চট্টগ্রাম

কোম্পানীগঞ্জে কাদের মির্জার নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন জাপা নেতা

  প্রতিনিধি ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৫:৪৮:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার নির্মম নির্যাতনের শিকার উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম স্বপনের উপর নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, নির্যাতিত জাপা নেতা নির্যাতনের বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ।

এমন একটি ভিডিও গতকাল শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ২ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে নির্যাতিত জাপা নেতা বলেন, ’আমাকে কালামিয়া ম্যানশনের সামনে থেকে মির্জা মিয়া আর ছেলে ৩০-৪০জন ছিল। মির্জা মিয়া কয়…হুতরে ধর, পুলিশও ছিল। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে উঠিয়ে নিয়ে যায় পৌরসভার তৃতীয় তলায়। সেখানে ব্যানার ৫টিতে লেখা ছিল বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ। পাঁচ ঘন্টারে ভাই ও ভাইরে। মুখ মন্ডল, দুই পা দেখিয়ে বলে আমার এগাইন নাই। এ সব কথা বলে তিনি বিলাপ করে অঝরো কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

এরপর তিনি আহাজারি করে বলেন, ‘ও আল্লাহ ও আল্লাহ। কি জন্য নিয়ে গেছে আমি জানিনা। ওইখানে নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও করছে। আমার বাবা রাজনীতি করছে আমিও করিয়ের। কোন দিন কারো সাথে ভেজাল করিনি। আমার থেকে জোর করে কিয়ের কিয়ের লেখা নিয়ে গেছে। ও আল্লাহ আল্লাহরে আমার মাথা নেই।’

জেলা পার্টির দায়িত্বশীল একটি সূত্র পরিবারের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল পাঁচটার দিকে জাপা নেতা সাইফুল ইসলাম স্বপনকে বসুরহাট বাজারের কালামিয়া ম্যানশনের সামনে থেকে কাদের মির্জার নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা তুলে নিয়ে যান। এরপর রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পৌরসভা ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে তাঁকে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুল লতিফ মেম্বারকে ডেকে নিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় তার কাছে বাবাকে হস্তান্তর করেন।

এরপর পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে নিরাপত্তার অভাবে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এখন বাসায় তার চিকিৎসা চলছে।

অভিযোগ পাাওয়া গেছে, উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দের ওপর চাপ দিয়ে বসুরহাট পৌরসভা ভবনে সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য করেন আবদুল কাদের মির্জা। সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল লতিফ মুন্সী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নিজ ইচ্ছায় বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার সাথে সাক্ষাৎ করতে যান উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক স্বপন। পরে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়া তিনি সুস্থ শরীরে পৌরসভা থেকে চলে যান।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মিঠুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কাদের মির্জা ও তার অনুসারীরা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুল লতিফ মুন্সীসহ তিন নেতাকে ডেকে নিয়ে চাপ সৃষ্টি করে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন মির্জা কাদের ও তার লোকজন। তারা ভয়ে কোনো কিছু প্রকাশ করতে পারছে না। কারণ তারা সেখানে বসবাস করতে হবে। বেচে থাকতে হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি ১৯৮৬ সালে জোট আওয়ামী লীগের সাথে জোট করেছিলো। ৯৬ সাল থেকে আমরা জাতীয় পার্টি আওয়ামীলীগকে সমর্থণ দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছি। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে বলা হলো যেহেতু কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পদক জনাব ওবায়দুল কাদের তার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমাদের প্রার্থীকে বলা হলো মনোননয়নপত্র ওবায়দুল কাদের সাহেবকে সমর্থণ দিয়ে উপহার দেয়ার জন্য। আজ গায়ে হাত তুলে তার ভাই তার প্রতিদান দিলেন। পরে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুল লতিফ মুন্সীর কাছে মুছলেখা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়’

তিনি বলেন, আজকে (শনিবার) জেলা জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিকেল ৫টায় মানববন্ধন করা হবে।

নির্যাতিত স্বপন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ (কবিরহাট- কোম্পানীগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রদপ্রার্থী ছিলেন। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক। উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের মোখলেছের রহমান পন্ডিত বাড়ির জিয়াউল হক জিয়ার ছেলে।

এ বিষয়ে জানতে শনিবার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার ফোনে একাধিক বার কল করা হলেও রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বা তার পরিবার কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

আরও খবর

Sponsered content