প্রতিনিধি ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ , ৩:৪০:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের আবাসনের জন্য হাশিমপুর ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করে সরকার। পাহাড় বেষ্টিত দুর্গম এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ হলেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত নতুন ও পুরনো মিলিয়ে ১৫৫টি ঘরের বাসিন্দাদের সকলেই দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষ। অভাব-অনটনের সংসার চালাতে গিয়ে জীবিকা অন্বেষণে প্রতিদিনই জীবন যুদ্ধে লড়তে তাদের। শ্রমজীবী এই মানুষগুলো তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ আর জীবন- জীবিকা নিয়ে ভাবে। তাদের এই ভাবনার শেষ নেই। নিজেরা উচ্চ শিক্ষিত না হলেও সন্তানদের দক্ষ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই এমন প্রয়োজনীয়তা খুব ভালো করে বুঝেন তারা।
শ্রমজীবী এই মানুষদের চিন্তার অবসান ঘটাতে আগ্রহী হন হাশিমপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভান্ডারিপাড়া এলাকার মোহাম্মদ জাগির হোসাইন নামে একজন শিক্ষানুরাগী। নিজের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত পরিবারগুলোর সন্তানদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর পাশাপাশি নতুন পাড়া ও বাহুলী পাড়ার হতদরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে গ্রামীণ জনপদের অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত সন্তানদের শিক্ষা অর্জনের সুযোগ করে দিতে পুরনো আদর্শগ্রাম জামে মসজিদের পাশে ২০২৩ সালে নিজের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিণ হাশিমপুর গুলমেহের সুন্নিয়া মাদরাসা।
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক শিশু পড়ালেখা করছে। তাদের কলরবে মুখরিত চারদিক। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক আদর্শগ্রাম জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শফিকুল ইসলাম জানান, ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্লে, নার্সারি, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে শতাধিক শিশু পড়ালেখা করছে এখানে। এলাকাবাসী ও মসজিদ কমিটির অনুমতি নিয়ে আদর্শগ্রাম জামে মসজিদের পাশে প্রাথমিক পর্যায়ে অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক কার্যক্রম চললেও শীঘ্রই স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এজন্য ৩৩ শতক জমিও কিনেছেন এটির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জাগির হোসাইন। প্রতিজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতিমাসে স্বল্প পরিমানে বেতন নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠাতার আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে পাঁচ জন শিক্ষকের বেতন পরিশোধ করা হয়। অনগ্রসর এই এলাকায় এটি প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র পরিবারের প্রতিটি সন্তান যেন ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। সকাল ৮ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত ক্লাস চলে। নুরানি বোর্ডের সিলেবাস অনুসরণ করে আরবী, বাংলা, গনিত, ইংরেজি, কুরআন মাজিদ, হাদিস শরিফ ও দোয়া-দরুদ শেখানোর পাশাপাশি হাতের লেখা সুন্দর করণ শেখানো হয় ছাত্রছাত্রীদের।
এবিষয়ে মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জাগির হোসাইন বলেন, “শিক্ষা শিশুর মৌলিক অধিকার গুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু যে এলাকায় শিশুর শিক্ষার জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেই সেখানে শিক্ষার আলো কিভাবে ছড়াবে? হাশিমপুর ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের মাঝুর দোকান পুরনো আদর্শগ্রাম এলাকা থেকে মসজিদ মার্কেট এলাকায় অবস্থিত ‘হাশিমপুর জাতীয় তরুণ সংঘ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ অনেক দূরে হওয়ায় স্কুলবিমুখ হয়ে আছে অনেক শিশু। এর মধ্য থেকে কয়েকজন ওই স্কুলে ভর্তি হলেও ভাঙাচোরা রাস্তার কারনে তারাও নিয়মিত স্কুলে যায় না। বাড়িতে অলস সময় কাটায়। প্রতিদিন প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয় শিশুদের। হাশিমপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের শিশুদের পাশাপাশি নতুনপাড়া ও বাহুলী পাড়ার হতদরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে আমার মায়ের নামে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। পর্যায়ক্রমে এটি দাখিলে উন্নীত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।” আগামী ১১ ফেব্রুয়ারী এই মাদ্রাসার বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত সভায় অংশগ্রহণ করে স্ব স্ব অবস্থান থেকে গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখতে সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জাগির হোসাইন।