দেশজুড়ে

বিদ্যুৎ বিহীন অন্ধকারের মতই নাজমার জীবন অন্ধকারচ্ছন্ন!

  প্রতিনিধি ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৫:১০:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ

বিদ্যুৎ বিহীন অন্ধকারের মতই নাজমার জীবন অন্ধকারচ্ছন্ন!

শীত আসে শীত যায়। দিন গড়িয়ে রাতের বুকে নামে। কিন্তু  নাজমার অভাব ফুরায় না। তার এই অভাব তো এক দিনের নয়। ৫৫ বছরের পুড়নো অভাবী নাজমা এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। বিদ্যুৎ বিহীন অন্ধকারের মতই তার জীবন অন্ধকারচ্ছন্ন। ৫৫ বছরের এই বৃদ্ধার  পিঠা বিক্রি করে পেট চললেও মাথা গুছাইবার ঠাঁই নেই তার। ছোট্ট টিনের ঘরের চাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি আসলেই ঘরের এক পাশ থেকে আরেক পাশে দৌড়ান মাথা গুছাবার জন্য। এমন কঠিন বাস্তব চিত্রের কথা শুনা যায়, ভোলা  পৌরসভার খালপাড় পাইপাস সড়ক উকিল পাড়া ল্যাবএ্যাইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ৫০ গজ উত্তর দিকে সড়কের পাশে। 

বিধবা নাজমার সাথে কথা বলে জানা যায়, শীত এলেই পিঠা বিক্রি শুরু করেন। আয়ের পয়সায় জোটে পেটের ভাত। বছরের অন্য সময় গৃহপরিচারীকার কাজ করে মাসিক ১২শ টাকা বেতন  দিয়ে পেট চালান। তবে বয়সে ভাটা পড়ায় গৃহপরিচারিকার কাজেও এখন তার করা সম্ভব হচ্ছেনা। আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা মাঝে মধ্যে সাহায্য সহযোগিতা করলেও বর্তমান বাজারে জীবন বাঁচানো কষ্ট হয়ে দাড়িয়েছে তার৷ 

পিঠা বিক্রি করার দোকানের পাশেই তার জরাজীর্ণ বসবাস অযোগ্য ঘর। সেখানেই   ওয়ারিশসূত্রে পাওয়া ছোট্ট ভিটায় বাস করলেও এখন অবধি বিদ্যুৎ বিহীন থাকেন তিনি৷ বৃষ্টি আসলেই একপাশ থেকে অন্যপাশে ছুটে বেড়ান আশ্রয়ের জন্য।ঘরের উপরে নষ্ট হয়ে যাওয়া টিনের বড় বড় ছিদ্র থাকায় খোলা আকাশের নিচের মতই কাটছে তার জীবন৷ স্বামী  মরহুম আবুল কাশেম ২২ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায়  মারা গেছেন। সেই থেকে শুরু হয়েছে বৃদ্ধা নাজমার  বাঁচার লড়াই। তবে স্বামী মৃত্যুর পূর্বেও তেমন সুখ জোটেনি তার কপালে।  স্বামী আবুল কাশেম দ্বিতীয় বিয়ে করায় বেঁচে  থাকা অবস্থায়ও সুখের ছোঁয়া পায়নি তিনি।  

 সংসারে নাজমার কেউ নেই। নিজের পেটের তাগিদেই এখনো শ্রম বিক্রি করেন এই বৃদ্ধা। মূলত নাজমার জন্য শীত আসে আশির্বাদ হয়ে। শীতের পাঁচ মাস পিঠা বিক্রি করে চলে তার এক পেটের সংসার। 

বৃদ্ধা নাজমা বলেন, ঢেঁকিছাঁটা চালের গুড়া ২/৩ ঘণ্টা পূরে ভিজিয়ে চিতই পিঠা তৈরি করেন। খালপাড় সড়ক ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা মাঝেমধ্যে সেখানে গিয়ে তার হাতের বানানো পিঠা খান। প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ টাকার পিঠা বিক্রি করেন। ফলে খরচ বাদে পিঠা বিক্রি করে ৫০ থেকে ১০০ টাক আয় করেন,  এই টাকাতেই মেটাতে হয় খাওয়া-দাওয়া ওষুধসহ অন্যসব চাহিদা।

তিনি বলেন, স্বামী হারানোর পর দীর্ঘ ২২ বছর অন্যের বাড়ি কাজ করে এক মেয়ে নিয়ে জীবন বাঁচিয়ে রেখেছেন। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর থেকে আরও একাকীত্ব হয়ে  জীবন পার করছেন তিনি। বয়স বাড়ায় বল-শক্তি কমেছে। কমেছে দৃষ্টিশক্তিও। একারণে তিনি আর অন্যের বাড়িতে কাজ করতে না পারলেও ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজে যেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে পিঠা বিক্রির পথ বেছে নিয়েছেন।

বৃদ্ধ নাজমা কান্না করে অশ্রুসিক্ত জলে  সরকারি ও দেশের অর্থ বিত্তশালী সকলের কাছ থেকে সাহায্য  সহযোগিতা চেয়েছেন।  কেউ ছোট্র ঘরের টিনগুলো কিনে দিলে নামাজ পরে দু’হাত তুলে দোয়া করতাম।