রংপুর

দিনাজপুরে বাড়ছে আম বাগান

  প্রতিনিধি ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৮:১১:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

সাহেব আলী, দিনাজপুর :

দিনাজপুর জেলায় আমের মুকুলে মুকুলে ছেঁয়ে গেছে আম গাছগুলো। সবুজে ভরা বাগান এখন পরিপূর্ণ মুকুলের সোনালী আভায়। সেই সাথে বসন্তের নানান ফুলের সাথে সুবাস ছড়াচ্ছে আমের মুকুলের মিষ্টি গন্ধ।

 

দিনাজপুর জেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করলে এবার আমের ভালো ফলন হবে। আর করোনা পরিস্থিতির জন্য গত বছর তেমন দাম না পেলেও এবার পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন বাগান মালিকরা। এ জন্য বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা।

ধানের জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর জেলায় আবাদি জমির পরিমান ৬ লাখ হেক্টরেরও বেশি। আর এসব জমির মধ্যে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে ক্রমেই বাড়ছে আম ও লিচুর বাগান। অন্যান্য ফসলের চেয়ে আম ও লিচু বেশ লাভবান হওয়ায় দিনে দিনে বাড়ছে এসব ফলের বাগান। ফলে ধানের পাশাপাশি আম ও লিচুর জন্যও বিখ্যাত হয়ে উঠছে ধানের এই জেলা।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে ইতিমধ্যেই দিনাজপুর জেলার ৫ হাজার হেক্টর জমিতে গড়ে উঠেছে আমের বাগান। শীত কমে আসার সাথে সাথে এসব আমবাগানে সবুজ পাতা ভেদ করে উঁকি দিতে শুরু করেছে আমের মুকুল। বসন্তের শুরু থেকেই আমের মুকলে ছেয়ে গেছে গাছগুলো। সবুজ বাগান এখন পরিণত হয়েছে মুকুলের সোনালী রঙের আভায়।

 

আর এবার গাছে প্রচুর মুকুল দেখা দেয়ায় আমের বাগান মালিকরাও আমকে ঘিরে বুনছেন নতুন স্বপ্ন। ভালো ফলন ও ভালো দামের আশায় বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা।

গতকাল দিনাজপুর সদর উপজেলার কসবা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত রুবেল ইসলাম নামে এক বাগান ব্যবসায়ী।

তিনি জানান, ৫ বছরের জন্য একটি আমের বাগান লিজ নিয়েছেন তিনি। গতবছর করোনা পরিস্থিতির জন্য আশানুরূপ দাম পাননি। এবার গাছে যে পরিমান মুকুল এসেছে, তাতে ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি আশা করছেন এবার করোনা পরিস্থিতি কিছুটা কেটে উঠায় আমের ভালো দাম পাওয়ার।

সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের বাগান মালিক রেজাউল ইসলাম জানান, এবার আম গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। গুটি না আসা পর্যন্ত এই মুকুল ধরে রাখার জন্য বাগানে নিরলস পরিশ্রম করছেন তিনি। তিনি বলেন, গাছের গোড়ায় ঠিকমত সেচ দিলে এই মুকুল গুটিতে পরিণত হবে। এতে ভালো ফলন পাবেন তিনি। এ জন্য বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত তিনি।

দিনাজপুরের অন্যান্য উপজেলাতেও আমগাছে প্রচুর মুকুল দেখা দেয়ায় বাগান মালিকরা ব্যস্ত রয়েছেন। খানসামা উপজেলার পাকেরহাট, পাঁচপীর ও মাদারপীর গ্রামের আম গাছে প্রচুর মুকুলের সমারোহ এবং কোথাও কোথাও আম বাগানে সাথী ফসল চাষ করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা ভালোই লাভবান হচ্ছে এবং আম চাষে উৎসাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পাকেরহাট গ্রামের আম চাষী মমিনুল ইসলাম বলেন, এবছর আম গাছ মুকুলে ছেয়ে গেছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে বিগত সময়ের চেয়ে এবছর ফলন ভালো হবে।দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল জানান, এখন আর আমের ‘অনইয়ার’ বা ‘অফইয়ার’ নেই।

আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ফলে মান্ধাত্যা আমলের সেই কথা উঠে গেছে। আমগাছে এবছর প্রচুর মুকল আসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনুকুল আবহাওয়া থাকলে এবার দিনাজপুর জেলায় আমের বাম্পার ফলন হবে।

দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আমের বাগান রয়েছে এবং প্রাকৃতিক কোন প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি না হলে এই জেলায় এবার ১ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশী আম উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জানান, ফলন ভালো হওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

তৌহিদুল ইকবাল জানান, গতবছর ভরা মৌসুমে করোনা পরিস্থিতির জন্য লক ডাউন ছিলো। এ কারণে পরিবহন ব্যবস্থার অভাবে আশানুরূপ দাম পায়নি বাগান মালিকরা। তবে এবার করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এবং সবকিছু চালু হয়ে যাওয়ায় বাগান মালিকরা ভালো দাম পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

 

 

 

আরও খবর

Sponsered content