামনা করো না। বরং কবরের আযাব থেকে কীভাবে বাঁচবে, জাহান্নামের শাস্তি থেকে কীভাবে নাজাত পাবে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করো।

আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন-
“হে মুমিন গন! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা করো যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষান হৃদয় ও কঠোর স্বভাবের ফেরেস্তাগন। তারা আল্লাহ তা’য়ালা যা আদেশ করেন তা অমান্য করে না এবং যা আদেশ করা হয় তাই করে।”
সূরা তাহরীমঃ০৬

এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় মানুষ দুনিয়ার ব্যাপারে যেমন কেবল নিজে বাঁচার চিন্তা করে শেষ করে না। বরং সন্তানাদিকেও বাঁচাবার চেষ্টা করে। দুনিয়ার কোন দুঃখ যেন নিজেকে, নিজের সন্তানাদিকে কোন অবস্থাতে স্পর্শ না করে সে জন্য যেমন প্রানান্তর চেষ্টা করে, ঠিক তেমনিভাবে আখিরাতের ব্যাপারে ঐ একই চেষ্টা করতে হবে। যেন কোন অবস্থাতেই তাদেরকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে না পারে। অনেক লোক দেখা যায় মাশাআল্লাহ ভাল দীনদার, নামাজি, মসজিদে প্রথম কাতারে নামাজ পড়ে। তাকবীরে উলা ধরার চেষ্টা করে , তাহাজ্জুদ, নফল, আওয়াবীন, চাশত, ইশরাক সবই পড়ে। কিন্তু দেখা গেল ছেলে নামাজ পড়ে না মেয়ে পর্দা করে না স্ত্রী শরিয়ত মোতাবেক চলে না। এতে তার কোন চিন্তা-অস্থিরতা নেই। কোন মাথা ব্যাথা নেই; বরং তারা জবাব দেয়, পরিবেশ খারাপ, যামানা খারাপ, ছেলে মেয়ে কথা শুনে না। এ ধরনের বিভিন্ন রকমের কথাই আমরা বলি। এক দু’বার আদেশ করেই মনে করি আমার দায়িত্ব শেষ। অথচ নবীদের দিকে তাকালে দেখা যায় হযরত নূহ (আ.) তার ছেলে কেলানকে নয়শ বছর একাধারে দাওয়াত দিয়েছিলেন। তাতেও তিনি ক্ষান্ত হননি; বরং যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা আসলো- ”হে নূহ! নিশ্চয়ই সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয়ই সে দূরাচার। সুতরাং আমার কাছে এমন দরখাস্ত করবে না , যা তুমি জানো না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে , তুমি অজ্ঞদের দলভুক্ত হবে না।” তখন হযরত নূহ (আ.) দাওয়াত বন্ধ করে দিলেন এবং এর পরেই সে ধংস্ব হয়ে গেল। আর আমরা এক দু’বার আদেশ করেই মনে করি আমার দায়িত্ব শেষ হয়ে গিয়েছে। আসলে বিষয়টা এতো সহজ নয়। এতো সহজে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া যাবে না।

আমরা কথায় বলি-জামানা খারাপ, পরিবেশ খারাপ, সমাজ খারাপ আসলে কোনটাই খারাপ নয়; বরং আমাদের স্বভাবই খারাপ। তাই একটি সুস্থ সমাজ জাতি কে উপহার দিতে হলে একটা সুস্থ পরিবার গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। আর সুস্থ ও সভ্য পরিবার গড়ে তুলতে হলে সন্তান লালন-পালনে ইসলাম আমাদের যে হিদায়াত, যে দিকনির্দেশনা দিয়েছে সে অনুযায়ী ধারাবাহিক তা’লীম-তারবিয়্যাত ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে আমাদের সন্তানদের কে আদর্শ সন্তান রুপে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে এ সন্তান দ্বারা আমাদের মুখ উজ্জ্বল হবে। আল্লাহ’র দরবারেও আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে না।

সন্তান লালন-পালনে আমাদের করণীয়
আপনার সন্তানকে যদি আপনি দ্বীনদার আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে তুরতে চান যদি উন্নত চারিত্রিক গুণাবলির অধিকারি করতে চান, তাহলে সন্তানের জন্মের পূর্ব থেকেই দায়িত্ব পালন করতে হবে ধারাবাহিকভাবে।

