প্রতিনিধি ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৬:২৪:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে দলীয় মনোনয়প্রাপ্ত নৌকার প্রার্থী তিনবারের সাংসদ এম এ লতিফকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তিন শীর্ষ নেতা। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু তিনজনই এ আসনে মনোনয় প্রত্যাশী ছিলেন।
মনোনয়ন না পেয়ে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনকে জয়ী করতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে মহানগরের এ তিন নেতার নির্দেশে দলীয় ৬ কাউন্সিলরও নৌকা প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন তাদের এলাকার ভোটাররা। যেহেতু তিনজনের মধ্যে আ জ ম নাছির সাবেক সিটি মেয়র এবং খোরশেদ আলম প্রশাসক ছিলেন, সেহেতু কাউন্সিলরদের সাথে তাদের নিবিড় একটা সুসম্পর্কও রয়েছে। সেটাকে কাজে লাগিয়ে তারা কাউন্সিলরদেরকেও নৌকা প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে নামাতে সক্ষম হয়েছেন।
অর্থনীতির প্রবেশদ্বারখ্যাত বন্দর-পতেঙ্গা আসনটিতে রয়েছে সমুদ্র বন্দর, বিমান বন্দর, কাস্টমস, ইপিজেড, শিপিং কর্পোরেশন, ড্রাই ডক, ইস্টার্ন রিফাইনারি, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা ওয়েলসহ বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ আসন থেকে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এম এ লতিফ। এবার এই আসনটি ভাগিয়ে নেওয়ার জন্য নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ তিন নেতাসহ ২৮ মনোনয়ন প্রত্যাশী দৌঁড়ঝাপ করলেও শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন জুটে লতিফের ভাগ্যেই। মনোনয়ন প্রত্যাশী ২৮জনের মধ্যে ছিলেন ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবেক ছাত্রনেতা জিয়াউল হক সুমন। মনোনয়ন না পেয়ে অন্যরা সরে দাড়ালেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে থেকে গেছেন জিয়াউল হক সুমন। তাকে বিজয়ী করতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে করে যাচ্ছেন এ তিন নেতাসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক দায়িত্বশীল নেতা।
মাঠ পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহানগর সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কেটলিকে বিজয়ী করতে কাজ করছেন। তাদেরকে বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে দলীয় কোনো বাধা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠে থেকে জনপ্রিয়তা যাছাই করার অনুমতি দিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও দল থেকে বহিষ্কার কিংবা কাজ না করার কোনো নির্দেশনা যেহেতু নাই, সেহেতু তাদের পক্ষাবলম্বন দলীয় সিন্ধান্তের পরিপন্থীও নয়। তাছাড়া মহানগর নেতাদের নির্দেশনা অমান্য করার সুযোগ নেই বলেও দায়িত্বশীল ইউনিট নেতারা দাবি করেছেন।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনের নির্বাচনী সভায় উপস্থিত হয়ে নেতাকর্মীদের নানা নির্দেশনা দিয়ে কর্মপন্থা ঠিক করছেন মহানগরের শীর্ষ নেতারা। তারা জিয়াউল হক সুমনকে তৃণমূল আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাবি করে তাকে বিজয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদেরকে এ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী এম এ লতিফের পক্ষে কোন সভা সমাবেশ বা প্রচার প্রচারণায়ও দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জানার জন্য ফোন দিলে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক সিটি প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে পারবো না, এ ধরণের কোনো বাধ্যবাধকতা নাই। বরিশালের সমাবেশ মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর পাশে স্বতন্ত্র প্রার্থীও মঞ্চে থাকা তারই প্রমাণ। ২০০৮ সালে নৌকা হাইজাক হয়ে গিয়েছিলো, আমরা সেটা পুনরুদ্ধারে কাজ করছি।
মহানগর আওয়ামী লীগের অপর সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু বলেন, কেন্দ্র থেকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে বিপক্ষে কাজ করার কোন বাধা নেই। যে যার পক্ষে ইচ্ছে কাজ করতে পারবে।
পক্ষান্তরে এম এ লতিফ এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশি কারও বুঝার সুযোগ নেই। তিনি বুঝে শুনে যোগ্যদের হাতেই নৌকা দিয়েছেন। এখানে নৌকার বিরোধীতা মানে, প্রধানমন্ত্রীর বিরোধীতা। স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে গিয়ে যারা নৌকার বিরোধীতা করছেন, তারা দলীয় সিন্ধান্তকে অমান্য করছেন।