চট্টগ্রাম

থানচির নকতৌহা পাড়ায় ক্যক ছুং ঝিরিতে মহসিনের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প

  প্রতিনিধি ২৪ জুলাই ২০২৩ , ৮:৩৯:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ

মোঃ শহীদুল ইসলাম,বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি :

পানির স্রোতে জ্বলবে বিদ্যুৎ,আলোয় আলোকিত হবে দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম।এমনি এক স্বপ্ন নিয়ে আবিষ্কারের নেষায় মহসিন ছুটে গেছে থানচি সদরের দুর্গম গ্রাম নকতৌহা পাড়ায়।

পার্বত্য বান্দরবানের দুর্গম থানচি উপজেলা,বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ছোয়া পড়েছে এই দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের জীবনধারায়।এখন এই জনপদের অনেক দুর্গম এলাকাও সোলার হোম সিস্টেম এর আলোয় আলোকিত হয়েছ।তবে রক্ষণাবেক্ষণের দিক থেকে এক বছর যেতে না যেতেই অনেকের সোলার মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে।

বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদর হতে আধা কিলোমিটার পিচের রাস্তা শেষ করে পায়ে হাটা ৪৫ মিনিটের পাহাড়ি ব্রিক সলিং এর রাস্তা শেষ হয়ে পৌছানো যাবে দুর্গম নকতৌহা পাড়ায়।

এখানে বসবাসকারী ৪৫টি পরিবারের জনসাধারণের সংখ্যা প্রায় ৫০০ জনের মতো।

কোন প্রকার জ্বালানির ব্যবহার ছাড়াই মেশিন চলবে। একবার মেশিন স্থাপনের পর চলবে ২০ বছরেরো অধিক। বাংলাদেশে প্রথম আবিষ্কার লো-আরপিএম-অলটারনেটর।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ১ বছর আগে নিজের ব্যক্তি উদ্যোগে নিজের আবিস্কার প্রাথমিক ভাবে পরিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য থানচি ৩নং সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাংসার ম্রো এর পরামর্শে দুর্গম নকতৌহা পাড়ার প্রাচিন ক্যক ছুং ঝিরি এলাকার একটি জলপ্রপাত ঝর্ণায় কাজ শুরু করে মোঃ মহসিন।নিজের অর্থ ব্যয় করে অতি কস্টসাধ্য দুর্গম এলাকায় প্লান্ট স্থাপনের মেশিনারি যন্ত্রপাতি ও পানির বাধ নির্মাণের জন্য কনস্ট্রাকশন সামগ্রী নিয়ে যান।স্থানীয়দের সহযোগিতা পাওয়া প্রথমে সহজ না হলেও পরে আবিস্কারের উপকারীতা বুঝতে পেরে পাড়া কারবারি সহ স্থানীয়রা বৈঠক করে সকলকে এর সুফলতা বোঝাতে সক্ষম হয় পরে এগিয়ে আসে মহসিনের এই আবিষ্কারকে বাস্তবে রূপ দিতে সার্বিক সহযোগিতায়।

চট্টগ্রামের বাসিন্দা মোঃ মহসিন, পেশায় একজন মেশিনারি টেকনিশিয়ান,কাজের ফাকে ফাকে নিজের মনে ইচ্ছে হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাহাড়ে বসবাসকারী জনসাধারণের ঘরে ঘরে কম খরচে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়া।তার এই ইচ্ছে থেকেই তিনি গবেষণা করে তৈরি করেন লো-আরপিএম-অলটারনেটর।এই মেশিন জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কম শক্তির ব্যবহার করে কিভাবে প্রবাহমান পানি পাইপ লাইনের মাধ্যমে ওয়াটার হুইলে প্রবেশের পর লো-আরপিএম-অলটারনেটর মেশিনের মাধ্যমে ওয়াটার হুইল ঘুর্ননের পর বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

এই অল্টারনেটর মেশিনের মাধ্যমেই মূলত ওয়াটার হুইল টি ধির গতিতে ঘুরার পরেও তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় এবং সেই বিদ্যুৎ বাসস্থানে টিভি,ফ্রিজ,ফ্যান চালানোর পাশাপাশি কৃষি কাজে ব্যবহৃত ধান মাড়াই মেশিন চালানো যাবে।

