আন্তর্জাতিক

হামাস সন্ত্রাসী সংগঠন: অস্ট্রেলিয়া

  প্রতিনিধি ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৭:০৫:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকভূক্ত করেছে অস্ট্রেলিয়া। বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যারেন অ্যান্ড্রুস।

অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় অনুষ্ঠিত সেই সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হামাসের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সহিংস উগ্রপন্থী গোষ্ঠীসমূহের ব্যাপক সাদৃশ্য রয়েছে যা গভীরভাবে বিরক্তিকর ও উদ্বেগজনক। অস্ট্রেলিয়ায় তাদের ঘৃণাত্মক মতাদর্শের প্রচার কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়। এজন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

এর আগে ২০০৩ সালে হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেডকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভূক্ত করেছিল অস্ট্রেলিয়ার সরকার, এবার পুরো দলকেই সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করা হলো।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যারেন অ্যান্ড্রুজ জানান, আগামী এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে; অর্থাৎ, আগামী এপ্রিল থেকে অস্ট্রেলিয়ার কোনো নাগরিক যদি হামাসের পক্ষে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো প্রচারণা চালান বা দলটিকে আর্থিক বা অন্য কোনো সহায়তা দিচ্ছেন— এমন প্রমাণ পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে ওই নাগরিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে দেশটির সরকার।

এ প্রসঙ্গে ক্যারেন অ্যান্ড্রুজ বলেন, ‘আমাদের আইন যে কেবল সন্ত্রাস বা সন্ত্রাসীদের দিকেই মনোযোগ দেয়, ব্যাপারটি এমন নয়; সন্ত্রাসীদের যারা মদত দেয়, তারাও অস্ট্রেলিয়ার আইনে সমান অপরাধী।’

‘সরকারের ঘোষিত কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনকে অর্থায়ন ও কোনো প্রকার সহায়তা প্রদানের প্রমাণ যদি কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ ২৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।’

এদিকে, অস্ট্রেলীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে হামাস। দলটির মুখপাত্র হাজেম কাসেম এই পদক্ষেপকে ইসরায়েলের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার অন্ধ সমর্থনের ‘সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ’ উল্লেখ করেছেন তিনি। পাশাপাশি, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব বন্ধে বর্তমানে যেসব আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে— অস্ট্রেলিয়ার এই পদক্ষেপ সেসবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

‘বরং তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করা উচিত ছিল অস্ট্রেলিয়ার, যারা আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনে তাদের সীমানা বাড়াচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে,’— আলজাজিরাকে বলেন কাসেম।

অস্ট্রেলিয়ার সরকারের এই পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট হয়েছে ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও দাবি আদায় বিষয়ক অস্ট্রেলীয় সংস্থা অস্ট্রেলিয়া প্যালেস্টাইন অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্কও। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট বিশব জর্জ ব্রাউনিং বলেছেন নতুন এই পদক্ষেপে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের প্রতি ন্যায়বিচার করা হয়নি।

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার যে সংকট— তার কোনো শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে এবং এ কারণেই ইসরায়েলের জন্য এক আইন ও ফিলিস্তিনের জন্য পৃথক আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে।’

ইসরায়েল অবশ্য এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার সেখানকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ এক টুইটবার্তায় অস্ট্রেলিয়ার সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে চলমান লড়াইয়ে আর একটি নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হলো।’

আরবি ‘হারাকাত আল-মুকাওয়ামা আল ইসলামিয়া’, যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন’— সেটিরই সংক্ষিপ্তরূপ হামাস। গত শতকের আশির দশকে গাজা ভূখণ্ডে এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফিলিস্তিনে দু’টি রাজনৈতিক দল সক্রিয়— ফাতাহ ও হামাস। দেশটির পশ্চিম তীর নিয়ন্ত্রণ করে ফাতাহ, আর গাজা ভূখণ্ড আছে হামাসের দখলে।

শুরু থেকেই হামাস ও ফাতাহ পরস্পরের প্রতি বৈরী ভাবাপন্ন ছিল। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন মোটামুটি ভারসাম্য বজায় থাকলেও ২০০৪ সালে আরাফাতের মৃত্যুর পর উভয় দলের সম্পর্কের অবনতি ফের শুরু হয় এবং তা চরম রূপ নেয় ২০০৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর। ওই নির্বাচনে গাজা ভূখণ্ডে হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পায়; কিন্তু ওই সময় গাজায় ক্ষমতাসীন ফাতাহ সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় ২০০৭ সালে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীকে পরাজিত করে ভূখণ্ডের দখল নেয় হামাস। সেই থেকে গাজা হামাসের নিয়ন্ত্রণে আছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by