প্রতিনিধি ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ , ৫:৪৪:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ
হাড় কাঁপানো কনকনে শীতের রাতে প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে নেই। গরম কাপড় জড়িয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন সামর্থ্যবানরা। কিন্তু চরম বিপাকে পড়েছে ভবঘুরে, আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী, নিম্ন আয়ের অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষ। শীতের তীব্রতায় কাঁপছে তারা। বিশেষ করে, বয়োজ্যেষ্ঠ ও শিশুরা চরম বিপাকে পড়েছে। হাড় কাঁপানো শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে গরম ও উষ্ণ শীতবস্ত্রের জন্য হাহাকার করে এসব শীতার্তরা। এমতাবস্থায় এসব অসহায় মানুষের কাছে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিতে মাঝরাতে দরজায় কড়া নেড়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে ঘরে গিয়ে কম্বল বিতরণ করেছেন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক মো. রাজিব হোসেন।
এভাবে গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনি নিজ হাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাসহ ছিন্নমূল অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করছেন।
গত শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার সাতবাড়িয়া রশিদিয়া মাদ্রাসা, দোহাজারী পৌরসভা সদরে ফুটপাতে রাত্রিযাপন করা ছিন্নমূল, মানসিক ভারসাম্যহীন, রিক্সা চালক, ভাসমান দোকানদার, ঝাড়ুদার, দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন, বেগম বাজার, কিল্লাপাড়া, দোহাজারী মাদ্রাসার এতিমদের পাশাপাশি দিয়াকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১২০টি ঘরের বাসিন্দা সহ আশেপাশের অসহায় পরিবারের মাঝে নিজ হাতে কম্বল বিতরণ করতে দেখা গেছে তাঁকে।
কনকনে শীতের রাতে নিজের দুয়ারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব হোসেনের হাতে কম্বল দেখে ছিন্নমূল দুঃস্থ, অসহায় মানুষগুলো আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
শীতবস্ত্র পাওয়া একাধিক ব্যক্তি বলেন, এই কনকনে শীতের মধ্যে কম্বল পেয়ে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। ফ্রি কম্বল পাওয়ায় অন্তত শীত থেকে নিজেদেরকে আরেকটু ভালোভাবে রক্ষা করতে পারবো। অনেকে আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, বিশ্বাস করতে কস্ট হচ্ছে এত গভীর রাতে ইউএনও আমাদের মতো অসহায়দের ঘরের দুয়ারে এসে কম্বল দিয়েছেন।
প্রকৃত দুঃস্থদের কাছে কম্বল বিতরণ করতে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন উল্লেখ করে ইউএনও মো. রাজিব হোসেন বলেন, ডেকে এনে দিলে যার প্রয়োজন সেও হাত বাড়ায়, যার প্রয়োজন নেই সেও হাত বাড়ায়। যারা প্রকৃত দুঃস্থ, যাদের কম্বল প্রয়োজন তাঁদের অনেকেই দিনের বেলায় মাঠে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। রাতে সকলকে ঘরে পাওয়া যায়। তাছাড়া মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাঁদের বিভিন্ন সমস্যাগুলো শুনতে পাচ্ছি। সেগুলো সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নিতে পারছি। কেবল দায় এড়ানোর জন্য নয়, মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে প্রতি রাতে অসহায় শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। কিছু ভালোবাসা, কিছু মায়া দায়িত্ব পালনের অনুপ্রেরণা বাড়ায়। উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ঘুরে ছিন্নমূল, গরীব ও অসহায় শীর্তাত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।