ঢাকা

গোপালগঞ্জে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ শিক্ষা কর্মকর্তা ও কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে

  প্রতিনিধি ৬ অক্টোবর ২০২১ , ৭:১৫:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

গোপালগঞ্জে মনোজ কান্তি বিশ্বাস (৪৫) নামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউটিইও ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভপতির বিরুদ্ধে।

ওই প্রধান শিক্ষককে গুরুতর আহত অবস্থায় গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত ৩ ও ৪ অক্টোবার (সোমবার ও মঙ্গলবার) পরপর দু’দিন দু’দফায় তাকে পিটিয়ে আহত করা হয় বলে জানাগেছে।

সদর উপজেলার ২৮ নং উরফি বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ন্যক্কারজনক এ ঘটনায় সাধারন শিক্ষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। ওই শিক্ষকের পক্ষে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে, এ ঘটনায় উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউটিইও) গৌতম কুমার রায় ও বিদ্যালয়ের ব্যস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উরফি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহিদুল খান মাহাতাব প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ অস্বীকার ও তার বিরুদ্ধে শিক্ষা কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার পাল্টা অভিযোগ আনেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিল্পী খানম বলেন, প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী গত সোমবার গোপালগঞ্জের একটি ক্লিনিকে কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন। খবর পেয়ে তিনি সেখানে যাচ্ছিলেন। ঠিক ওইদিন বেলা পৌনে ৪ টায় উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন। এখবর পেয়ে প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি বিশ্বাস আবার বিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। এ সময় তিনি তার হাতে থাকা মোবাইল ফোনে লাইভ ভিডিও ধারন করছিলেন। এরপর মুহুর্তের মধ্যে কি ঘটে গেলো তা আমরা বুজতে পারলাম না।

 

তিনি আরো বলেন, পরের দিন সকাল সোয়া ৯ টায় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসলে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মহিদুল ইসলাম খান মাহাতাব সহ তার দুই সহযোগী বিদ্যালয়ে আসেন। এরপর কথাবার্তার এক পর্যায়ে তারা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তিকে তারা ঘার ধাক্কা দিতে দিতে স্কুল থেকে বের করে দেয়। ওই ঘটনা প্রধান শিক্ষক তার মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করলে আরো ২০-২৫ জন লোক নিয়ে এসে প্রধান শিক্ষকে তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং তার মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয় । পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করেন।

 

আহত প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি বিশ্বাস বলেন, আমার স্ত্রী গোপালগঞ্জের একটি ক্লিনিকে একটি কন্যা সন্তান জম্ম দিয়েছেন খবর পেয়ে আমি তাকে দেখার জন্য সেখানে যাচ্ছিলাম। এমন সময় আমার বিদ্যালয়ের সককারী শিক্ষক শিল্পী খানম বিকাল পৌনে ৪টায় মোবাইল ফোনে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র রায় বিদ্যালয় পরির্দশনে এসেছেন বলে আমাকে জানায়। তাৎক্ষনিকভাবে আমি বিদ্যালয়ে ফিরে যাই। তার কাছে গিয়ে তাকে সালাম দিলে তিনি আমাকে লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাই। পরের দিন সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে অফিস কক্ষে বসার পর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মহিদুল ইসলাম খান মাহাতাব সহ আরো দুইজন এসে আমাকে চর-থাপ্পর মারতে থাকে এবং ঘাড় ধরে বের করে দেয়।

 

এরপর আরো ২০-২৫ জন এসে আমাকে মারপিট করে আমার মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়। আমি ভয়ে একটি কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেই। এসময় আমার জীবন বাঁচাতে জেলা প্রাথমিক কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সাহায্য চাইলে কেউ আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। এর আগে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি রায়ের নিকট ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দের ২ লাখ টাকা থেকে উৎকোচ দাবি করেন। আমি সরকারি বরাদ্দের সব টাকা বিদ্যালয়ের কাজে সঠিক ভাবে ব্যয় করতে চেয়ে তাকে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। এতে তিনি আমার উপর ক্ষুদ্ধ হন।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে গেলে তার কক্ষটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পরে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি তা রিসিভ করেনি ।

ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উরফি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম খান মাহাতাব বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা সহকারি কর্মকর্তার সাথে বিবাদের ঘটনা জানার জন্য পরদিন বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক আমাকে চোর বলেন। তার এধরনের আচরণে ক্ষুদ্ধ, তবে তাকে আমি মারপিট করিনি।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহা বলেন, প্রধান শিক্ষককে যদি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মারপিট করে থাকে ওই দিন তাকে কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত ছিলো। আমি জেনেছি প্রধান শিক্ষক শিক্ষা কর্মকর্তাকে মারপিট করেছেন। আমরা ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি ।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদ রাজু আহমেদ লেলিন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন শিক্ষকের ভুল হতে পারে তার জন্য কিভাবে একজন শিক্ষা কর্মকর্তা গায়ে হাত তুলতে পারেন? এটা আমার বোধগম্য নয়। ওই প্রধান শিক্ষক একজন প্রতিবন্ধী ও খর্বাকার আকৃতির মানুষ। আমি নিজে ওই প্রধান শিক্ষকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছি। এ বিষয়ে আজ (বুধবার ) বিকালে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জরুরী সভা আহবান করা হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by