প্রতিনিধি ২ এপ্রিল ২০২৪ , ৭:১৩:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে একে একে একাধিক এয়ারলাইন্স তাদের সেবা গুটিয়ে নেয়ার ফলে শুরু হয়েছে ভাড়া নৈরাজ্য। বর্তমানে মাত্র তিনটি বিদেশি এবং একটি সরকারি এয়ারলাইন্স চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে তাদের কার্যক্রম চালু রাখায় এ বিমানবন্দর দিয়ে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া এমনটাই দাবি যাত্রীদের।
দেশের রেমিটেন্স যোদ্ধাখ্যাত প্রবাসী তথা মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানকারী চাঁটগাইয়ারা এ বিমানবন্দর ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং সেটা তাদের জন্য সুবিধাজনকও। কিন্তু অত্যধিক ভাড়ার কারণে অনেকে জরুরি প্রয়োজনে কিংবা উৎসব পার্বনেও প্রবাসীরা দেশে আসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে মাত্র তিনটি মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক বিদেশি সংস্থা এবং সরকারি সংস্থা হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক রুটে সেবা চালু রেখেছে। সেবাদানকারী বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো হলো এয়ার এরাবিয়া, ফ্লাই দুবাই এবং সালাম এয়ার।
কিন্তু চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর যাত্রী থাকার পরও শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৩/১৪টি কোম্পানি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে তাদের সেবা গুটিয়ে নিয়েছে। কেবল তিন মাসের ব্যবধানে ওমান এয়ার এবং জাজিরা এয়ারের মতো দুটি জনপ্রিয় ও ব্যবসা সফল কোম্পানি তাদের সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় ফ্লাইট কম থাকার সুযোগে দ্বিগুণ ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও তাদের এজেন্টরা।
ভাড়া পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওমান এয়ার চলে যাওয়ার পর ভাড়া হঠাৎ করেই বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে রমজানে যাত্রী কম থাকায় কিছুটা ভাড়া কমলেও ঈদকে সামনে রেখে তা আবারও বাড়ার শঙ্কায় যাত্রী ও ট্রাভেল ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা। ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (এটাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ওয়ান স্টার ট্রাভেল এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. ওসমান গণি বলেন, ওমান এয়ার চলে যাওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের রুটে ভাড়া কিছুটা বেড়েছিল ঠিক আছে, কিন্তু বর্তমানে রমজানে তা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
তবে ভাড়া বাড়ানো কমানোর সাথে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ ও কিছু কিছু ট্রাভেল এজেন্টের কারসাজি রয়েছে। সে কারণে চট্টগ্রামে ভাড়া নিয়ে এ বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হয়। ন্যাশনাল ক্যারিয়ারের ভাড়া বাড়লে পাশাপাশি বিদেশি বা বেসরকারি কোম্পানিগুলো সে সুযোগে ভাড় বাড়িয়ে নেন। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (এটাব) কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক সদস্য, এস এম ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস এর স্বত্বাধিকারী সৈয়দ মাসুদ হোসাইন বলেন, ভাড়া বাড়তির যে অভিযোগ সেটা সত্যি। কিন্তু বর্তমানে রমজানে যাত্রী কম থাকায় ভাড়া কিছুটা কম আছে।
তবে ঈদকে সামনে রেখে সেটা কতটুকু ঠিক থাকে সেটা দেখার বিষয়। উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ওমান এয়ার তাদের সেবা গুটিয়ে নেয়। ওইদিন ২৪০জন যাত্রী নিয়ে তাদের শেষ ফ্লাইটটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। এর আগে গত বছরের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট গুটিয়ে নেয় ভারতভিত্তিক স্পাইস জেট এবং কুয়েতভিত্তিক এয়ারলাইন্স জাজিরা এয়ারওয়েজ । এ নিয়ে মাত্র চার মাসের ব্যবধানে ওমান এয়ারসহ চট্টগ্রাম থেকে তিনটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিল।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হিসাবে চালু হলে অনেক অনেক বিদেশি এয়ার লাইন্স চট্টগ্রাম বিমান বন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করে। চালু থাকা যে সব বিদেশি ফ্লাইট বন্ধ হয়েছে, সেগুলো হলো থাই এয়ার, থাই স্মাইল এয়ার, কুয়েত এয়ার, ফুকেট এয়ার, মালিন্দো এয়ার, রোটানা এয়ার, হিমালয়ান এয়ার, রাস আল কাইমা (আরএকে) এয়ার, টাইগার এয়ারওয়েজ, সিল্ক এয়ার, বাহরাইন এয়ার।
সিভিল এভিয়েশন অথরেটি জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে এই এয়ারলাইন্সগুলো স্বল্প সময় তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। ব্যবসায়িক কারণেই তারা চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সেবা সংক্রান্ত কোনো ত্রুটি বা দুর্বলতার কারণে এসব কোম্পানিগুলো তাদের সেবা বন্ধ করেছে এমন নয়। এটা তাদের নিজস্ব ব্যাবসায়িক পলিসির অংশ।