প্রতিনিধি ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৭:৫১:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ
আশুলিয়ায় শ্রমিকদের বকেয়া বেতন চাওয়ায় কারাখানায় ডেকে নিয়ে ৩ জন শ্রমিক নেতাকে আটকে রেখে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে কারখানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। শ্রমিকদেরকেও মারধরেরও অভিযোগ পাওয়া যায়।
পরে সেনাবাহিনী খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে উদ্ধার করেন এবং এঘটনায় ৩ জনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। আহত ৩ শ্রমিক নেতাকে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
বুধবার দুপুরে আটকের বিষয়ে নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: সাইফুল্লাহ আকন্দ। এরআগে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আশুলিয়ার জিরাবো বড় রাঙ্গামাটিয়া এলাকায় প্লাটিনাম ক্রিয়েশন এন্ড ডিজাইন লিমিটেড নামে একটি কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন, মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস ওয়ার্কার ফেডারেশনের সাভার ও আশুলিয়া কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক মো: নাইম শিকদার ও জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশ আশুলিয়া কমিটির সভাপতি কামরুল ইসলাম মৃধা।
আটককৃতরা হলো, কারখানাটির ডাইরেক্টর আরাফাত জান, পিএম মাসুদ রানা ও এ্যাডমিন ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী শ্রমিকরা জানায়, প্লাটিনাম ক্রিয়েশন এন্ড ডিজাইন লিমিটেড কারখানা থেকে ২ মাসের বেতন সহ পাওনাদি না দিয়েই ৪৫ জন শ্রমিক ছাটাই করেন। তারা ফেডারেশনে অভিযোগ করলে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কারখানায় কথা বলে। এরপরে কারখানার কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বেতন দিবে বলে ডেকে নেয়। সেখানে তারা যাওয়ার পরে গেট লাগিয়ে দেয়। এরপরে মালিকপক্ষের লোকজন ও তাদের ভাড়াকৃত বহিরাগত সন্ত্রাসীরা লোহার রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। অন্যদিকে ফেডারেশনের নেতাদেরকেও বেধড়ক মারপিট করে। এঘটনায় শ্রমিক নেতাসহ তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়। পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী এসে তাদেরকে উদ্ধার করেন। এবং সেই সাথে মালিক পক্ষের ৩ জনকে আটক করে পুলিশে দেয়। তাদের পাওনাদি পরিশোধ সহ এই হামলায় যারা জড়িত রয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান ভুক্তভোগী শ্রমিকরা।
ভুক্তভোগী শ্রমিক নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ করে বলেন, প্লাটিনাম কারাখানার ৪৫ জন ছাটাইকৃত শ্রমিকের বেতন ও পাওনাদি পরিশোধ করতে কর্তৃপক্ষ তালবাহানা করে আসছিলো। পরে শ্রমিকরা ফেডারেশনে অভিযোগ দিলে, আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করি। এরপরে কারখানা কর্তৃপক্ষ এবিষয় সমাধান করার কথা বলে আমাদেরকে ডেকে নেয়। শ্রমিক সহ আমরা সেখানে যাই। কারখানার মুল ফটক দিয়ে ঢোকার পরে সেখানকার লোকজন গেট লাগিয়ে দেয়। প্রায় ৩ ঘন্টা বসিয়ে রাখে। তারা বললো মালিক পথে, তিনি আসলে সমাধান করা হবে। এসময়ে আমাদেরকে রুমে ডেকে নেয় এবং আটকে রাখে। পরে কারখানার ডাইরেক্টর, পিএম ও এ্যাডমিন ম্যানেজার সহ তাদের ভাড়াকৃত সন্ত্রাসী বাহিনী এসে শ্রমিক নেতা নাইম, কামরুল ও আমার উপর লোহার রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে। পরে আমি শ্রমিক নেতা আশিককে এবিষয়ে ম্যাসেজ দেই। সে সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীকে খবর দেন। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী এসে আমাদেরকে উদ্ধার করেন। এবং কর্তৃপক্ষ ৩ জনকে আটক করে পুলিশে দেন। এছাড়াও মালিক পক্ষের ভাড়াকৃত গুন্ডাবাহিনী শ্রমিকদেরকেও বেধড়ক মারপিট করে। এতে ৯-১০ জন শ্রমিক আহত হয়। ঘটনাস্থলে যদি সেনাবাহিনী না আসতো, তাহলে তারা আমাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলতো। এই ঘটনায় যারা-যারা জড়িত রয়েছে, আমি তাদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাই।
এবিষয়ে কারখানার মালিক বলেন, সাধারণত আমরা রিজাইন স্যালারি ২০ তারিখ দেই। জানুয়ারি মাসের রিজাইন স্যালারি নিতে শ্রমিকদের কারখানায় ডাকা হয়। কারখানায় তারা আসলে জানতে চাই যে, তোমরা কেন চাকরিচ্যুত হলে এবিষয়ে আমি দেখবো। তখন তারা আমার সাথে ভালো ব্যবহার করে। কিন্তুু কেন তারা কারখানা ভাংচুর করলো তা আমার বোধগম্য নয়। তাহলে আপনি তাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিলেন না কেন এবং আপনার কারখানার ৩ জন কর্মকর্তা আটক হলো কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে শ্রমিকরা আমাদের এখানে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে আমি কেন অভিযোগ করবো। অভিযোগ করলে আমার কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হবে। এছাড়া কারখানার ভিতরে গ্যানজাম ও হাতাহাতি হয়েছে বিধায় কর্মকর্তাদের ওপর সেই লায়াবিলিটি বর্তায়।
এবিষয়ে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: সাইফুল্লাহ আকন্দ বলেন, ৩ জনকে সেনাবাহিনী আমার কাছে হস্তান্তর করেন। অভিযোগকারী থানায় অভিযোগ করার পরে মামলা এফআইআর হয়েছে এবং বুধবার তাদেরকে কোর্টে চালান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।