চট্টগ্রাম

চন্দনাইশে কৃষিজমিতে সেচ দেওয়ার জন্য দেদারসে উত্তোলন হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি

  প্রতিনিধি ৯ মার্চ ২০২৪ , ৫:৪৫:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ

চন্দনাইশে কৃষিজমিতে সেচ দেওয়ার জন্য দেদারসে উত্তোলন হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি

ভূগর্ভস্থ পানির তুলনায় ভূ-উপরিভাগের পানি সেচের জন্য অধিক উপযোগী হলেও শুষ্ক মৌসুমে ভূউপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা বা পর্যাপ্ততা না থাকায় কৃষি জমিতে সেচ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দুই পৌরসভা ও আট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমিতে সেচ কাজ পরিচালনার জন্য গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে পানি উত্তোলন হচ্ছে। অতি মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির ক্রমাগত নিম্নগামিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে একদিকে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য, অপরদিকে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের সংমিশ্রণ বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মাটির জৈব পদার্থ ও পুষ্টিমান কমে যাচ্ছে এবং মাটি হারাচ্ছে তার গুণগত মান।

বেপরোয়া ভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ছে। আগে যেখানে মাটির ২০ ফুট নিচে গিয়ে পানি পাওয়া যেত, বর্তমানে সেখানে ৫শ থেকে ৬শ ফুট গভীরে যেতে হচ্ছে। কিছু এলাকায় অনেক গভীরে গিয়েও পানীয় উপযোগী পানি মিলছে না। ফলে সুপেয় পানি নিয়ে মানুষ চরম সংকটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যাপক ব্যবহার প্রতিরোধে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য নলকূপের লাইসেন্স নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধিকাংশ কৃষক তা জানেন না।

কৃষি কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১৮ এর ৫ ধারায় উল্লেখ আছে, “উপজেলা পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স ব্যতীত কৃষি কাজের জন্য কোন স্থানে নলকূপ স্থাপন করা যাইবে না।” ১০ ধারায় উল্লেখ আছে, “কোন ব্যক্তি এই আইনের কোন বিধান লঙ্ঘন করিলে অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩০ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।”সাম্প্রতিককালে গ্রামাঞ্চলে ব্যাপকহারে পাকা দালান নির্মাণের কারণে বৃষ্টির পানি মাটির নিচে প্রবেশে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সরাসরি খাল-নদীতে চলে যাচ্ছে পানি। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অধিকাংশ খাল শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য থাকে। চন্দনাইশ উপজেলায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্ব দিকের অংশে দোহাজারী পৌরসভা আংশিক, কাঞ্চনাবাদ, জোয়ারা, হাসিমপুর ও ধোপাছড়ি ইউনিয়নে তুলনামূলক উঁচু এবং পাহাড়ি এলাকায় কৃষকেরা জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য পাহাড়ি ঝর্ণার পানির উপর নির্ভরশীল। শুষ্ক মৌসুমে ধোপাছড়ি খাল, লালুটিয়া খাল, সাতছড়ি খাল ও সোনাইছড়ি খালে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করতে হয় কৃষকদের।

অপরদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পশ্চিম দিকের অংশে চন্দনাইশ পৌরসভা, দোহাজারী পৌরসভা আংশিক, বৈলতলী, বরমা ও বরকল ইউনিয়ন তুলনামূলক নিচু এবং সমতল হওয়ায় কৃষকেরা সাঙ্গু নদীর জোয়ারভাটার পানির ওপর নির্ভরশীল। গত বছর এসব এলাকার খালগুলোতে জোয়ারভাটায় লবণাক্ত পানি প্রবেশ করায় ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে।কৃষিজমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানো, মাটির গুণগত মান রক্ষা, ফসলের উৎপাদন বাড়ানো ও উৎপাদন ব্যয় কমাতে ভূউপরিস্থ পানির ব্যবহারে জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

এজন্য বিদ্যমান খালগুলো পুনঃখনন ও সংস্কারের মাধ্যমে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে সেচ কাজে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় সুদৃষ্টি কামনা করছেন তাঁরা। এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি অফিসার এবং উপজেলা কৃষি ও সেচ বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব কৃষিবিদ মো. আজাদ হোসেন বলেন, “আধুনিক সেচনালা তৈরিসহ দক্ষ সেচ ব্যবস্থাপনায় পানির অপব্যবহার ও অপচয় রোধ করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও সেচ খরচ হ্রাসের নিমিত্তে বিএডিসি’র সাথে নিয়মিত আমাদের আলোচনা হয়।

সেচ কাজে ভূউপরিস্থ পানি সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও যথাযথ ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে কৃষকদেরকে সচেতন করার জন্য আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি।”এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) দোহাজারী জোনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আজমানুর রহমান বলেন, “চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ভূউপরিস্থ সেচ প্রকল্পের আওতায় আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি।

দরপত্র আহ্বান করে চলতি বছরেই কাজ শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি। প্রকল্পের আওতায় চন্দনাইশ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আধুনিক সেচ নালা নির্মাণ, সোলার সেচ, খাল পুনঃখনন সম্পন্ন হলে কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমে যাবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে প্রকল্প এলাকায় যে সকল কৃষকের জমি আছে তারা এর সুফল পাবে, যার ফলে উৎপাদন খরচও কমে যাবে।”

আরও খবর

Sponsered content

Powered by