আবু তাহের ১৫ জুন ২০২৪ , ৩:৫৩:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ
আন্দোলন সংগ্রামে ব্যর্থতা, দলীয় কোন্দল নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে না পারা, দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে এক ছাতার নিচে এনে সংগঠিত করতে না পারা এবং মহানগরের আওতাধীন সাংগঠনিক কমিটিগুলো করতে না পারাসহ নানা অভিযোগে সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে।
২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদাহ হোসেনকে আহ্বায়ক এবং আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছিলো কেন্দ্র। ৩ মাসের জন্য ঘোষিত কমিটি ৩ বছরেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারার ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে শেষ পর্যন্ত বিদায় নিতে হলো তাদেরকে।
এদিকে মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শাহাদাত-বক্কর কিছু কিছু জায়গায় ব্যর্থ হলেও তারা নিজেদের মধ্যে গ্রুপিংমুক্ত থেকে দল পরিচালনা করতে পেরেছেন। আগে সভাপতি-সম্পাদক কিংবা আহ্বায়ক সদস্য সচিবের মধ্যে যে গ্রুপিং ছিল এরা দু’জন সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তাদের মধ্যে কোনো গ্রুপিং কিংবা কোন্দল পরিলক্ষিত হয়নি।
তাছাড়া শাহাদাত-বক্কর মানের নেতার সংকট রয়েছে যারা মহানগরে নেতৃত্ব দেয়ার সক্ষমতা রাখেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই দুই নেতার পরিচিতি, নিজস্ব বলয়ের কর্মী আর রাজনৈতিক ধারাবাহিকতার কারণে নগরের প্রতিটি থানা ওয়ার্ডে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। এখন এদেরকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটিতে যারা আলোচনায় আছেন তাদের অবস্থান ততটা শক্ত নয় বলে দলীয় এ সূত্রের দাবি।
তাছাড়া তাদের সাংগঠনিক দক্ষতাও শাহাদাত-বক্করের সমপর্যায়ের নয়।অপরদিকে দলের আরেক অংশ বলছেন, ঘর গোছানোর অংশ হিসাবেই নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামের কারণে সাংগঠনিকভাবে দলকে সাজানো যায়নি। নগর বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছিল থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠনের। যা তারা করতে পারেননি, বিষয়টি নিয়েও ক্ষুব্ধ দলের হাই কমান্ড।
২০২০ সালে দায়িত্বগ্রহণ করা মহানগর বিএনপির নেতাদের দ্রুততম সময়ে নগরীর থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দ্রুত সময়ে নতুন কমিটি গঠনের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করছেন। তারা বলছেন, কমিটি গঠনে দেরি হলে নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের মনোবল ভেঙ্গে যেতে পারে। আবার নতুন কমিটিতে পদ-পদবি নিয়ে কলহ বিরোধও দেখা দিতে পারে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কর্মী-বান্ধব বলে পরিচিত ডা. শাহাদাত তৃণমূলে বেশ জনপ্রিয়। নেতাকর্মীদের বিপদ-আপদে এগিয়ে আসার কারণে দলের ভেতরে শক্তিশালী অবস্থানও রয়েছে তার।
আর সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের আছে নিজস্ব একটি শক্তিশালী বলয়। যদিও গত ২৮শে অক্টোবরের পর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত কোনো মিছিল-মিটিংয়ে দেখা যায়নি তাকে। আহ্বায়ক ডা. শাহাদাতকেও প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি তখন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর বিএনপি’র এক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘দলে শাহাদাত বক্কর ভাইয়ের ভূমিকা আছে ঠিক। তবে দীর্ঘদিন স্টিয়ারিংয়ে থেকেও তারা নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে পারেননি। থানা -ওয়ার্ড কমিটি দিতে পারেননি। বিশেষ করে গত নির্বাচন পূর্ববর্তী আন্দোলন-সংগ্রামে উনাদেরকে প্রকাশ্যে পাওয়া যায়নি। মহানগর যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে উনাদের সমন্বয় নেই।
যেটার কারণে চট্টগ্রামে শক্তিশালী আন্দোলন হয়নি।’দলের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মহানগর বিএনপি’র নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শিল্পপতি এরশাদ উল্লাহ, সাবেক ছাত্রনেতা নাজিমুর রহমান ও নগর যুবদলের আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন দীপ্তি এই ৫ জনের মধ্য থেকেই নতুন সভাপতি-সেক্রেটারি করা হচ্ছে।
কিন্তু বিএনপি’র মতো একটি বড় দলে চট্টগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার মতো নেতৃত্বের সংকট চোখে পড়ার মতো। শাহাদাত-বক্করকে বাদ দিলে তাদের সমমানের নেতৃত্বের সংকট আছে বলেই নতুন কমিটিতেও ঘুরে ফিরে তারা আলোচনায় আছেন। এর বাইরে মাত্র যে পাঁচ ছয়জন আলোচনায় আছেন তাদের অভিজ্ঞতায় ঘাটতি আছে বলেও একাংশের দাবি।
সবমিলিয়ে অতীতের মতো সমৃদ্ধ নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার চট্টগ্রাম নগর বিএনপিতে। তবে সিনিয়র নেতাদের দাবি, বিএনপিতে নেতৃত্বের কোনো সংকট নেই। নেতৃত্ব দেয়ার মতো বহু যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতা রয়েছেন মহানগরে।