প্রতিনিধি ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৬:৪৫:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, পুরস্কার স্রেফ পুরস্কার নয়। রাষ্ট্রীয় পুরস্কার সরকারের রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দর্শনের ইশতেহারও বটে। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আমাদের সরকারের দর্শন বলতে চেয়েছি।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পদকপ্রাপ্তদের হাতে একুশে পদক তুলে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে পদক প্রদান অনুষ্ঠান শুরু হয়।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের সাফজয়ী নারী ফুটবল দলসহ ১৮ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে একুশে পদক তুলে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পুরস্কার প্রদানের আয়োজন শেষে এর আদ্যোপান্ত নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন উপদেষ্টা ফারুকী।
ফারুকী আরও লিখেছেন, এইসব অনুষ্ঠান টিভিতে দেখার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেখান থেকে বিনয়ের সাথে বলতে পারি; এই সব অনুষ্ঠানে অতীতে ভাবগাম্ভীর্য দেখেছি। কিন্তু আজকের অনুষ্ঠানে দেখেছি প্রাণের স্পন্দন আর স্বতঃস্ফূর্ততা। পুরো মিলনায়তনের দর্শক যেন এক নতুন বাংলাদেশের আবেগে ভেসেছে। আমরা এইসব অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের অনুভুতি কখনো শুনতে পাইনা, অথচ এর মধ্যমণি তারা। প্রটোকল ভেঙে এবার আমরা মঞ্চে তাদের অনুভুতি শুনেছি এবং শুনতে গিয়ে বহুবার আবেগাক্রান্ত হয়েছি।
পোস্টে তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রটোকল ভেঙে অ্যাওয়ার্ড নিয়ে হেঁটে যাওয়া; ফরম্যাট ভেঙে আলাদা ফটো সেশন; এমনকি অনুষ্ঠান চলাকালীন প্রটোকল ভেঙে ফেলা হয় বহুবার। এসব সম্ভব হয়েছে কারণ প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে মিলনায়তনে উপস্থিত সবাই একই আবেগে ভেসেছে।
এবার একুশে পদকপ্রাপ্তরা হলেন- চলচ্চিত্রে আজিজুর রহমান (মরণোত্তর), সংগীতে ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া (মরণোত্তর) ও ফেরদৌস আরা, আলোকচিত্রে নাসির আলী মামুন ও চিত্রকলায় রোকেয়া সুলতানা, সাংবাদিকতায় মাহফুজ উল্লাহ (মরণোত্তর), গবেষণায় মঈদুল হাসান, শিক্ষায় ড. নিয়াজ জামান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মেহদী হাসান খান (দলনেতা), রিফাত নবী (দলগত), মো. তানবিন ইসলাম সিয়াম (দলগত) ও শাবাব মুস্তাফা (দলগত)। সমাজসেবায় পদক পাচ্ছেন মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী (মরণোত্তর), ভাষা ও সাহিত্যে হেলাল হাফিজ (মরণোত্তর) ও শহীদুল জহির (মো. শহিদুল হক) (মরণোত্তর), সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারে মাহমুদুর রহমান এবং ক্রীড়ায় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল।
প্রসঙ্গত, ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে চালু করা একুশে পদক সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দিয়ে থাকে। দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখা ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৬ সাল থেকে একুশে পদক দেওয়া হচ্ছে।
আয়োজনে সহযোগিতা পাওয়ার কথা তুলে ধরে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, আমি এই আয়োজনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত উপদেষ্টা ওয়াহিদুদ্দিন মাহমুদ, আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, আমার মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানাই। এমনকি এসএসএফের ভাই-বোনেরা যেরকম আন্তরিকতা নিয়ে আমাদের নতুন নতুন ইমপ্রোভাইজেশনের সাথে খাপ খাইয়েছেন-পরামর্শ দিয়েছেন এটা অভাবনীয়। ধন্যবাদ আপনাদেরও। সবশেষে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণীদের প্রতি। আপনারা এই পুরস্কারকে মহিমান্বিত করেছেন। আপনাদের কর্ম আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও ভালো কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে। চলো বাংলাদেশ।