রংপুর

উলিপুরে চরাঞ্চলে বেড়েছে বাদামের চাষ, দ্বিগুণ লাভের আশা

  প্রতিনিধি ৯ মে ২০২৪ , ৬:৩১:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে চরাঞ্চলে বেড়েছে বাদামের চাষ, দ্বিগুণ লাভের আশা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে চরাঞ্চলে বেড়েছে বাদামের চাষ। দ্বিগুণ লাভের স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। যেদিকে চোখ যায়, সবুজ পাতায় দোল খাচ্ছে বাদামের গাছ। সবুজ আর সবুজে ভরা পুরো চরাঞ্চল। নদীর বুকে জেগে উঠা চরগুলো যেন সেজেছে নতুন সাজে। সবুজে ভরা বাদামের ক্ষেত এখন কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে।

ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তা নদীর বিস্তীর্ণ চর জুড়ে এখন বাদামের সবুজ ক্ষেত ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভ হওয়ায় বাদাম চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে বাদামের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও চলমান প্রচণ্ড তাপদাহ ও খরায় ফলন কিছুটা ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা চাষীদের।উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার চরাঞ্চল গুলোতে বাদাম চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১’শ ২০ হেক্টর।

যা অর্জিত হয়েছে ১’শ ৬০ হেক্টর। লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৪০ হেক্টর বেশি অর্জিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন চরাঞ্চলের বাদাম চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যাহত রয়েছে। এবারে চরাঞ্চল গুলোতে বাদামের ফলন অনেক ভালো হয়েছে বলে জানান।জানা যায়, বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই, দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত এবং হাতিয়া, বুড়াবুড়ি, বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা ইউনিয়ন ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিত।

কৃষকেরা জানান, গত বছর তিস্তা নদীতে দ্বিতীয় দফা বন্যায় ভারত থেকে পানির সঙ্গে কাদাপানি আসার ফলে তিস্তা নদীর বালু মাটিতে পলি জমেছে। ফলে এসব জমিতে বিভিন্ন ধরনের আবাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।গোড়াই পিয়ার, রামনিয়াশা, হোকডাঙ্গা, টিটমা, নাগড়াকুড়া, দড়িকিশোরপুর, মধ্য গোড়াই, কদমতলা, অজুর্ন, বিরহিম, সন্তোষ অভিরাম, সাদুয়া দামারহাট, কর্পূরা, খারিজা লাটশালা সহ অসংখ্য চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চরগুলো যেন নতুন করে সেজেছে। শুধু মাঠের পর মাঠ বাদামের সবুজ ক্ষেত। জেগে উঠা চরের বালুতেই জেগে উঠা সবুজ বাদাম ক্ষেতকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।

এছাড়াও এসব চরে বসবাস করছেন লাখ লাখ মানুষ। এসব মানুষ নানা ফসলের ওপর নির্ভরশীল। তারা যুগ যুগ ধরে চাষ করে আসছেন ভূট্টা, আলু, মরিচ ও বাদাম সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল। বিশেষ করে বাদাম চাষেই দিন বদলের স্বপ্ন দেখেন তারা। তাই অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এ বছরেও চাষ করেছে শতাধিক হেক্টর বাদাম। কিছু দিনের মধ্যে ঘরে নিতে শুরু করবে বাদাম। এবার ফলনও হয়েছে বাম্পার। দিনব্যাপী বাদামের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কিষাণ-কিষাণীরা। এদিকে প্রচণ্ড খরায় জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। বাদামের গাছ শুকিয়ে মরার উপক্রম হচ্ছে। তপ্ত রোদ থেকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন কৃষক। কেউ বাদাম ক্ষেতে নিড়ানি দিচ্ছেন, আবার কেউ সেচ দেওয়ার পরে জমিতে সার দিচ্ছেন। যেন দম ফেলানোর ফুরসত নেই তাদের।

তিস্তার চরাঞ্চলের চর গোড়াইপিয়ার এলাকার কৃষক নুরুজ্জামান মিয়া জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এ মৌসুমে সাড়ে তিন একর জমিতে বাদামের চাষ করেছেন। এতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। বাদাম উঠানো পর্যন্ত আরও খরচ হবে ৩০ হাজার টাকা। কয়েক দিনের মধ্যে বাদাম উঠানো শুরু হবে। বাদামের বাম্পার ফলন হওয়ায় তিনি ফলনের আশা করছেন ১০০ মণ। বাজারে বাদাম মণ প্রতি বিক্রি হয় ৫ হাজার টাকা। যার মূল্য হবে প্রায় ৫ লাখ টাকা। যা খরচেরও দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন এ বাদাম চাষি।

এছাড়া বিভিন্ন চরাঞ্চলে বাদাম চাষিদের মধ্যে সাহাবর আলী, টোফাজ্জল মিয়া, মহিজল, আসমত আলী , সাহেব আলী ও নুরু মিয়া সহ আরও অনেকে জানান, নদ-নদীর ধু-ধু বালু চরে যেখানে যে ফসল প্রযোজ্য তাই চাষাবাদ করেছেন কৃষকেরা। আবাদের ফলন খুব ভাল হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এবারে বিভিন্ন চরাঞ্চলে বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাদাম চাষের মাধ্যমে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। বন্যার পানিতে পলি জমে জমি আরো উর্বর হয়েছে। তাই বাদাম চাষে বাম্পার ফলনে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। আবার অতি দাবদাহের কারণে বাদাম চাষে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, উপজেলার চরাঞ্চল গুলোতে বাদামের চাষ হয়েছে এবং ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। বাদাম চাষ অত্যন্ত লাভজনক ফসল। ক্ষতির ঝুঁকিও নেই তেমন। এসব কারণে কৃষকেরা বাদাম চাষে বেশি উৎসাহিত হচ্ছেন। তাই এ ফসলে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করাসহ অধিক ফসল উৎপাদনে সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by