বাংলাদেশ

‘নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে’

  প্রতিনিধি ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৫:০০:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

বিদায়ী নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে? কথাটা রূপকার্থে বলা হলেও এটাই সত্য। 

তিনি বলেন, নির্বাচনের নামে সারা দেশে এমন অরাজকতা কখনও কাঙ্খিত ছিল না। তৃণমূল পর্যায়ে এই নির্বাচন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। অন্যদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়া নির্বাচন বলা যায় কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

তিনি আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সর্বত্র জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অনুপস্থিত। এতে বিশেষভাবে টাকার খেলাই প্রতিভাত হয়। রাজনীতি ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের করতলগত হয়ে যাচ্ছে।

আজ সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদের শেষ দিনে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে অনুষ্ঠিত এক আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন মাহবুব তালুকদার।

এই ব্রিফিংয়ে মাহবুব তালুকদার প্রশ্ন রাখেন, আইনপ্রণেতারা ভবিষ্যতে আইন-ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন না তো? অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাধাগুলো দূর করতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য সংবিধান ও বিধিবিধানের পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।

‘সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আমার কথা এটাই আমার সর্বশেষ প্রেস ব্রিফিং’ শিরোনামে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, একজন সাংবাদিক মানবাধিকার সম্পর্কে অভিমত জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে কথা বলা অমূলক। মানবাধিকার নেই, মানবিক মর্যাদা নেই। গণতন্ত্র না থাকলে এসব থাকে না। ভোটাধিকার ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

তিনি বলেন, বিশ্বে সম্মানজনক রাষ্ট্র হিসেবে আসীন হতে হলে গণতন্ত্রের শর্তসমূহ অবশ্যই পূরণ করতে হবে। গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে এর উৎপত্তি। বর্তমান অবস্থায় উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আইন প্রণেতারা আইন প্রণয়নের চেয়ে উন্নয়নেই বেশি আগ্রহী। কিন্তু উন্নয়ন কখনো গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থা নয়।

ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতা নিয়েও কথা বলেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, বিদায়কালে আত্মবিশ্লেষণের তাগিদে বলি, নির্বাচন কমিশনের বড় দুর্বলতা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, জালিয়াতি ইত্যাদি সম্পর্কে ভূক্তভোগীরা যেসব অভিযোগ করেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত বিরল। লিখিতভাবে যে সব অভিযোগ পাঠানো হয়, তারও যথাযথ নিষ্পত্তি হয় না। অধিকাংশ অভিযোগই আমলে না নিয়ে নথিভূক্ত করা হয় বা অনেক ক্ষেত্রে নথিতেও তার ঠাঁই হয় না।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মাহবুব তালুকদার ‘বিএনপির মনোনীত’ হিসেবেও দেখে এসেছেন। সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তিনি বিএনপির ভাষা বোঝেন না। তাদের ভাষায় কথা বলেন না। তবে নীরব জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র হয়ে সবসময় কথা বলেন।

সাংবাদিকদের মিস করবেন কি না এমন প্রশ্নে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, আমি অবশ্যই আপনাদের মিস করব। আপনারাও কোনোদিন আমাকে ভুলবেন না।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by