মহসিন বলেন তার এই আবিষ্কার পরীক্ষামূলকভাবে দেখার জন্য থানচি ৩নং সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাংসার ম্রো এর সহযোগিতা কামনা করেন,এবং সাবেক চেয়ারম্যানের পরামর্শে নকতৌহা পাড়া ক্যক ছুং ঝিরিতে তার আবিস্কার এর পরীক্ষামূলকভাবে কার্যক্রমে তিনি সফল হোন।

সরজমিনে ৩নং থানচি সদর উপজেলার ১নং ওয়ার্ড নকতৌহা পাড়ায় মহসিনের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দেখতে গিয়ে দেখে যায় পাহাড়ের মাঝে প্রবাহমান ঝিরিতে দুই ফুট উচ্চতায় তিনি একটি বাদ দিয়েছেন ঝিরির পানি আটকে রাখার জন্য।ঝিরির পানি বাধে এসে জমা হতে থাকে সেই পানি একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় জমা হওয়ার পর তা পাইপ লাইনে মাধ্যমে অপর দিক দিয়ে ঘুরে এসে পড়ে ওয়াটার হুইলে,ওয়াটার হুইল ঘোরার সাথে সাথে তা ঘুরাতে শুরু করে লো আরপিএম অল্টারনেটর কে ঠিক তখনে জ্বলে উঠলো আলো।আলো জ্বলার সাথে সাথে মহসিন ও পাড়াবাসিরদের আনন্দ ও আমাদেরো বিশ্বাস হলো এই প্রবাহমান ঝিরির পানি আটকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আরো ভালো পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারবেন মহসিন।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রেমন ত্রিপুরা বলেন মহসিনের এই জলবিদ্যুৎ আবিস্কার আমাদের গ্রামের মানুষের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ,আমরা পাড়াবাসী সকলেই এখন তার কাজটাকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করছি,কারন তিনি নিজের টাকা খরচ করে এই দুর্গম এলাকার মানুষের জন্য কস্ট করছেন। তার সাথে একমত স্থানীয় বাসিন্দা ক্লেমেন ত্রিপুরা,সত্য রাম ত্রিপুরা।

থানচি সদর ইউপির ১নং ওয়ার্ড সদস্য ডেবিট ত্রিপুরা বলেন আমরা আমরা আনন্দিত যে মহসিন ভাই তার আবিস্কারে সার্থক হয়েছে,যদি সরকারি ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা করা হয় তাহলে এই গ্রামে বসবাসকারী স্থানীয় জনসাধারণ এর সুফল পাবে।

থানচি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অং প্রু ম্রো বলেন মহসিনের এই জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের এই উদ্যোগে আমি ব্যক্তগতভাবে তাকে সহযোগিতা করেছি,আমি আশাবাদী তার এই আবিস্কারে সরকারি ভাবে সহযোগীতা করা হলে দুর্গম নকতৌহা পাড়াবাসী অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখবে।

ব্যক্তি উদ্যোগে মহসিনের জলবিদ্যুতের প্রকল্পের সফতার বিষয়ে কথা হয় মহসিনের সাথে,তিনি বলেন আমার কোন স্বার্থ নেই এখানে,আমি চাই দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণ বিদ্যুতের সুফল ভোগ করুক,এই পর্যন্ত আমি নিজের খরচেই সব করেছি।পাড়ায় বসবাসকারী ৪৫টি পরিবারের সকলে এখান থেকে ১২ মাস নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে।এই মেশিন স্থাপনে ব্যয় হবে ৩০-৪০ লক্ষ টাকা,যা একবার স্থাপন করলে শুধু মাত্র মেশিন পরিচালনার জন্য একজন রাখলে, আগামী ২০ বছর অনায়াসে ব্যবহার করতে পারবে কোন রূপ জ্বালানীর ব্যবহার ছাড়াই।

তিনি জানান বর্তমানে যদি তার এই প্রকল্পটি সঠিক ইন্জিনিয়ার দিয়ে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ,ঝিরির পানি প্রবাহের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণে আরো পরিক্ষা করে ঝিরির বাধের ডিজাইন করে জলবিদ্যুৎ এর মেশিন বসানো হয় তাহলে আরো সফলতা আসবে।শেষ কথায় তিনি জানান তিনি শতভাগ আশাবাদী তার এই আবিস্কৃত প্রকল্পটি দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের জন্য একটি মূখ্য আবিষ্কার।পরবর্তীতে সরকার চাইলে যা বানিজ্যিকভাবেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে অবদান রাখতে পারবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by