চট্টগ্রাম

অর্ধযুগ ধরে অকেজো দোহাজারী হাসপাতালের ডেন্টাল মেশিন চিকিৎসা পাচ্ছেন না রোগীরা

  প্রতিনিধি ১২ মার্চ ২০২৫ , ৫:১৭:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

অর্ধযুগ ধরে অকেজো দোহাজারী হাসপাতালের ডেন্টাল মেশিন চিকিৎসা পাচ্ছেন না রোগীরা

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ডেন্টাল চেয়ারটি বিগত ছয় বছরেরও অধিক সময় ধরে অকেজো হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। চেয়ারটি অকেজো থাকায় দন্ত চিকিৎসক থাকার পরেও দাঁতের পরিপূর্ণ চিকিৎসা পাচ্ছেন না বহিঃবিভাগে আগত রোগীরা।

দোহাজারী পৌরসভাসহ চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক) উপজেলার আট ইউনিয়নের প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য একমাত্র ভরসাস্থল দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তুলনায় দ্বিগুন রোগী সেবা নেন বলে জানা গেছে। এখানে দোহাজারী পৌরসভার জনসাধারণের পাশাপাশি চিকিৎসা নিতে আসেন পার্শ্ববর্তী সাতবাড়িয়া, হাশিমপুর, বৈলতলী, ধোপাছড়ি এবং সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া, কালিয়াইশ, পুরানগড় ও ধর্মপুর ইউনিয়নের লোকজন।

দাঁতের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে দরিদ্র রোগীরা সরকারি এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু ডেন্টাল চেয়ারটি নষ্ট থাকায় তাদের এখন বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেবা নিতে আসা রোগীদের। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও কোন সুরাহা মেলেনি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী হাসপাতালে ডেন্টাল চেয়ারটি স্থাপণের পর দীর্ঘদিন দন্ত চিকিৎসক না থাকায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে চেয়ারটি। ফলে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চেয়ারটির নিউমেটিক সার্কিট, ইলেক্ট্রনিক সার্কিট, সলোনায়ভ ভাল্ব, সাকশন মেশিন ও সকল পাইপ সম্পূর্ণ অচল হয়ে যায়। এছাড়া কমপ্রেসার সেটআপের সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে হাসপাতালটির সহকারী ডেন্টাল সার্জন ডাঃ মোঃ ইব্রাহিম হোসেনের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমি এই হাসপাতালে যোগদান করেছি গত বছর ৩ মে। শুনেছি বেশ কয়েক বছর ধরে ডেন্টাল চেয়ারটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। দাঁতের চিকিৎসা একটি সার্জারী নির্ভর চিকিৎসা হওয়াতে পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দিতে গেলে এখানে একজন ডেন্টাল সার্জন এর সাথে একজন এসিস্ট্যান্ট প্রয়োজন। যন্ত্রপাতি, ম্যাটেরিয়ালস এর সাথে জীবানুমুক্ত করার সব কিছু এবং সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকতে হবে। অন্যথায় অপারেটিভ (যেগুলোতে মেশিন চালাতে হয়) ট্রিটমেন্টগুলো দেওয়া সম্ভব হয় না। শুধুমাত্র ওষুধ লিখে যা যা করা যায় (ব্যাথার ওষুধ, ওরাল হাইজিন ইন্সট্রাকশন, এন্টিবায়োটিক এর মাধ্যমে চিকিৎসা) তাই করা সম্ভব হয়।” দোহাজারী হাসপাতালে চিকিৎসক স্বল্পতার কারনে বিপুল পরিমাণ দাঁতের রোগী ছাড়াও বহিঃবিভাগের ননকপ্লিকেটেড সাধারণ রোগীদেরও তিনি চিকিৎসা প্রদান করেন বলে জানান।

দোহাজারী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ আহমেদ তানজিমুল ইসলাম জানান, “দন্ত চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার ফলে ডেন্টাল চেয়ারটি অকেজো হয়ে গেছে। গত বছর ৩ মে একজন সহকারী ডেন্টাল সার্জন যোগদান করলেও চেয়ারটি নষ্ট থাকায় দাঁতের পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অকেজো চেয়ারটি মেরামত করার জন্য গত বছর ৮ আগস্ট তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। তিনি এটি মেরামত অথবা নতুন ডেন্টাল মেশিন বরাদ্দ দেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেলিন। দীর্ঘ এক বছর পেরিয়ে গেলেও বিষয়টি অগ্রগতি না হওয়ায় চলতি বছর ১১ ফেব্রুয়ারি পুনরায় আবেদন করা হয়েছে।”

আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রশ্মি চাকমা বলেন, “দোহাজারী হাসপাতালের অকেজো ডেন্টাল চেয়ারটির স্থলে একটি নতুন চেয়ার প্রদানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। তাঁরা দ্রুততম সময়ে আমাদেরকে ডেন্টাল চেয়ার সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন। চাইলেও আমরা নিজেরা এটি ক্রয় করতে পারছি না।”

আরও খবর

Sponsered content