প্রতিনিধি ২৭ আগস্ট ২০২৪ , ৬:০১:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
কয়েকদিনের অব্যাহত ভারীবর্ষন ও ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ভেসে গেছে দক্ষিন চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রাম জেলার অসংখ্য মাছ চাষের জলাশয়। এতে মৎস্যখাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৯০ কোটি টাকারও অধিক। সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ।
তিনি জানান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্যচাষি এবং এই খাতে জড়িত ব্যক্তিরা। তিনি আরও জানান, গতবছরও (২০২৩) আগস্টের ভারী বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে বন্যায় চট্টগ্রাম জেলা জুড়ে মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছিলো।
ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গনমাধ্যমকর্মীকে বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের মীরাসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, সীতাকুন্ডসহ বিভিন্ন উপজেলার মৎস্যচাষের পুকুর, দিঘি ও হ্যাচারির মাছ ভেসে গেছে। চট্টগামে ৫ হাজার ৫৪১ হেক্টর জমির ১৬ হাজার ৮৬৪টি মাছ চাষের পুকুর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে ১৬ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এছাড়াও ১৪ লাখ বিভিন্ন মাছের পোনা এবং ২ লাখ চিংড়ি পোনা ভেসে গেছে এবং অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার।’
গত কয়েকদিনের বন্যার পানিতে জেলার ১৫টি উপজেলায় ১৬২টি পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পাঁচ হাজার ৫৪১ দশমিক ৬ হেক্টরের ১৬ হাজার ৮৬৪টি পুকুর দিঘী ও মাছের খাবার এবং বাঁশখালীর ১২ হেক্টও মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘বন্যায় মীরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট (সেচ প্রকল্প) ভেসে গেছে। চট্টগ্রামের অর্ধেকের বেশি মাছের চাহিদা এ প্রজেক্ট থেকে পূরণ করা হয়। এ প্রজেক্টের ৬ হাজার একর জমির জলাশয়ের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। তা ছাড়া তাছাড়া মৎস্যক্ষেত্র হালদা নদীর বড় আকারের রুই জাতীয় মাছগুলো বিভিন্ন জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য প্রকল্প হিসেবে পরিচিত মীরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট। এ প্রজেক্টের চাষী ইছাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা কামরুজ্জামান দুলাল গনমাধ্যমকে জানান, ‘এখানে ছোট-বড় মিলে সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তি মৎস্যচাষের সঙ্গে জড়িত। সব মাছ বন্যায় ভেসে গেছে। আমার ১০৭ একরের মতো মাছের প্রকল্প ছিল। এতে আমার বিনিয়োগ ছিল ১১ কোটি টাকা। বন্যায় আমার সবই শেষ হয়ে গেছে। এখানে ২০০ এবং ৩০০ একরে মৎস্যপ্রকল্প আছে এমন চাষীও আছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আমরা চাষিরা একটি ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করেছি। এর মধ্যে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতির তথ্য উঠে এসেছে। ৮ বছর ধরে আমি মাছচাষের সঙ্গে জড়িত। এত বড় ক্ষতির মুখে কখনও পড়িনি।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগামের মীরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, সীতাকুন্ডসহ বিভিন্ন উপজেলার মৎস্যচাষের পুকুর, দিঘি ও হ্যাচারির মাছ ভেসে গেছে। শুধু মীরসরাই উপজেলায় মৎস্যখাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৪২ কোটি টাকা। মীরসরাইয়ের পর বেশি ক্ষতি হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলায়। এ উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নের পুকুর, দিঘি ও মৎস্য প্রজেক্ট বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ১০ লাখ টাকা। একই অবস্থা হয়েছে হাটহাজারী উপজেলায়ও। এ উপজেলায় বানের পানিতে ভেসে গেছে ১২ কোটি টাকার মাছ। অন্যান্য উপজেলাতেও বন্যায় মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ‘ফটিকছড়ির নাজিরহাট এলাকায় হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।