প্রতিনিধি ১৫ মে ২০২৪ , ৩:৫২:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ
বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য স্ব মহিমায় উজ্জ্বলতার সাক্ষর রেখেছেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ৪ জয়িতা। জিতেও নিয়েছেন শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা।
এরা হলেন শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে নাজমুন নাহার, সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য মহিলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোরশেদা আকতার, নির্যাতনের বিভীষিকাময় জীবন মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা সফল নারী হিসেবে শাহিনুর আকতার মুন্নি এবং অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে নুপুর বেগম। শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী নাজমুন নাহার বর্তমান উপজেলার ১২২ নং গাউসুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক।
তিনি ১৯৯৯ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরিতে যোগদান করে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। কারণ হিসেবে তিনি শিক্ষা বিস্তারকে প্রাধান্য দেন। “নারীরা সমাজের কোনো বোঝা নয় ” এ নিয়ে তিনি মায়েদেরকে সচেতনতার পাশাপাশি মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশসহ বাল্যবিবাহ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও বিদ্যালয়ের ক্যাসমেন্ট এরিয়ার গরিব, অসহায়, অসচ্ছল ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে ও তিনি কাজ করছেন। সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য জয়িতার সম্মাননা পেয়েছেন উপজেলার ১নং তেলিগাতী ইউনিয়নের একাধিকবার নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান মোরশেদা আক্তার। তার স্বামীও ছিলেন এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
স্বামী চেয়ারম্যান থাকার সুবাদে সেই সময়ে সাধারণ মানুষের সুখে দুখে তাদের পাশে থেকে সমাজ উন্নয়নে কাজ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর নিজেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সমাজ উন্নয়নে আরো নিবেদিত হন। যৌতুক, বাল্য বিবাহ, নারী ও শিশু নির্যাতন, নারী ও শিশু পাচার রোধ, মহিলাদের স্বাস্থ্য সম্মত জীবন যাপন উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনতা সৃষ্টি ও সমাজ উন্নয়নে তিনি অবদান রেখে চলছেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশ, উঠান বৈঠক করে বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করছেন। আর এ কারণেই তার ইউনিয়নে বাল্যবিবাহ নেই বললেই চলে। নারী ক্ষমতায়নেও কাজ করছেন।
নারী কর্মসংস্থানের জন্য সেলাই মেশিন বিতরণ সহ নারীদের বিভিন্ন উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নারী নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করে সফল নারীর মধ্যে রয়েছেন মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মোকলেছুর রহমানের কন্যা শাহিনুর আক্তার মুন্নি। তিনি দুই সন্তানের জননী। পিতার অভাব অনটনের সংসারে এসএসসি পাশের পর বিয়ে হয়। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়ে পিতার বাড়িতে চলে আসতে বাধ্য হন। স্বামী ২য় বিয়ে করে। দুই সন্তান নিয়ে অসহায় জীবনযাপন ও চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে সে গার্মেন্টসে চাকরি নেয়।
জীবনযুদ্ধে অদম্য শাহিনুর বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কর্মরত আছেন। সন্তানদের লেখাপড়া শিখাচ্ছেন। তিনি বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতনে প্রতিরোধে কাজ করছেন। অর্থনৈতিক অভাব অনটনের মধ্যে থেকেও নিজ অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে জয়িতার সম্মাননা পেয়েছেন নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাষান দল গ্রামের নুপুর বেগম। দরিদ্র পিতার সংসারে ৮ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার বিয়ে হয়। ২ সন্তানের জননী নুপুর বেগমের স্বামী জয়নাল আবেদীন দিনমজুর।
যে কারণে সংসারে ছিল অশান্তি। নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার নুপুর বেগম দমে থাকেনি। নিজ উদ্যোগে ও বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা নিয়ে শুরু করেন হাঁস,মুরগী, গাভি পালন। ক্রমান্বয়ে দোকান,গাড়ি রাখা ও চার্জ দেওয়ার গ্যারেজ করেন। এখন তিনি প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন।
সন্তানরা লেখাপড়া করছে। ৬০ সদস্যের ২০ পরিবার নিয়ে গঠিত ‘পল্লী সমাজ’ নামের সংগঠনের তিনি সদস্য। তিনি এ সংগঠনের মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী ও সচেতনতা মূলক কার্যক্রম করছেন। নিজেও গড়েছেন সুখের সংসার।