ঢাকা

ক্লাসে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

  প্রতিনিধি ৩১ অক্টোবর ২০২৩ , ৮:১৮:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

ক্লাসে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

ছাত্রকে শাসন করায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ইমরান হোসাইন (২৫) নামে এক স্কুল শিক্ষককে ক্লাসরুমে ঢুকে জুতাপেটা করার অভিযোগ উঠেছে অভিভাবকদের বিরুদ্ধে।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার দক্ষিণ চরভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষক ইমরান হোসাইন উপজেলার বাঔখোলা গ্রামের মো. মজিবুর রহমানের ছেলে। 

এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে মারধর করে একই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্র ও তার সহপাঠীরা। ওই ছাত্রী বিষয়টি সহকারী শিক্ষক ইমরান হোসেনের কাছে বিচার দেয়। শিক্ষক ইমরান ওই ছাত্রকে ডেকে শাসন করে। এতে ওই ছাত্রের মা স্কুলে এসে শিক্ষক ইমরান হোসাইনকে শাসিয়ে যান। এরপর দুর্গাপূজার ছুটিতে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। ছুটি শেষে স্কুল খোলার পর সোমবার দুপুরে ওই ছাত্রের মা তানিয়া বেগম ও ভাই ফয়সাল খান ক্লাস চলাকালে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষককে বেধড়ক মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। 

শিক্ষক মো. ইমরান হোসাইন বলেন, গত অক্টোবরের ১১ তারিখে আমাদের বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে মারধর করায় আমি অভিযুক্ত ছাত্রকে শাসন করি। পরে তার মা-ভাই আমাদের স্কুলে এসে আমাকে ও অন্যান্য শিক্ষককে শাসিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। একপর্যায় আমি ও আমার প্রধান শিক্ষক ওই ছাত্রের অভিভাবকদের কাছে ক্ষমা চাই। এরপর আজ দুপুরে আমি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি। এ সময় শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ওই ছাত্রের মা তানিয়া বেগম তার পায়ের সেন্ডেল খুলে আমাকে পেটায় ও ভাই ফয়সাল খান এসে অতর্কিতভাবে আমাকে কিল ঘুষি দেয় ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। ঘটনা দেখে ভয়ে শিশু শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ছেড়ে পালিয়ে চলে যায়। অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি গিয়ে তাদের অভিভাবকদের বিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসে। বিষয়টি আমি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরে ইউএনওকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানাই এবং আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করি। 

বিদ্যালয়ের সভাপতি অরুণ ভট্টাচার্য বলেন, পূর্বের ঘটনার জের ধরে এ ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। তবে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার পক্ষ থেকে শিক্ষকদের সব ধরণের সহযোগিতা থাকবে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তরা হালদার বলেন, শিক্ষক ছাত্রকে শাসন করেছিলেন। আর এ ঘটনায় ছাত্রের অভিভাবক বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষককে মারধর করেন। ছাত্রকে শাসন করতে গিয়ে মার খেতে হলো শিক্ষককে। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। পরবর্তীতে এ ধরনের কোনো ঘটনা যেন না ঘটে। 

শিক্ষককে পেটানোর কথা অস্বীকার করে ওই ছাত্রের মা তানিয়া বেগম বলেন, আমার ছেলে ও তার দুই সহপাঠী একটি লাঠি নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। এরইমধ্যে তৃতীয় শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের মধ্যে একজনের গায়ে লাঠির খোঁচা লাগে। ওই ছাত্রী লাঠি কেড়ে নিয়ে আমার ছেলেকে পেটায়। একপর্যায় আমার ছেলেও তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। ওই ছাত্রী বিষয়টি শিক্ষক ইমরানকে জানায়। শিক্ষক ইমরান আমার ছেলেকে স্কুলের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। ২০০ বার কান ধরে উঠবস করতে বলেন। ৫১ বার করার পর আমার ছেলে ফ্লোরে পড়ে গেলে তুলে পুনরায় মারধর করেন শিক্ষক ইমরান। পরে খবর পেয়ে আমরা স্কুলে যাই। আহত অবস্থায় আমার ছেলেকে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাই। অবস্থার উন্নতি না হলে পরে কাশিয়ানী হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। এখনও ঘুমের মধ্যে ভয়ে আঁতকে উঠে আমার ছেলে। আমি ওই শিক্ষকের বিচার চাই। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানানো হয়েছে। তিনি বিষয়টি সমঝোতা ও উপযুক্ত বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। শিক্ষকদের শান্ত থাকতে বলা হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by