প্রতিনিধি ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৬:৩২:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার শেষ সীমানা রামগড়ের মহামুনি এলাকায় স্থাপিত রামগড় স্থল বন্দর চালুর জন্য পুরাপুরি প্রস্তুর আছে সব অবকাঠামো।
এখন দু-দেশের উচ্চ পযার্য়ের সিদ্ধান্ত গ্রহনের উপর নির্ভর করছে কখন এই স্থল বন্দরটি চালু হবে। স্থানীয় বাগান বাজর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সাজু বলেন রামগড় স্থলবন্দরটি চালু হলে শুধু এই অঞ্চল নয়, পুরো দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বলা যায় প্রাণসঞ্চারী উদ্যোগ এটি।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম, পর্যটননগরী কক্সবাজার এবং ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স-খ্যাত সাত রাজ্যের কয়েক কোটি মানুষ এ বন্দর ব্যবহারে উপকৃত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে আরও সুদৃঢ় হবে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর বন্ধন।
পুরোদমে এই বন্দরের কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারী-ফটিকছড়ি উপজেলার হেয়াকোঁ সড়কের ৩২ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ করা হয়েছে। তাছাড়া মীরসরাই উপজেলার বারৈয়ারহাট হেয়াঁকো রামগড় ৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়ক প্রশস্ত ও আধুনিকীকরণ কাজ গত ২৪ মে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ।
এতে রামগড় স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কাজ আরও একধাপ এগিয়ে গেল। নির্মাণাধীন বন্দরটি উত্তর চট্টগ্রামের প্রথম এবং একমাত্র স্থলবন্দর। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে আগেই উদ্বোধন হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১। যেটি ফেনী নদীর ওপর রামগড় মহামুনি নামক স্থানে স্থাপিত। এ সেতু দুদেশকে সংযুক্ত করেছে। ইমিগ্রেশন ভবনও প্রস্তুত। মৈত্রী সেতুর সামনের দক্ষিণাংশে সদ্য নির্মিত ভবনে একই সঙ্গে দুদেশের যাতায়াতকারীদের কাস্টমস, ইমিগ্রেশনসহ চেকিং কার্য সম্পন্ন হওয়ার কথা।
বন্দর সংশ্লিষ্ট ধারাবাহিক কাজের অংশ হিসাবেই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অত্যাধুনিক ও যুগপোযোগী করতে সড়ক প্রশস্ত ও আধুনিকীকরণে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১১শ কোটি টাকার বেশি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির প্রশস্ততা ৫.৫০ মিটার (১৮ ফুট) থেকে ১১.৩০ মিটার (৩৮ ফুট) করা হবে। এ ছাড়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৯টি সেতু (২৪৯.২০ মিটার) এবং ২৩টি কালভার্ট (১০৮ মিটার) নির্মাণ করা হবে।
রামগড়ের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে ইতোমধ্যে মিরসরাই-ফটিকছড়িসহ উত্তর চট্টগ্রামের সড়ক ব্যবস্থাপনায় এসেছে বৈপ্লবিক উন্নয়ন। এছাড়া মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের নানা কর্মকা-ে রামগড় বন্দর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠবে। এ কারণে পাশাপাশি চট্টগ্রামের নাজিরহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের মহাপরিকল্পনার বিষয়টি সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছেন।
সড়ক প্রশস্ত ও আধুনিকীকরণের কাজ সম্পন্ন হলে রামগড়ের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ হবে আরও সহজ। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি থেকে বিভিন্ন পণ্য ঢাকায় পৌঁছাতে সময় কম লাগবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ১১২ কিলোমিটার দূরত্বের এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে মাত্র ৩ ঘণ্টায় ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য যাবে ভারতে। পাশাপাশি এ সড়কের মাধ্যমে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচলের (সেভেনসিস্টার্স) সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে।
এব্যাপারে স্থানীয় এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত রামগড় বন্দরটি পুরোপুরি চালু হলে রামগড় থেকে ভারত হয়ে সিলেট মাধবপুর পর্যন্ত নরসিংদী-মৌলভীবাজার সড়কে যুক্ত হয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষ ময়মনসিংহ ও সিলেট যেতে পারবেন অনায়াসেই। জনমনে প্রশান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্থলবন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্টতার কারণে বেনাপোলকে ছাড়িয়ে যাবে রামগড় স্থলবন্দর। সফল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে এই স্থলবন্দর খুলবে সমৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়।