প্রতিনিধি ২৬ অক্টোবর ২০২৪ , ৩:৫৩:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে দানা’র দাপটে আমন ধান জমিতে শুয়ে পড়েছে। এতে করে রোপা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবি শশ্যের বেশির ভাগ ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক বিপাকে পড়েছেন আমন ও সবজি চাষিরা।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে এক টানা বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে ছিল হিমেল হাওয়া। বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে ক্ষতি হয়েছে শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবি শস্যের। বাতাসে নষ্ট হয়েছে মাঠের পাকা রোপা আমন ধানের। এদিকে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। ফলে অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান কৃষকরা। তবে আগামী দুইদিন রোদ না হলে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
উপজেলায় উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৫শত ৬০ হেক্টর জমি। যা অর্জিত হয়েছে ২৪ হাজার ৪ শত ৫০ হেক্টর। এবছর আমনের ফলন উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৩ হাজার ১শত ৫২ মে.টন। তারা জানান, দানার প্রভাবে প্রায় ২০ হেক্টর জমির আমন ধান মাটিতে শুয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এসকল কৃষকদের ধান বেধে দেয়া সহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া দানার প্রভাবে ধান উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে ব্যাহত হবে না। আবহাওয়া অনুকুল হলে অনেক ধানের গাছ উঠে দাঁড়াবে।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে অনেক স্থানে পাকা ও আধাপাকা ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এতে পাকা আমন ধান নিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। ধানগুলো ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আমন চাষিরা। এখনো থেমে থেমে হালকা বাতাস ও গুরি গুরি বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা পাকা ধান কেটে ঘরে উঠাতে পারছেন না। আধা পাকা ধান নিয়ে পরেছেন বিপাকে। রোদ না হলে আমনের ব্যপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের হারুনেফড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক আশরাফ আলী খন্দকার জানান, চলতি মৌসুমে জমিতে কয়েক জাতের রোপা আমন ধান রোপণ করেছেন। প্রথম দিকে পাকা ধান গাছের ক্ষতি করলেও পরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। প্রবল বাতাসে পাকা ও কাচা ধান জমিতে শুয়ে পড়ছে। কিছুদিন পর ধান কাটা শুরু হবে। মাটিতে শুয়ে থাকা ধান কাটা নিয়ে পরতে হবে বিপাকে। শুয়ে থাকা ধান কাটা যেমন কষ্টের তেমনি ধান কাটা শ্রমিকদের দিতে হবে দিগুণ মজুরি। প্রচুর ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ফসল নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছেন এ কৃষক।
কিশোরপুর এলাকার কৃষক আব্দুল লতিফ, খতিব মিয়া, মহশিন মিয়া ও সাহেব আলী সহ আরও অনেকে জানান, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ঝড়ো হাওয়ায় ধান গাছ গুলো জমিতে শুয়ে পড়েছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার অনেক ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলা নিয়ে তারা চিন্তিত। তারা আরও বলেন, এবারে দানার প্রভাবে ধানের যে অবস্থা হয়েছে তাতে লাভের থেকে লোকসানে পড়তে হবে।
দলদলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন দলদলিয়া টাপুরকুটি গ্রামের সবজি চাষি মমিন হোসেন বলেন, দানার প্রভাবে শরিষা শাকের ক্ষেত ও ধনে পাতার ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে ২০ হাজার টাকার ক্ষতির মুখে পরে গেছেন। এবারে দানার প্রভাবে ওই এলাকা আমরা সবজি চাষিরা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি বলে জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো. মোশারফ হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে আমন ধানের তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। এখন মোটামুটি কিছু কিছু জমির ধানই পাকা রয়েছে। যেসব ধান জমিতে পড়ে গেছে সে সকল কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আবহাওয়া অনুকুল হলে জমির ধান কাটলে কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি আর না হলে ধানের বেশি ক্ষতি হবে না। ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে যে সমস্ত ক্ষেতের ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে, সেসব ক্ষেতের ধান দ্রুত কাটার জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় দানার প্রভাব বিস্তার লাভ করেছে। এতে করে আমনের ব্যপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। দানার প্রভাব শনিবার (২৬ অক্টোবর) পর্যন্ত অব্যহত থাকবে। তবে আগামী রোববার আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বভাবিক হবে বলে জানান তিনি।