প্রতিনিধি ১ মার্চ ২০২৫ , ৪:৫৯:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে সবজিতে স্বস্তি ফিরলেও পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে রশুন, কাচামরিচ, শশা, লেবু, বেগুন ও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সকল ধরনের সবজির দাম কিছুটা বাড়লেও আলুর দাম কিছুটা অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে প্রতি কেজি রশুন পাইকেরিতে ১শ ৩০ টাকা খুচরায় ১শ ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, শশা ৩০ টাকা খুচরায় ৩৫ টাকা ও পেঁয়াজ ৩৫ টাকা খুচরায় ৪০ দরে দোকানে বিক্রয় হচ্ছে। মরিচ, শশা, রশুন ও পেঁয়াজ ছাড়া অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সবজির দাম কয়েকদিন আগে কিছুটা কম থাকলেও মাহে রমজানের কারণে সকল ধরনের সবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এতে করে অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। এদিকে সকল প্রকারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। বাজার মনিটরিং করার দাবী জানান তারা।
সরেজমিনে শনিবার (১ মার্চ) উলিপুরের কাঁচা বাজার গিয়ে দেখা যায়, আলু (স্টিক) পাইকারী প্রতি কেজি ১৪ টাকা, খুচরা ২০ টাকা, দেশী আলু পাইকারী ২৪ টাকা, খুচরা ৩০ টাকা, পেঁয়াজ পাইকারী ৩৫ টাকা, খুচরা ৪০ টাকা, রসুন পাইকারী ১শ ৩০ টাকা, খুচরা ১শ ৪০ টাকা, মিষ্ট কুমড়া পাইকারী ১২ টাকা, খুচরা ১৪ টাকা, আঁদা পাইকারী ৯০ টাকা, খুচরা ১শ ১০ টাকা, শুকনা মরিচ পাইকারী ৩শ ৯০ টাকা, খুচরা ৫শ টাকা, শসা পাইকারী ৩০ টাকা, খুচরা ৪০ টাকা, বেগুন পাইকারী ১২ টাকা, খুচরা ২০ টাকা, বেগুন (গোল সাদা) পাইকেরিতে ৪০ টাকা খুচরায় ৫০ টাকা, রঙ্গিন কপি পাইকেরিতে পিচ প্রতি ২০ টাকা খুচরায় ৩০ টাকা, করলা পাইকারী ৯০ টাকা, খুচরা ১০০ টাকা, পেপে পাইকারী ২০ টাকা, খুচরা ৩০ টাকা, ভ্যান্ডি পাইকারী ১৫০ টাকা, খুচরা ১৮০ টাকা, লাউ পাইকারী প্রতি পিচ ৩০ টাকা, খুচরা ৩৫ টাকা, কাঁচা মরিচ পাইকারী প্রতি কেজি ৩৬ টাকা, খুচরা ৪০ টাকা, সিম পাইকেরীতে ৩৫ টাকা খুচরায় ৪০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। কাচা মরিচ, শশা, রশুন, বেগুন ও পেঁয়াজ সহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নাগালের বাহিরে যাওয়া শুরু করায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ জন। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ক্রয় করছেন। সাধারণ ক্রেতারা বলেন, সবজির দাম গত কয়েক দিনের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক অস্বস্তিতে আছেন তারা।
উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই এলাকা থেকে বাজার করতে আসা শাহিনুর বেগম (১৮) ও শেফালী বেগম (৩৫) জানান, এক কেজি (১হাজার গ্রাম) শশা ৪০ টাকা দিয়ে নিয়েছি। রমজানের কারণে দামে বেড়েছে। কয়েকদিন আগেও শশার দাম ছিলো ২০ টাকা। আরও যে কত দাম বাড়বে বলাই যাচ্ছেনা। এখনো সবজিসহ অন্যান্য জিনিসের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে করে আমাদের অনেক সমস্যা হবে। তারা আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের চাহিদা বেশি কিছু না। ডাল-ভর্তা খেয়ে রমজান মাস পার করতে চাই কিন্তু ভর্তায় ব্যবহার করা মরিচের, পেঁয়াজ সহ অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়তে থাকলে আমরা যাবো কোথায়।
আছিয়া বেগম (৩৫), জাহানারা বেগম (৩৮) ও মোর্শেদা বেগম (৪০) সহ অনেক ক্রেতা জানান, সবজির দাম কিছুটা বাড়তে শুরু করলেও বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে রশুন, শশা, বেগুন, কাচা মরিচ ও পেঁয়াজের। এসকল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার দাবী জানান। এছাড়া দিন দিন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে নিম্ন আয়ের মানুষজন বিপাকে পরেছেন। বাজার গুলো মনিটরিং করার দাবী জানান কর্তৃপক্ষের কাছে।
পৌরসভার সবজি বাজারের খুচরা বিক্রেতা রাকিবুল ইসলাম জানান, পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে সবজি বাজারে অনেক ধরনের সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে সাধারণ মানুষ অস্বস্তিতে পড়েছে। সবজির আড়ৎ এ দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা খুচরা বিক্রেতারা সবজি বেশি দামে বিক্রি করতেছি।
বিভিন্ন এলাকার গ্রামীন বাজারের সবজি দোকানী মেহেদি ও রবিউল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম কিছুটা বাড়তে শুরু করলেও রশুন, শশা, মরিচের ও পেঁয়াজের দাম বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে রশুন, শশা, মরিচ, পেঁয়াজ ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে এনে গ্রামে বিক্রি করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। বেশি দাম হওয়ায় অনেক ক্রেতাই দাম শোনার পর ফিরে যান। আবার অনেকেই সামান্য পরিমান নিয়ে যায়। আগের থেকে বেঁচাকেনা অনেক কমে গেছে। এতে করে আমাদের লোকসানের মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উলিপুর বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী এরশাদুল হক জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে সবজি নিয়ে এসে বাজারে পাইকারীতে বিক্রি করা হয়। পবিত্র মাহে রমজানের কারণে অনেক চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে সকল সবজির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে রশুন, শশা, মরিচ ও বেগুনের দাম কয়েক দিনের তুলুনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
কাচা বাজারের আড়ৎ ব্যবসায়ী এরশাদুল হক (৪৫) বলেন, পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন মোকামে রশুন, শশা, কাচা মরিচ, পেঁয়াজ ও অন্যান্য সবজির দাম বৃদ্ধি পেলে আমাদের এখানেও দাম বেড়ে যায়। বেশি দামে রশুন, শশা, মরিচ, পেঁয়াজ ও অন্যান্য সবজি ক্রয় করার কারণে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া প্রায় সকল প্রকার সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে। কাচা মরিচ, পেঁয়াজ সহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের থেকে বেঁচা কেনা অনেক কমে গেছে। জিনিসপত্রের দাম যত বাড়বে আমাদের দূর্ভোগও তত বাড়বে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
লেখক ও সংস্কৃতিক কর্মী আবু হেনা মুস্তফা জানান, রমজান উপলক্ষে সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দাম যাতে বেশি বৃদ্ধি না পায় এ জন্য প্রতিটি দোকানে মূল্য তালিকা থাকা ও বাজার মনিটরিং করার প্রয়োজন মনে করেন তিনি।