সন্তান জন্ম নেওয়ার আগে দুইটা করণীয়ঃ

১ ) সন্তানের জন্য ভালো একজন মা নির্বাচন করা। সন্তানের মন-মানসিকতা গঠনের ক্ষেত্রে মাতা-পিতার মন-মানসিকতার ও প্রভাব থাকে। তাই ভালো সন্তান চাইলে দ্বীন দার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। শরীয়তে এর গুরুত্ব অনেক। বুখারি শরিফের ৫০৯০ নাম্বার হাদিসে বলা হয়েছে যে , নারিকে বিবাহ করবে চারটি জিনিস দেখে; (১)সম্পদ দেখে (২)বংশ দেখে (৩) সৌন্দর্য দেখে (৪) দ্বীনদারিত্ব দেখে। তবে প্রথম তিনটা যদি নাও থাকে , দ্বীনদারি যদি থাকে তাহলে দ্বীনদারিকে প্রাধান্ন দিবে। যদি তুমি দ্বীনদারিকে প্রাধান্ন না দাও তাহলে তুমি ধংস্ব হও।
২ ) স্বামী স্ত্রী উভয় এ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার পূর্বে দুআ পড়া-
বুখারি শরিফের ১৪১ নাম্বার হাদিস, তোমাদের কেউ যখন স্ত্রীর কাছে যায়, যাবার পর স্বামী স্ত্রী যখন এমন সম্পর্কে আবদ্ধ হয় যে সম্পর্কের মাধ্যমে সন্তান আসে তখন স্বামী স্ত্রী উভয় দোয়া পড়বে-
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
অর্থঃ আল্লাহ তা’য়ালার নামের সহিত আরম্ভ করিতেছি। হে আল্লাহ আমাদিগকে শয়তান হইতে দূরে সরাইয়া রাখুন। এবং আমাদিগকে অদৃষ্টে যাহা প্রদান করিয়াছেন তাহা হইতে শয়তানকে দূরে হটাইয়া দিন।
এই দু’য়া পড়ার পর যে পন্থা অবলম্বনে সন্তান দুনিয়াতে আসে, ঐ পন্থা অবলম্বনের পর যদি সন্তান দুনিয়াতে আসে নবীজী বলেন- তাকে শয়তান ক্ষতি করতে পারবে না।

সন্তান জন্মের পর ১২ টি করনীয়
১. শিশুর কানে আযান ও ইকামত দেওয়া-
সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর সাথে সাথে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে তার ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দিতে হবে। আবু দাউদ শরীফের ৫১০৫ নাম্বার হাদিস; নবীর সাহাবি বলেন নবীকে আমি দেখলাম ফাতেমা (রা.) যখন হাসান (রা.) কে প্রসব করলেন ,নামাজের জন্য মুয়াজ্জিন যেভাবে আযান দেয় নবীজীও অবিকল ঐ ভাবে হাসান (রা.) এর কানে আযান দিলেন। ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দিতে হয়। এই আযান ও ইকামতের মাধ্যমে মূলত তার অন্তরে তাওহীদের বীজ বপন করা হয়। আর এ কথা জেনে রাখা দরকার যে, এই আযান ইকামত দেওয়ার জন্য কোন পুরুষের দরকার হয় না। যদি সন্তানের মা সুস্থ থাকে তাহলে তিনি দিবেন, না হলে যে সমস্ত মহিলারা ধাত্রী হিসেবে আশেপাশে থাকেন তারা দেবেন এটা তাদের দায়িত্ব। জন্মের শুরুতে যখন এইভাবে তাওহীদের বীজ বপন করে দেওয়া হয় তখন এর প্রভাব তার উপর পড়ে এবং আল্লাহর মেহের বাণীতে তার ঈমান নসিব হয়।

২. তাহনীক করা-
তাহনীক বলা হয় কোন আল্লাহ ওয়ালার মুখের মধ্যে খেজুর দিয়ে উনি খেজুর চাবাবে, চাবানোর পর মুখে যে থুথু হবে সেটা আগে বাচ্চার মুখে দিবে তারপর খেজুরের সামান্য অংশ বাচ্চার মুখের তালুতে লাগিয়ে দিবে। সে চুষে চুষে খাবে। বুখারি শরিফের ৩৯০৯ নাম্বার হাদিসে বর্নিত আছে- হযরত আবু বকর (রা.) এর কন্যা আসমা (রা.) এর সন্তান জন্মগ্রহন করলো; সাহাবায়ে কেরাম বনর্না করেন , আল্লাহর রাসূলের কাছে যাওয়ার পর তিনি খেজুর চাবাইয়া আগে থুথু দিলেন তারপর সামান্য খেজুর তালুতে লাগিয়ে দিলেন।

