প্রতিনিধি ১১ জুলাই ২০২৩ , ৪:১৪:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ
শামীম আহসান মল্লিক, মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে শুরু হলো জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা ২০২২ ও ২০২৩ এর কার্যক্রম। কিছুই হচ্ছে না নিয়ম মাফিক। জাতীয় শিশু একাডেমির নির্দেশনার বেশিরভাগই হচ্ছে উপেক্ষিত। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায় চাপাচ্ছেন পরস্পরের ওপর।
‘শিশুরা থাকুক হাসিতে, শিশুরা থাকুক খুশিতে- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে সোনার বাংলা বিনির্মানে তৃণমূল থেকে শিশু প্রতিভা অন্বেষণের উদ্দেশ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রতি বছর দেশব্যাপী এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে।
জাতীয় পর্যায়ে শিশুদের জন্য এটি সর্ববৃহৎ প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতা হতে বিজয়ী শিশুরা জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। অথচ মোরেলগঞ্জ উপজেলায় দায়সারা মানসিকতা নিয়ে চলছে এর কার্যক্রম। উপজেলার বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়হীনতা, দায়িত্ব পালনে অনীহা ও অব্যবস্থাপনায় সরকারের শিশু প্রতিভা অন্বেষণের এ বৃহৎ উদ্যোগ ভেস্তে যেতে চলেছে বলে অনেকের অভিমত।
অভিভাবক সহ বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের মধ্যে দেখা গেছে তীব্র ক্ষোভ। সময়মতো চিঠি ইস্যু না করা, পর্যাপ্ত প্রতিযোগি অংশগ্রহণ না করা, কিছু কিছু প্রতিযোগিতার বিষয় বাদ দেওয়া, একই দিনে একই সময়ে দুই ভেন্যুতে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা সহ নানা অব্যবস্থাপনা অনিয়মে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট অভিভাবকেরা।
মোরেলগঞ্জ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩০৭ টি তার মধ্য থেকে মাত্র ৫/৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় অংশ গ্রহণ করেন।
এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে শতাধিক প্রতিষ্ঠানের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলেও সর্বক্ষেত্রে দেখা গেছে প্রতিযোগী সংকট। মাদ্রাসা গুলো এব্যাপারে কোন কিছু জানেনা।
সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বয় না করার কারণে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে মাঠপর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ও শিক্ষক নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলনা কোন ব্যানার, কোন সাজসজ্জা, রাস্তার পাশে ছোট একটি বালু ভরাট জায়গায় হয়ে গেল ক্রীড়া বিষয়ক বিভিন্ন ইভেন্টের প্রতিযোগিতা। গুটিকয়েক শিক্ষকের সমন্বয় শুরু হলো এ প্রতিযোগিতা তার মধ্য থেকে জনৈক শিক্ষকের আসাদআচরণের কারণে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাকে। এ যেন হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই না।
দাবা প্রতিযোগিতা মাত্র দুটো কোড দিয়ে চারজনের মধ্যে সমাপ্তি হলো। ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় দুইজন করে চারজনার খেলার কথা থাকলেও প্রতিযোগীদের অভাবে দুজন দিয়ে সমাপ্তি করা হলো। পাশাপাশি সাঁতার প্রতিযোগিতায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতিতে স্কুলের ইউনিফর্ম গায়ে জড়িয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সাঁতার কাটতে দেখা গেছে প্রতিযোগিদের। স্বল্প সংখ্যক প্রতিযোগির মধ্যে সেখানে একই স্কুলের তিনজনকে দেখা গেছে।
অথচ সেখানে দেখা যায়নি বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি সহকারী কমিশনার ( ভূমি) মোঃ আব্দুল মালেক, ক্রীড়া বিষয়ক প্রতিযোগিতার আহ্বায়ক যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রতন কৃষ্ণ দাসকে। এমনকি দেখা যায়নি উপজেলা পরিষদের কাউকেই। উপজেলা শিক্ষা কমিটির সদস্য মোঃ মিজানুর রহমান জানান, এ ব্যাপারে আমাদেরকে অবহিত করা হয়নি। উপজেলা শিক্ষক নেতৃবৃন্দও এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সদস্য সচিব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানকে কিছু সময় মাঠে দেখা গেলেও সেখানে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠতে শুরু করলে তড়িঘড়ি করে তিনি স্থান ত্যাগ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক জানান, ‘ক’ বিভাগের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার নির্দেশনা থাকলেও চিঠিতে নেই সে বিষয় নেই কোন ‘ক’ গ্রুপের প্রতিযোগিতা।
১১ জুলাই শনিবার সকাল ১০ টায় দুইটি ভেন্যুতে রাখা হয়েছে শিক্ষা বিষয়ক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিযোগিতা। ফলে দুটি ক্ষেত্রে অংগ্রহণেচ্ছু প্রতিযোগির অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
সদস্য সচিব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের গাফলতির কারণে সর্বক্ষেত্রে এরূপ অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাঠ পর্যায়ের বেশ কিছু শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ জানান।
এদিকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা। তারা বলেন, সুষ্ঠুভাবে জাতীয় পর্যায়ের এ প্রতিযোগিতা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষ সহ গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা নেওয়ার জাতীয় শিশু একাডেমির নির্দেশনা থাকলেও এ ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি বলে উপজেলার গণমাধ্যম কর্মীরা জানান। এসব অব্যবস্থাপনায় সরকারের শিশু প্রতিভা অন্বেষণের এ বৃহৎ কার্যক্রম এই উপজেলায় ব্যর্থ হতে চলেছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেছেন সচেতনমহল।
বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমাননের কাছে বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতি সকল দায় দায়িত্ব তার আমার কাছে কিছু জানতে না চেয়ে তার কাছে জানেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম তারেক সুলতান প্রশিক্ষণে দেশের বাইরে থাকায় এ প্রতিযোগিতার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে চলতি দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) মোঃ আব্দুল মালেক বলেন,
কোন অনিয়ম হচ্ছে না নিয়মমাফিকই সবকিছু হচ্ছে। তবে সদস্য সচিব হিসেবে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে সমন্বয়ে করে কাজ করার দায়িত্ব সদস্য সচিবের উপর।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডঃ মোঃ শাহ ই আলম বাচ্চু বলেন, ব্যাপারটা আমি দেখতেছি তবে সকলকে সমন্বয় করে কাজ করাটাই সকলের জন্য মঙ্গল।