প্রতিনিধি ১৫ অক্টোবর ২০২৪ , ৪:৫৭:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ
মিরসরাই উপজেলায় এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি ও জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। ওই চেয়ারম্যানের নাম আবুল কাশেম। তিনি উপজেলার ১০ নং মিঠানালা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তার হত্যার হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ৯ নং মিরসরাই সদর ইউনিয়নের পশ্চিম কিছমত জাফরাবাদ গ্রামের মৃত ডাক্তার শফি উল্লাহ মিয়ার পুত্র শামসুল আলম। একাধিক শালিসী বৈঠক, জোরারগঞ্জ থানা ও মিরসরাই উপজেলা সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ প্রদান এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শামসুল আলম।
ভুক্তভোগী শামসুল আলম জানান, ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ সালে নগদ ১৮ লক্ষ টাকায় মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের পশ্চিম ইছাখালী মৌজার বি.এস ১৩২৩ নং খতিয়ান থেকে সৃজিত নামজারী বি.এস ৪১৬৪ খতিয়ানভুক্ত ১৩৯১৩ দাগে ৭২৬ শতকের আন্দর ৫৪ শতাংশ জমি উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পশ্চিম মিঠানালা এলাকার হাফেজ আহম্মদের পুত্র দিদারুল আলম থেকে আমার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের নামে ক্রয় করি। জোরারগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে যার দলিল নং-৯৩২, সৃজিত বিএস খতিয়ান নং-৪৭৭৩। জমি ক্রয় করার কিছুদিন পর জমিতে মাটি ভরাট করতে গেলে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ও তার আওয়ামী সন্ত্রাসী দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাঁধা দেয় এবং কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এছাড়া চেয়ারম্যান আবুল কাশেম তার লালিত সন্ত্রাসীদের পাঠিয়ে আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমিতে কোনপ্রকার কাজ করতে বাঁধা দেয় এবং আমার ক্রয়কৃত জায়গায় অবৈধ স্থাপনা তৈরির চেষ্টা করে। আমি প্রশাসনিকভাবে কোনপ্রকার প্রতিকার না পেয়ে আমার স্ত্রী জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ভাই আবুল বশরকে বিবাদী করে ২০২০ সালে চট্টগ্রাম সদর মিরসরাই সহকারী জজ আদালতে মামলা (নং-১২৭) দায়ের করি। মামলা দায়েরের পর আদালত অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে একাধিকবার নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিষেধাজ্ঞা জারির পরও আদালত ও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে জমি অবৈধভাবে দখল করে রাখে।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, কয়েকদিন পূর্বে জায়গার বিরোধ নিয়ে চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ০১৮৭৭৪৫৯৬৫৮ নাম্বার থেকে আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। এরপর থেকে আমি আমার জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
ভুক্তভোগী জেসমিন আক্তার জানান, জমি ক্রয় করার পর বিগত ৭ বছর যাবত আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ও তার ভাই আবুল বশর আমার ক্রয়কৃত জমি তাদের কাছে বিক্রি করার জন্য নানা ব্যক্তির মাধ্যমে প্রস্তাব দিয়ে আসছে। আমি রাজি না হলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বর্তমানে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যদিয়ে দিনযাপন করছি। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে আমার জায়গায় সেমিপাকা ঘর ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করলে সন্ত্রাসী আবুল কাশেম তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে রাতের আঁধারে আমার স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলে এবং চাঁদা দাবী করে। এই ঘটনায় জোরারগঞ্জ থানায় গত ৯ সেপ্টেম্বর আমার স্বামী বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এবিষয়ে জোরারগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল হান্নান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। উভয় পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এক পক্ষ ওই বিরোধীয় জায়গায় স্থাপনা গড়ে তুলেন অপর পক্ষ সেই স্থাপনা ভেঙ্গে দিচ্ছেন। বিষয়টি তদন্তনাধীন রয়েছে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, শামসুল আলমকে আমি মুঠোফোনে কোন হুমকি দিইনি। তৎকালীন জোরারগঞ্জ থানার ওসি ইফতেখার হাসান, ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফাসহ উভয় পক্ষের কয়েকজন প্রতিনিধিসহ শালিসী বৈঠক হয়। বৈঠকে শামসুল আলম তার দখল ছেড়ে দিতে আমার কাছে ১৫ লক্ষ টাকা দাবী করেন। ওই জায়গা ভুয়া দলিল করে সে দখলে নিয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে আমরা এলাকা ছাড়া হলে সে আমার স্থাপনা ভেঙ্গে নিজে স্থায়ী স্থাপনা তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।