বাংলাদেশ

আন্দোলন থামানোর প্রক্রিয়াগুলো নিষ্ঠুর ও দানবীয় : জাফর ইকবাল

  প্রতিনিধি ২৬ জানুয়ারি ২০২২ , ৫:০৩:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে নানা অপচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। 

তিনি বলেন, এই আন্দোলন দমানোর জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো নেওয়া হয়েছে সেটা নিষ্ঠুর, অমানবিক ও দানবীয়।

তিনি আরও বলেন, অনশন ভাঙার পরও শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে নিবেন কি-না সেটা তারাই নির্ধারণ করবেন।

দেশের এই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আজ বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান। এরপর বেলা সোয়া ১১টার দিকে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

এর আগে আজ ভোররাত ৪টার দিকে জাফর ইকবাল অনশনস্থলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক সঙ্গে ছিলেন।

জাফর ইকবাল বলেন, আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি, এই ছেলেমেয়েদের আন্দোলনকে থামানোর জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো নেওয়া হয়েছে, সেটা অমানবিক, নিষ্ঠুর, দানবীয়।

তিনি বলেন, আমি ধরেই নিয়েছিলাম, এখানে একটা মেডিকেল হেলথ থাকবে। তারা কন্টিনিউয়াসলি এই ছেলেমেয়েদের দেখবে। আমি খুবই ব্যথা পেয়েছি মনে, যখন দেখেছি এখানে কোনো রকম মেডিকেল হেলথ সুবিধা নাই। ছেলেমেয়েরা যখন চেষ্টা করেছে মেডিকেল হেলথ আনার জন্য, তারা সেটা আনতে পারে নাই।’

শিক্ষার্থীরা তাদের কথা শুনে অনশন ভাঙায় নিজের সন্তুষ্টির কথা জানান জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, ‘আমি ও প্রফেসর ইয়াসমিন হক গত রাতে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ভোররাতে এখানে পৌঁছাই। আমরা আমাদের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলি। আমরা তাদের অনুরোধ করি, তোমাদের প্রাণ অনেক মূল্যবান। এই প্রাণ এই রকম একজন মানুষের জন্য তোমরা বিপদগ্রস্ত করবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাদের অনুরোধ রক্ষা করে আজকে সকালবেলা সবাই মিলে অনশন ভঙ্গ করেছে। আমি আমার জীবনে এর থেকে বেশি আনন্দ কখনো পাই নাই। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এখন তাদের হাসপাতালে নিতে হবে, তারা যেন সুস্থ হয়ে উঠে ঠিকভাবে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

এসময় পাশে থাকা ইয়াসমীন হক বলেন, শিক্ষার্থীরা ২৭ জন একসঙ্গে অনশন ভেঙেছে। এটা আমাদের জীবনের জন্য সবচেয়ে বড় পাওনা। প্রায় তিন বছর আমরা এখানে নাই।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাফর ইকবাল বলেন, আমি অনশন ও আন্দোলনটাকে ভিন্নভাবে দেখি। তাদের যে উদ্দেশ্য, এই আন্দোলন করার জন্য অনশন করার প্রয়োজন নাই। কারণ যে মানুষটার জন্য তারা অনশন করতে যাচ্ছে তার জন্য প্রাণ দেওয়াটা সমীচিন না। তারা যদি আন্দোলন করতে চায়, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।

জাফর ইকবাল ও ইয়াসমীন হক প্রত্যেক অনশনকারীর কাছে গিয়ে তাদের মুখে পানি তুলে দেন। এ সময় অনেক অনশনকারী কান্নায় ভেঙে পড়েন। জাফর ইকবাল তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন ও সান্ত্বনা দেন।

গণমাধ্যমে জাফর ইকবাল আরও বলেন, আমি এখানে আসার আগে সরকারের অনেক উচ্চমহলের লোকজন আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেই আমি এখানে এসেছি। আমি তাদের অনুরোধ করব, তারা আমাকে যে কথাগুলো দিয়েছেন; সেই কথাগুলো যেন তারা রক্ষা করেন। আমার আর ছাত্রদের ভিতরে কোনও পার্থক্য নাই।

তিনি আরও বলেন, এই কথাগুলো যদি রক্ষা করা না হয় তাহলে আমি বুঝে নেব, শুধু ছাত্রদের সঙ্গে নয়, আমার সঙ্গে এবং এদেশের যত প্রগতিশীল মানুষ আছে সবার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। কাজেই আমি আশা করব, সেই কথা যেন তারা রাখেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by