দেশজুড়ে

খুঁড়িয়ে চলছে নোবিপ্রবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগ!

  প্রতিনিধি ৮ মে ২০২৪ , ২:৫৫:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

খুঁড়িয়ে চলছে নোবিপ্রবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগ!

ধীরগতিতে চলছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(নোবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম। ঠিকমতো ক্লাস-পরীক্ষা না নেওয়াসহ নানামুখী সঙ্কট তৈরি হয়েছে বিভাগটিতে। ফলে শিক্ষা জীবন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। 

বিভাগটির শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিভাগীয় প্রধানের স্বেচ্ছাচারিতা আর সময়মত ক্লাস ও পরীক্ষা না নেয়ার কারণে এমন পরিস্তিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিভাগের অন্য শিক্ষকরা তাড়াতাড়ি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ ও প্রস্তুত থাকলেও বিভাগীয় প্রধান ড. রোকনুজ্জামান সিদ্দিকী এই মুহূর্তে পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত নন বলে বিভিন্নসময় বিভিন্নরকম সঙ্কট তৈরী করেছেন। সব শিক্ষকদের ক্লাস শেষ হয়ে গেলেও তাঁর ক্লাস শেষ হয় না বলছেন তারা। তবে বিভাগীয় প্রধান ড. রোকনুজ্জামান সিদ্দিকী বলছেন, শিক্ষক সঙ্কটের কারণেই বিভাগ চালাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। সঙ্কটের কারণে তিনি নিজেই একসঙ্গে একাধিক ব্যাচের একাধিক কোর্সের ক্লাস নেন। 

বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, বিভাগের সমস্যাকে প্রাধান্য না দিয়ে প্রতিবছর বাহিরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে থাকেন বিভাগীয় প্রধান ড. রোকনুজ্জামান সিদ্দিকী। এমন অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান ড. রোকনুজ্জামান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নোবিপ্রবির  কোলাবোরেশনের একটি দায়িত্বে আছি আমি। এজন্য বিভিন্ন সময় যেতে হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগটির মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসের ১৩ তম ব্যাচের বিভিন্ন বিভাগের বন্ধুদের মাস্টার্স শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু আমরা এখনো মাস্টার্সের একটি পরীক্ষাও দিতে পারিনি। অনার্সের শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা দিয়েছি গত বছরের মে মাসে, আড়াই মাস পর ওই বছরের আগস্টে রেজাল্ট হয়। এরপর মাস্টার্সে ভর্তি করানো হয়। মাস্টার্সে ভর্তির পর প্রায় ৯ মাস কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত আমরা একটি সেমিস্টার পরীক্ষাও দিতে পারিনি। 

ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই আমাদের বিভাগে। আমরা এখন হতাশায় নিমজ্জিত। পরিবার থেকে সবসময় জিজ্ঞেস করা হয় পড়াশোনা কবে শেষ হবে। আমি যে চাকরিতে যোগদান করব তারও উপায় নেই। তিনি বারবার শুরু থেকে বলে আসছেন ক্লাস ছাড়া পরীক্ষা দিতে দিবেন না। প্রথম ব্যাচের যারা চাকরিতে যোগদান করেছে তারাও ভয়ে আছে।

এদিকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বিভাগটিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের এতদিনে স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত পরীক্ষায় বসতে পারেননি তারা। এ শিক্ষাবর্ষের ক্যাম্পাসের প্রায় সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের স্নাতক পরীক্ষা ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে বা শেষ হওয়ার পথে। দ্রুত স্নাতক সম্পন্ন করতে না পারার কারণে বিসিএসসহ কোনো ধরনের চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না ব্যাচটির শিক্ষার্থীরা।  

বিভাগটির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা প্রায় ২ বছরের মত পিছিয়ে আছি। বিভাগের নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা নেই। স্যার নিজের ইচ্ছামত বিভাগ চালাচ্ছেন। কারো কথা তিনি শুনেন না। একবার পরীক্ষার মাঝখানে প্রস্তুতির জন্য ৩-৪দিন করে বন্ধ রাখার জন্য আমরা বলেছিলাম, স্যার সেটি করেননি। পরে সকল ব্যাচ মিলে আন্দোলন করলে তিনি সেটি মেনে নেন। রুটিনের আগে উনাকে আমরা জানিয়েছিলাম শুরুতে তিনি মেনে নিলে আমাদের আন্দোলন করার প্রয়োজন হতনা। 

এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের বিভাগে শিক্ষার্থীদের দুটি আন্দোলন হয়েছে। তিনি এটি নিয়ে বারবার আমাদের দোষারোপ করেন অথচ উনার জন্য দেড় বছর পিছিয়ে গিয়েছি আমরা। এটির কোন জবাবদিহি উনার কাছে নেই। আন্দোলনে অংশ নেয়ায় প্রভাব পড়েছে আমাদের রেজাল্টেও। যে সেমিস্টারে আন্দোলন করেছি এরপরের সেমিস্টারে আমাদের সবার রেজাল্ট খারাপ হয়। ৩ দশমিক ৫০ এর উপর  কাউকে দেয়া হয়নি এবং ৩ পয়েন্টের উপরে দেয়া হয়েছিল মাত্র ৮ জনকে, বাকি সবাই ৩ পয়েন্টের চেয়েও নিচে। তিনি একজন স্বেচ্ছাচারী চেয়ারম্যান বলেন ওই শিক্ষার্থী। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা একটা সেমিস্টার দিয়েছি ৮ মাস হয়ে গেল, এখনও আমরা পরীক্ষায় বসতে পারিনি। 

বিভাগীয় প্রধান ড. রোকনুজ্জামান সিদ্দিকীর ভয়ে এ প্রতিবেদককে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন অভিযোগ করা বিভিন্ন ব্যাচের এসব শিক্ষার্থী। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রোকনুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, আমাদের বিভাগে শিক্ষক সঙ্কট চরমে। সবচেয়ে বড় সমস্যা এটি। আমরা ছয়টি ব্যাচের কার্যক্রম চালাচ্ছি মাত্র পাঁচজন শিক্ষক দিয়ে। এরমধ্যে দুইজন শিক্ষক নতুন যোগদান করেছে। আবার সামনে পিএইচডির জন্য দেশের বাহিরে যাবেন একাধিক শিক্ষক। আমাদের আরেকটি ব্যাচ ভর্তির অপেক্ষায়। আমি নিজে একসঙ্গে বিভিন্ন ব্যাচের একাধিক কোর্সের দায়িত্বে থাকি। ফলে কোর্সগুলো সম্পন্ন করতে একটু দেরি হয়। পরীক্ষা শুরু হলে ছাত্ররা পরীক্ষা পেছাতে আন্দোলন করে এটি আরেকটি সমস্যা। স্বেচ্ছাচারিতা, আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীদের নম্বর কম দেয়ার বিষয়ে নিয়ে জানতে চাইলে বিষয়গুলো অস্বীকার করে তিনি। 

শিক্ষক সঙ্কটের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের বিভাগের শিক্ষক সঙ্কটের বিষয়টি আমি উপাচার্য মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। 

বিভাগটির বিভিন্ন ব্যাচের পরীক্ষা কবে নেয়া হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা এ মাসেই একাধিক ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেব। মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাও আগামী মাসে শুরু হবে।   

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম বলেন, দ্রুত পরীক্ষা শেষ করার জন্য আমি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছি। শিক্ষক সঙ্কট সমাধানের বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি দেখবেন।

প্রসঙ্গত, নোবিপ্রবিতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত এ বিভাগটির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে। এখন পর্যন্ত ছয়টি ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে বিভাগটিতে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by