প্রতিনিধি ১৮ আগস্ট ২০২৪ , ৪:৩৭:১১ প্রিন্ট সংস্করণ
অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘আমরা আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাবো। কিন্তু এমনভাবে যাবো, যেন কোনও শিক্ষার্থীর পড়ালেখায় অস্বস্তি না হয়। এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কীভাবে আমরা আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাবো সেটা পর্যালোচনা হচ্ছে।’
রবিবার (১৮ আগস্ট) সচিবালযয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তৈরি করা এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছিল ২০২১ সালে। এত দিন ধরে মাঠ পর্যায়ে সব জায়গায় এগুলো নিয়ে অনেক গবেষণা-তথ্য তৈরি হয়েছে, সেগুলো আমার কাছে আছে। শিক্ষাক্রম তো উন্নত করতে হবে, সময় বদলাচ্ছে। কিন্তু যেটা তৈরি করা হয়েছে, আমাদের যে শিক্ষক আছে তা দিয়ে সেটা বাস্তবায়ন খুবই কঠিন বর্তমান পর্যায়ে। এটা আমাদের দেশের জন্য যে সর্বক্ষেত্রে উপযোগী সেটাও মনে করছি না। কাজেই এই শিক্ষা কার্যক্রমকে কার্যকর করা সম্ভব বলে আমি মনে করছি না। বিশেষ করে মূল্যায়ন পর্যায়ে। কিন্তু যা-ই আমরা করি না কেন, সাময়িক সময়ের জন্য হয়তো আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করবো। কিন্তু কীভাবে করবো, যারা ইতোমধ্যে ঢুকে গেছে তাদের অস্বস্তিতে ফেলবো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাবো ধাপে ধাপে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যাতে অস্বস্তিবোধ না হয়, ডিসকন্টিনিউয়িটি না হয়। আমরা কাজটা শুরু করবো। হয়তো শেষ করতে পারবো না। যে শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষাক্রমে ঢুকে পড়েছে তারা যেন কোনও পরিবর্তনের মুখে না পড়ে, আমরা সেই চেষ্টা নিশ্চিত করবো।’
নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বলছি না বাতিল হবে। আমরা আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাবো ধাপে ধাপে। এটা যেহেতু বাস্তবায়নযোগ্য না। যারা এখন পড়ছে, ভেতরে ঢুকে গেছে, সাত মাস ধরে পড়ছে, তাদের অস্বস্তিতে ফেলবো না। আমি বলছি না এটা বাতিল করে দেবো। যারা যে ক্লাসে আছে তাদের কোনও অস্বস্তি হবে না।’
বর্তমান শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য না উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমান শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য না, বিশেষ করে মূল্যায়ন পদ্ধতির দিক থেকে। সেটা কীভাবে সংশোধন করা যাবে, আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে তারপরে ট্রানজিশনটা কীভাবে পার করবো সেটা জটিল বিষয়। নতুন করে শিক্ষা পদ্ধতি ঢেলে সাজাতে সময় লাগবে।’
২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি সামনে রেখে তথ্য-প্রযুক্তিতে গুরুত্ব দিয়ে সৃজনশীল শিক্ষার প্রসারে ২০১২ সালে শিক্ষাক্রম তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৩ সাল থেকে ওই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়। এরপর পরীক্ষা ও মুখস্ত নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে এবং কারিগরি দক্ষতা অর্জনে গুরুত্ব দিয়ে ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০১৫ সালে নতুন কারিকুলাম দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। এছাড়া ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হওয়ার কথা ছিল নতুন শিক্ষাক্রম।
২০১৩ সালে দেশের সব প্রাথমিক স্কুলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু করা হয় নতুন শিক্ষাক্রম। এরপর চলতি বছর ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম এবং নবম শ্রেণি যুক্ত করা হয়।
নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনও পরীক্ষা নেই। এছাড়া এসএসসির আগে পাবলিক পরীক্ষাও রাখা হয়নি। নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাগভিত্তিক বিভাজন (বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক) তুলে দেওয়া হয়। পরীবর্তন আনা হয় মূল্যায়নে।
ষান্মাসিক ও বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সময় ছাড়া পুরো শিক্ষাবর্ষে শিখনকালীন মূল্যায়ন বাস্তবায়ন শুরু হয়।