আন্তর্জাতিক

৩ মাস আগেই মহামারি সম্পর্কে জানানো হয়েছিল, উপেক্ষা করেন ট্রাম্প!

  প্রতিনিধি ১৯ জুলাই ২০২০ , ১২:০০:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

মহামারি নভেল করোনাভাইরাস যে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বকে বড়সড় ধাক্কা দিতে চলেছে, তা কি আগাম জানতেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প? মার্কিন সরকারের এক সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টার দেওয়া প্রতিবেদনে এমন কথাই জোর দিয়ে বলা হয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আসন্ন মহামারি সম্পর্কে আভাস দেওয়া হয়েছিল। এমনটিই দাবি করা হয়েছে মার্কিন অর্থনীতিবিদ টোডাস ফিলিপসনের এক প্রতিবেদনে। টোডাস ফিলিপসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় এক অর্থনীতিবিদ, যিনি হোয়াইট হাউসের সঙ্গে কাজও করেছেন। সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।

টোডাস ফিলিপসনের দাবি, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে গোটা দুনিয়া যখন নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিন্দুবিসর্গ আঁচ করতে পারেনি, তখনই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সতর্ক করা হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনেরই শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের একটি দল মার্কিন প্রেসিডেন্টকে মহামারি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছিল। টোডাস ফিলিপসন জানান, মহামারির আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে ৪১ পাতার একটি প্রতিবেদনও হোয়াইট হাউসে জমা দিয়েছিলেন মার্কিন শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা। তাতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ট্রাম্প প্রশাসন অর্থনীতিবিদদের প্রতিবেদনটিকে অবজ্ঞা করেছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও গুরুত্ব দিতে চাননি। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাত্‍‌কারে এমন চাঞ্চল্যকর দাবি করেন মার্কিন অর্থনীতিবিদ টোডাস ফিলিপসন।

টোডাস ফিলিপসন ট্রাম্প প্রশাসনের কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজারসের (সিইএ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হয়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর দাবি, ফ্লুর মতো সংক্রমণ যে মহামারির আকার নেবে, সে বিপদ সম্পর্কে হোয়াইট হাউসকে তাঁর দল অনেক আগেই সতর্ক করেছিল। কোভিড-১৯ আঘাত হানার তিন মাস আগেই তাঁরা সতর্ক করেছিলেন।

মার্কিন এ অর্থনীতিবিদ সাক্ষাত্‍‌কারে বলেন, মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে, ৪১ পাতার ওই প্রতিবেদনে সে আশঙ্কাও ব্যক্ত করা হয়েছিল। তাঁরা এ-ও জানিয়েছিলেন, এ মহামারির ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৭৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।

গত জুনে টোডাস ফিলিপসন তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে শিক্ষকতার পেশায় ফিরে গেছেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন তিনি। পদত্যাগের পর তিনি নিজেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। এখন সুস্থ আছেন।

‘ভ্যাকসিন আবিষ্কারের মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারির প্রকোপ কমানোর প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনটির টোডাস ফিলিপসন ছিলেন সহলেখক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান অর্থনীতিবিদের এ দাবি কিন্তু বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে যথেষ্ট তাৎ‌পর্যপূর্ণ।

টোডাস ফিলিপসন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে যখন প্রতিবেদনটি হোয়াইট হাউসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাতে হস্তান্তর করেন, তখন চীনের উহানে সবে এক-দুজনের করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এর তিন মাস পর, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি চীন নিজে এ সংক্রমণের কথা জানায়। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ডিসেম্বরের শেষে করোনা সংক্রমণের কথা ঘোষণা করে।

শীর্ষ মার্কিন অর্থনীতিবিদ টোডাস ফিলিপসন জোর দিয়ে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট একা নন, ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারাও সিইএর এ প্রতিবেদন সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। একে অবজ্ঞার পরিণতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কতটা ভয়াবহ হয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুতে বাকি বিশ্বকে পেছনে ফেলে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যমতে, আজ রোববার সকাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার ২৭১। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৪২ হাজার ৮৭৭ জনের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর সংখ্যা ১৯ লাখ ১৫ হাজার ১৭৫ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছে ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ২১৯ জন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by