রংপুর

কুড়িগ্রামে চরের জমিতে সূর্যমুখী বীজের চাষ

  প্রতিনিধি ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৮:০৯:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

আশরাফুল হক রুবেল, কুড়িগ্রাম :

কুড়িগ্রামে এ বছর বাণিজ্যিক লক্ষ্যে প্রায় ২০০ হেক্টর চরের পতিত জমিতে চাষ হয়েছে সূর্যমুখী বীজের। চরের বালুময় জমিতে পানি আর সার ব্যবহার করে পতিত জমিতেই সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা যেমন সফলতা পাচ্ছেন তেমনি সম্প্রসারণ হচ্ছে এর আবাদ।

এতে একদিকে যেমন আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তেমনি অনাবাদি জমিকে কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছেন হতদরিদ্র এ জেলার কৃষক। কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গার জগমনের চরে একই প্লটে ৫০ বিঘা জমিতে ফোটা সূর্যমুখী বাতাসে দোলা দিচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন এই সূর্যমুখী ফুলের সেীন্দর্য দেখতে প্রতিদিন আসছেন দূর-দূরান্তের সৌন্দর্য পিপাসুরা। আগ্রহী কৃষকরা সূর্যমুখী বীজের উৎপাদনের মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে চান। তারা চান দেশে গড়ে উঠুক সূর্যমুখী তেল উৎপাদনের কারখানা। কুড়িগ্রাম কৃষিবিভাগ বীজ সার ও পরামর্শ দিয়ে নতুন এই সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলছেন ।

ধরলা নদীর তীর ঘেষে চর মাধবগ্রাম একসময় যেখানে শুধু ধুধু বালুচর ছিল সেখানে এখন হলুদের সমারোহ। বাতাসে দোল খাওয়া এক একটা বড় সুর্যমুখী হাতছানি দিচ্ছে অবহেলিত এ জেলার কৃষকদের সমৃদ্ধির। গত বছর যেখানে মাত্র ২০ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী বীজ লাগিয়েছিলেন আবু বকর এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০০ হেক্টর। গত বছর প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৮ মণ ফলন পাওয়ায় এবার আব্দুর রহিম, জলিলসহ অনেকেই লাগিয়েছেন সূর্যমুখী। প্রতি হেক্টরে দুই মেট্রিক টন সূর্যমুখী তেলবীজ উৎপাদন হয়। বর্তমানে প্রতিকেজি বীজের দাম ৮০ টাকা। সে হিসেবে এবার জেলায় কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকার সূর্যমুখীর তেলবীজ বিক্রি হবে।

প্রতি হেক্টর জমিতে বীজ সার ও পানি দিয়ে উৎপাদন খরচ পড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা উৎপাদনে একদিকে খরচ কম অন্যদিকে তেলবীজ বিক্রি হয় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। তেলের উৎস হিসেবে সূর্যমুখী বীজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সারা বিশ্বে এ তেলের চাহিদা থাকায় লাভও বেশি। তাই নতুন এ চাষ দেখে এলাকার অন্য কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন সূর্যমুখীর নতুন এ চাষে।

কুড়িগ্রামে প্রথম সূর্যমুখী বীজ চাষ করা উদ্যোক্তা আবু বকর জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ৩০ কেজি প্যাসিফিক হাইসান ৩৩ জাতের বীজ লাগিয়েছেন। ৪ মাসের মধ্যে সূর্যমুখীর বীজ তেল তৈরির জন্য উপযোগি হয়ে উঠেছে। গত বছর ভালো ফলন পেয়েছেন। মণ প্রতি দাম পেয়েছেন ২৮০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। এ বছর সূর্যমুখীর যে ফুল এসেছে তা দেখে ভাল ফলনের আশা করছেন এই উদ্যোক্তা। তিনি চান সূর্যমুখী তেলের কারখানা গড়ে উঠুক আর সেখানে এ জেলার কৃষকরা সেখানে বীজ বিক্রি করে লাভবান হোক।

কুড়িগ্রাম কৃষি প্রশিক্ষণ অফিসার ড. সামসুদ্দিন মিয়া জানান, ১৯৭৫ সাল থেকে আমাদের দেশে সূর্যমুখী আবাদ হলেও গত বছর জেলায় ২০ বিঘা চরের জমিতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের বীজ সার দিয়ে পরীক্ষামূলক চাষ করে সফলতা পাওয়ায় এ বছর আবাদ অনেক বেড়েছে। ভালো দাম পাওয়ায় চরের কৃষকরা এ চাষে আগ্রহী হওয়ায় এবং বাজারে এ বীজের চাহিদা থাকায় তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

আরও খবর

Sponsered content