রংপুর

উলিপুরে তীব্র শীতে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

  প্রতিনিধি ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ , ৩:৫৬:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে তীব্র শীতে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

কুড়িগ্রামের উলিপুরে হিমেল বাতাস আর কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। সে সঙ্গে কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। রাতে ও সকালে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। টানা ছয় দিনেও দেখা মিলছে না সূর্যের। এতে তীব্র ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের দিনমজুর ও সাধারণ মানুষ। ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এ অবস্থায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন খুব একটা ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। এছাড়া শীতের তীব্রতায় উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যহত হচ্ছে। গবাদি পশু নিয়ে নিয়ে বিপাকে রয়েছে স্থানীয়রা। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদ ও নদী বেষ্টিত  উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এক উপজেলা। উপজেলার তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী রয়েছে ৮ টি ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন চরাঞ্চলের খেটে খওয়া বসবাসরত মানুষ তীব্র শীতে পড়েছে চরম বিপাকে। এসকল এলাকার কৃষক, জেলেরা তীব্র শীতে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। গবাদি পশু নিয়েও রয়েছেন বিপাকে। বৃদ্ধ ও শিশুদের বেড়েছে ঠান্ডা জনিত রোগের প্রকোপ। এছাড়া উপজেলার  চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের দূর্ভোগ আরও বেড়েছে।

উপজেলা হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের ঠান্ডায় শতাধিক ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন হাসপাতাল ছাড়ছেন ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী। আবার প্রতিদিন ঠান্ডাজনিত আক্রান্ত রুগী ভর্তি হচ্ছেন ২৫ থেকে ৩০ জন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগীর মধ্যে বেশীর ভাগই শিশু। এসকল ডায়রিয়া রোগীর চাপ সামলাতে হিমশীম খাচ্ছে কতৃপক্ষ। ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ড না থাকায় রোগীদের মেঝে ও বারান্দায় বিছানা পেতে থাকতে হচ্ছে।

এদিকে কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, তাপমাত্রা আরও কয়েক দিন এমন থাকবে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে এ মাসে আরও একটি শৈত্যপ্রবাহ এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি। 

স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে পিংকি রানী (৯ম শ্রেণী), সঞ্জিতা রানী (৮ম শ্রেণী), সুইটি রানী (৬ষ্ঠ শ্রেণী) ও আব্দুল্লাহ আল বশির (৬ষ্ঠ শ্রেণী) সহ আরও অনেক ক্ষুদে শিক্ষার্থী জানান, তীব্র শীত ও ঠান্ডার কারণে স্কুলে যেতে অনেক সমস্যা হয়। সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনা। আমাদের পড়াশোনা করতে ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের হারুনেফড়া এলাকার খেটে খাওয়া দিন মজুর আব্দুল হামিদ জানান, কয়েকদিন থেকে সূর্যের মুখ দেখতে পাইনা। এত শীত ও ঠান্ডায় কাজ করতে পারিনা। হাত পা বরফ হয়ে আসে। কয়েকদিন থেকে অনেক কষ্ট করে জীবন যাপন করছি।

অটোরিকশা চালক জামাল মিয়া জানান, তীব্র শীত ও ঠান্ডা থাকার কারণে সকালে অটোরিকশা নিয়ে বেড় হতে পারিনা। ঠান্ডায় হাত বরফ হয়ে যায় রিকশা চালাতে পারিনা। বেড় হলেও তেমন যাত্রীর দেখা মেলেনা। কয়েকদিন থেকে ঠিকভাবে আয় রোজগারও করতে পারিনা। এনজিও থেকে কিস্তিতে অটোরিকশা কিনেছি। এখন কিস্তির টাকা দিতে পারছি না। কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা বলে জানান তিনি। 

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মেশকাতুল আবেদ বলেন, গত কয়েকদিনের শীত বাড়ার সাথে সাথে ঠান্ডার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে শিশুদের ডায়রিয়া এবং বয়স্কদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বেড়েছে। দিনে দিনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার অনেক রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। তবে শিশু ওয়ার্ডের জন্য উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে বারবার জানিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। সীমিত জনবল দিয়ে আমরা তাদের যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি বলে জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউর রহমান জানান, গত কয়েকদিন থেকে উপজেলার উপর দিয়ে শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তীব্র শীত ও ঠান্ডার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে করে খেটে খাওয়া মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। উপজেলার তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের চারাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকার অসহায় ও নিরীহ মানুষদের মাঝে সরকারি ভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যহত রয়েছে বলে জানান তিনি। 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by