৩. মাথা মুন্ডন করা-
সপ্তম দিনে তার মাথা মুন্ডন করবে এবং চুলের ওজন অনুযায়ী রুপার মূল্য সদকা করে দিবে। এটা মুস্তাহাব আমল।

৪. শিশুর সুন্দর নাম রাখা-
নবজাতক শিশুর জন্য একটি সুন্দর শ্রুতিমধুর ও অর্থবহ নাম রাখা পিতা- মাতার অবশ্য কর্তব্য। নাম রাখার ক্ষেত্রে ছেলেদের নামের বেলায় আল্লাহর গুনবাচক নাম সংযুক্ত করে রাখবে। যেমনঃ আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান, এরপর নবী, সাহাবী, তাবিঈ, ওলী-বুযুর্গদের প্রাধান্য দেবে। এগুলো থেকে নাম যদি না রাথে তবে এমন নাম রাখবে যার অর্থ সুন্দর ও ভালো হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে নবীদের স্ত্রী, মহিলা সাহাবিদের নাম খুজবে। পছন্দমতো পাওয়া না গেলে এমন নাম রাখবে যার অর্থ ভালো হয়।

৫. আকীক্বাহ করা-
আযান ইকামত নাম রাখা ও মাথা মুন্ডানোর পর আকীক্বাহ করতে হবে। আকীক্বাহ সুন্নাত। সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিনে আকীক্বাহ করা মুস্তাহাব। ছেলে হলে দুটি ভেড়া বা বকরী অথবা গরুতে দুই ভাগ। মেয়ে হলে একটি খাসি বা গরুতে একভাগ। খাসি দ্বারা ছাগল উদ্দেশ্য। খাসি বকরি যাই হোক তাতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে আর্থিক সংকট থাকলে ছেলের ক্ষেত্রে একটা দিলেও আদায় হয়ে যাবে। সপ্তমদিনে না পারলে চৌদ্দ দিনের মাথায় আকীক্বাহ করবে তাও না পারলে ২১ দিনে করবে। তাও যদি না পারে তাহলে যে কোন দিন করলে আদায় হয়ে যাবে। তবে মুস্তাহাব আকীক্বার দাবি আদায় হবে না। আকীক্বাহ সম্পর্কে হাদিসে আছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন-
”শিশু তার আকীক্বাহ’র বিনিময়ে (আল্লাহর নিকট) বন্দক স্বরুপ থাকে। কাজেই সপ্তম দিনে তার পক্ষ হতে আকীক্বাহ করবে, তার মাথা মুন্ডন ও নাম রাখবে।”
(তিরমিযি ১৫২২)

৬. হারাম খাদ্য থেকে দুরে রাখা-
সন্তানের লালন-পালনে ছয় নাম্বার জরুরী বিষয় হলো বাচ্চাকে হারাম খাবার হতে দূরে রাখা। বুখারি শরিফের ১৪৯১ নাম্বার হাদিসে বর্ণিত আছে, হাসান ইবনে আলী রাসূলের (দৌহিত্র) একবার সদকার খেজুর থেকে একটি খেজুর নিয়ে মুখে দিলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বললেন; থু! থু! ফেলে দাও। তুমি জানোনা আমরা সদকা খাইনা!

৭. দ্বীন শেখানো-
বাচ্চা যখন একটু বুঝতে শুরু করবে, একটু একটু বলতে শুরু করবে তখন তাকে ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে আলিফ-বা শেখাবে। পাশাপাশি ক-খ ও শেখাবে। এমন যেন না হয় বাংলা-ইংরেজী তো শুরু করে দিলো, কিন্তু আরবির দিকে খেয়াল নেই। এখানে একটা কথা স্বরণ রাখতে হবে তা হচ্ছে আরবি উচ্চারন যদি ছোটবেলা থেকে না শিখে তাহলে বয়স হয়ে গেলে সে যত চেষ্টাই করুক সহীহ উচ্চারণ তার জন্য কঠিন হবে।

