প্রতিনিধি ৪ জানুয়ারি ২০২৫ , ৭:৩৩:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান, বিয়ে, আকিকা, ওরশ, মিলাদ মাহফিল, জন্মদিন, বৌভাত, ইফতার পার্টি ও বনভোজন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পোলাও, কোরমা, কাচ্চি বিরিয়ানী, আকনি পোলাও সহ বিভিন্ন আইটেমের মুখরোচক খাবার রান্নার করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার কিল্লাপাড়া এলাকার আলী আকবর বাবুর্চির। পেশাদার বাবুর্চি হলেও অনেকটা অন্তর থেকে রান্নাকেও একধরনের ইবাদত হিসেবে নিয়ে প্রতিটি আয়োজনে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে তাঁর কাজটি করে যাচ্ছেন সফলতার সাথে। তাই দোহাজারীর গন্ডি ছাড়িয়ে পুরো বৃহত্তর চট্টগ্রামজুড়ে খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগর, কক্সবাজার, চকরিয়া, বান্দরবান সহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের রান্নার কাজ তিনি করেছেন বলে জানা গেছে।
তাঁর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের বহু দিক। ১৯৯০ সালে দোহাজারী পৌরসভার মুন্সি মিয়া বাবুর্চি ওরফে বড় মুন্সি’র সহকারী (ম্যাট) হিসেবে বাবুর্চি কাজে যোগ দেন তিনি। দীর্ঘ ১০ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৯ সাল থেকে ওস্তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অর্ডার নিতে থাকেন এবং সুনিপুণ দক্ষতা ও অত্যন্ত সুনামের সাথে অদ্যাবধি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্নার কাজ করেন আলী আকবর বাবুর্চি। কোন মসলা কোন খাবারের জন্য নয়, কোন মশলা ঠিক কতটুকু দিলে মাংসের ভেতর পর্যন্ত পৌঁছাবে, রান্নার কোন পর্যায়ে এসে আগুনের আঁচ ঠিক কতটা কমাতে হবে এসব এখন চোখ বন্ধ করেই সারতে পারেন আলী আকবর বাবুর্চি।
দোহাজারী পৌরসভার কিল্লাপাড়া এলাকার মরহুম আব্দুল হাশিম ও আম্বিয়া খাতুন এর পুত্র আলী আকবর বাবুর্চি ব্যক্তিগত জীবনে ২ সন্তানের জনক। তাঁর বড় ছেলে মোঃ আনিসুর রহমান দোহাজারী রায়জোয়ারা ইসলামীয়া নজিরিয়া সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জামিজুরী রজবিয়া আজিজিয়া রহমানিয়া সুন্নিয়া ফাযিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে এখন প্রবাসে রয়েছেন। আর ২য় ছেলে মোঃ আরিফুল ইসলাম স্থানীয় একটি স্কুলের ৫ম শ্রেণীতে পড়ছেন।
বর্ষা মৌসুমে তিন মাস অনুষ্ঠান খুব কম থাকায় কিছুটা অবসর যাপন করতে পারলেও শীতের মৌসুমে তাঁর দম ফেলার ফুরসত থাকে না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সকাল-বিকাল রান্না করতে থাকেন। এখন অবশ্য আগের থেকে পরিস্থিতি কিছুটা বদলে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাবুর্চিরা আগে যেখানে সপ্তাহে কাজ পেতো তিন থেকে চারটা। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় থেকে ৭টা। কোন কোন সময় দিনে তিনটা অনুষ্ঠানেও রান্নার অর্ডার আসে। আগে খাবার আইটেম কম থাকলেও ক্রমান্বয়ে মানুষের রুচি-অভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে বিধায় এখন আইটেম অনেক বেড়েছে। বাবুর্চি পেশায় ৩৪ বছর অত্যন্ত সুনামের সাথে পার করেছি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই পেশাতেই সুনামের সাথে জড়িয়ে থাকতে চাই। রান্নাকে আমি এক ধরনের এবাদতের মতোই দেখি।”