আবুল কালাম আজাদ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৪:০৫:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চলে একর ময় একর জমিতে স্ট্রবেরির চাষ করেছেন এ্যাসেট নামের এক কোম্পানি। চরাঞ্চলে আধুনিক পদ্ধতিতে স্ট্রবেরি চাষে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে সর্বসাধারণের মাঝে। শীত প্রধান আবহাওয়ার বিদেশি ফল স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতা পেতে প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছেন ওই কোম্পানি। বিদেশি ফলের ক্ষেত দেখার জন্য প্রতিদিন দূর দুরান্ত থেকে আসছেন অনেক দর্শনার্থী। কোম্পানির উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা দক্ষ শ্রমিক দিয়ে শীতকালীন বিদেশি ফলের ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন বাগানের দায়িত্বে থাকা ফল চাষিরা। উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলে এবারেই প্রথম স্ট্রবেরির চাষ হয়েছে। এ্যাসেট কোম্পানির দেশের বাহিরের বিভিন্ন দেশ থেকে বীজ সংগ্রহ করে স্ট্রবেরির চাষ করেছেন এ চরাঞ্চলে। ফল আসা শুরু হয়েছে। কেজি প্রতি হাজার টাকা দরে বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করা শুরু হয়েছে বলে জানান তারা।
সরেজমিন উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তার চরাঞ্চলে সাতালস্কার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১২ একর জমির উপর বিদেশি ফল স্ট্রবেরির চাষ করেছেন এয়ারলাইন্স ফর সাইন্টিফিক শশিও ইকোনমিক ট্রান্সফরমেশন (এ্যসেট) নামের এক কোম্পানি। এখানে প্রায় তিন লক্ষ ৫০ হাজার স্ট্রবেরির চারা লাগানো হয়েছে। প্রতিটি গাছে ফুল ও ফলে ভরে গেছে। আবার কিছু কিছু গাছের ফল বাজারজাত করার উপযোগী হয়ে উঠেছে। প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করা যায় এ বিদেশি ফল স্ট্রবেরি। বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা উচ্চ ফলনশীল ৬ জাতের আমেরিকান ফেস্টিবল, হাইব্রিড ফেস্টিবল, রাবি-৩ ফেস্টিবল, সুইট চারলি, উইন্টার ডন ও এফ টুয়েন্টি ফোর জাতের স্ট্রবেরি মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা হয়েছে। বর্তমান হাজার টাকা কেজি দরে বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করা শুরু হয়েছে। এ ফলটি সুগন্ধীযুক্ত, টক মিষ্টি স্বাদের। দাম বেশি থাকলেও বাজারে অনেক চাহিদা রয়েছে।
স্ট্রবেরি ফলের ক্ষেত দেখতে আসা শরিষা বেগম (৫৫), আরজিনা বেগম (৬০), আফরুজা বেগম (২৭), আরিফ মিয়া (২৫) ও শাপলা খাতুন (৩০) সহ আরও অনেকে বলেন, স্ট্রবেরি ফল দেখেছি কিন্তু গাছ দেখিনি। আজ প্রথম ফলের গাছ ফল সহ দেখতে পেয়ে অনেক আনন্দিত। এছাড়া আমাদের চরাঞ্চলে এরকম ফলের চাষ হবে ভাবতেই পারিনা। ফল ও ফলের গাছ দেখার জন্য প্রতিদিন এখানে অনেক লোক আসেন। আমরা কোনোদিন আসিনি। আজ প্রথম এখানে দেখতে এসেছি বলে জানান তারা।
এ্যসেট কোম্পানির ফাউন্ডার রশিদ মিয়া জানান, বজরা ইউনিয়নের তিস্তার চরাঞ্চলের সাতালস্কার এলাকায় এ্যাসেট কোম্পানি ১২ একর জমি ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়ে লিজ নেয়া হয়েছে। এখানে বিদেশ থেকে উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ করে প্রায় ৩ লক্ষ স্ট্রবেরির চারা রোপণ করা হয়েছে। তাতে একর প্রতি খরচ হবে প্রায় ১২ লক্ষ থেকে ১৪ লক্ষ টাকা। এখন প্রতিটি গাছে ফলন আসা শুরু হয়েছে। আবার কিছু কিছু গাছে ফল বাজারজাত করার উপযোগী হয়ে উঠেছে। স্ট্রবেরি বাজার জাত শুরু হয়েছে। পাইকেরিতে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা। তিনি প্রতি একরে ফলনের আশা করছেন ১০ টন অর্থাৎ ২শ ৫০ মণ। যার বাজার মুল্য ১ কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন, ফলন ভালো হলে দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করা যায়।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা স্বপন কুমার সরকার জানান, আমার ব্লকে স্ট্রবেরির চাষ হয়েছে। তাদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া চরাঞ্চলে প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে স্ট্রবেরির চাষ হয়েছে। অনেক ভালো ফল ধরেছে। আশা করছি তারা অনেক লাভবান হবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন জানান, উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তার চরাঞ্চলে সাতালস্কার এলাকায় স্ট্রবেরির চাষ হয়েছে আমি জানতে পেরেছি। তাদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ফলন আসা ও বাজারজার করা শুরু হয়েছে। আশাকরি অনেক লাভবান হবেন।