৮. মিথ্যা পরিহার করা-
শিশুদের সাথে কখনো মিথ্যা বলা যাবে না। হাসি-কৌতুক করে রসিকতা করেও কখনো মিথ্যা বলা যাবে না। এমনকি মিথ্যা কথা বলে বাচ্চাদের কান্না-কাটিও থামানো যাবে না। একদিন এক মহিলা সাহাবি একটা বাচ্চাকে ডাক দিলেন ’এদিকে আসো তোমাকে কিছু একটা দিবো’ রাসূল (সাঃ) মহিলাকে বললেন তুমি কি আসলেই তাকে কিছু দেওয়ার ইচ্ছা করেছিল, না তাকে কাছে আনার জন্য লোভ দেখাচ্ছিলে? ঐ মহিলা বললো ‘জি হ্যা ইয়া রাসূলুল্লাহ , সে আসলে আমি তাকে একটি খেজুর দিতাম। রাসূল (সাঃ) বললেন যদি এমন না হতো তাহলে তোমার আমলনামায় একটা মিথ্যা বলার কবীরা গুনাহ লেখা হতো। আবু দাউদ ২য় খন্ড পৃঃ১৪১
সুতরাং বাচ্চাদের সাথে মিথ্যা বলা ছেড়ে দিতে হবে।

৯. খাওয়ার আদব শেখানো-
বাচ্চা যখন থেকে খাওয়া-দাওয়া শুরু করবে, তখন তাকে হাতে ধরে ধরে খাওয়াবে। খাওয়ার আদব শেখাবে- ডান হাতে খাবে, বাম হাতে খাবে না। কেন না – শয়তান বাম হাতে খায়। বিসমিল্লাহ বলে খাবে, আলহামদুলিল্লাহ বলে শেষ করবে।

১০. খাৎনা বা মুসলমানি করা-
বাচ্চার বয়স যখন ৬/৭ বছর হবে তখন তার খাৎনা-মুসলমানি করাতে হবে। খাৎনা সুন্নতে ইবরাহীম। সর্বপ্রথম খাৎনা হযরত ইবরাহীম (আ.) করেছেন। এই সুন্নতে ইবরাহীম কে আল্লাহ তা’য়ালা এ উম্মতের জন্য পালনীয় করেছেন।

১১. নামাজের তাগিদ করা-
সাতবছর হতেই সন্তানদেরকে ওযু-গোসল, তায়াম্মুম ও নামাজের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নামায যদিও পূর্নাঙ্গ ফরজ পনের বছরে হয়, কিন্তু আগেই এর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে বাচ্চারা সময় মতো নামায পড়বে না এবং নামাযের প্রতি আগ্রহী ও হবে না। বাচ্চাদের নামাযের হুকুম সম্পর্কে হাদিসে বর্নিত রয়েছে-
“আমর ইবনে শুআইব তার পিতা ও দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন; তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে নামাযের হুকুম দাও যখন তাদের বয়স সাত বছর হয়। দশ বছর হলে (নামায না পড়লে) বেত্রাঘাত করো এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।” (আবু দাউদ ৪৯৪১)

১২. মন্দ পরিবেশ থেকে দূরে রাখা-
শৈশবকাল থেকেই বাচ্চাদেরকে ভাল পরিবেশে রাখতে হবে। মন্দ পরিবেশ
থেকে দূরে রাখতে হবে। অসৎ বন্ধু-বান্ধবদের সাহচর্য থেকে বিরত রাখতে হবে। প্রবাদ রয়েছে- সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। এছাড়া ঘরের মধ্যে আমল জারী রাখতে হবে। এভাবে বাদ মাগরিব কিছু তিলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। চব্বিশ ঘন্টার যে কোন এক সময় অন্তত একবার কিতাবের তা’লীম করতে হবে। এ ব্যাপারে হযরত শায়খ যাকারিয়া (রহ.) রচিত ফাযায়েলে আমল বা ফাযায়েলে সাদাকাত, মুন্তাখাব হাদিস বা হায়াতুস সাহাবা থেকে কিছু কিছু পড়ে ঘড়ের লোকদেরকে শুনাবে এবং বাচ্চাদেরকে কাছে রাখবে।

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে যদি আমরা আমাদের সন্তানদেরকে গড়ে তুলতে পারি , তাহলে তারা আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে উঠবে এবং আমাদের নাজাতের ওসীলা হবে। সন্তানও জাহান্নাম থেকে বাচবে আমরাও পরকালে নাজাত পাবো। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন!

মুফতি খালিদ সাইফুল্লাহ
01916-980308
-খতিবঃ মেরাদিয়া কবরস্থান মাদরাসা মসজিদ, খিলগাঁও ঢাকা।

Powered by