রংপুর

সবজিতে স্বস্তি, উলিপুরে কাচা মরিচ ও পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত

  প্রতিনিধি ১৭ আগস্ট ২০২৪ , ৩:৩২:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

সবজিতে স্বস্তি, উলিপুরে কাচা মরিচ ও পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত

কুড়িগ্রামের উলিপুরে সবজিতে স্বস্তি ফিরলেও অস্বস্তিতে পড়েছেন কাচামরিচ ও পেঁয়াজের দামে। সকল ধরনের সবজির দাম কিছুটা কমলেও কাচা মরিচ ও পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৩শ ৫০ টাকা ও পেঁয়াজ ১’শ ১০ টাকা দরে খুচরা দোকানে বিক্রয় হচ্ছে। মরিচ ও পেঁয়াজ ছাড়া অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সবজির দাম কিছুটা কমেছে কয়েকদিনের ব্যাবধানে। এতে করে স্বস্তিতে আছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। এদিকে কাচামরিচ ও পেঁয়াজের দাম সহ অন্যান্য জিনিসের দাম অপরিবর্তিত থাকায় কমে গেছে বেঁচাকেনা। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন।

সরেজমিনে শনিবার (১৭ আগষ্ট) উলিপুরের কাঁচা বাজার গিয়ে দেখা যায়, আলু (স্টিক) পাইকারী প্রতি কেজি ৪৬ টাকা, খুচরা ৫০ টাকা, দেশী আলু পাইকারী ৫২ টাকা, খুচরা ৬০ টাকা, পেঁয়াজ পাইকারী ১শ টাকা, খুচরা ১শ ১০ টাকা, রসুন পাইকারী ১শ ৮০ টাকা, খুচরা ২শ টাকা, পটল পাইকারী ২৬ টাকা, খুচরা ৪০ টাকা, মিষ্ট কুমড়া পাইকারী ২৮ টাকা, খুচরা ৩৫ টাকা, আঁদা পাইকারী ৩শ টাকা, খুচরা ৩শ ২০ টাকা, শুকনা মরিচ পাইকারী ৩শ টাকা, খুচরা ৪শ টাকা, শসা পাইকারী ৬০ টাকা, খুচরা ৭০ টাকা, বেগুন পাইকারী ৪০ টাকা, খুচরা ৫০ টাকা, করলা পাইকারী ৫০ টাকা, খুচরা ৬০ টাকা, কদোয়া পাইকারী ৪০ টাকা, খুচরা ৫০ টাকা, কাকেল্লা পাইকারী ৪০ টাকা, খুচরা ৫০ টাকা, বরবটি পাইকারী ৪০ টাকা, খুচরা ৫০ টাকা, পেপে পাইকারী ২৬ টাকা, খুচরা ৩০ টাকা, ভ্যান্ডি পাইকারী ৩০ টাকা, খুচরা ৪০ টাকা, লাউ পাইকারী প্রতি পিচ ৫০ টাকা, খুচরা ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ পাইকারী প্রতি কেজি ৩শ টাকা, খুচরা ৩শ ৫০ টাকা, মুখি কচু ৩০ টাকা খুচরায় ৪০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। কাচা মরিচ, পেঁয়াজ সহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নাগালের বাহিরে হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ জন। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ক্রয় করছেন। তার পরেও সাধারণ ক্রেতারা বলেন, সবজির দাম গত কয়েক দিনের তুলনায় কিছুটা কমায় অনেক স্বস্তিতে আছেন তারা।

উলিপুর পাঠানপাড়া থেকে বাজার করতে আসা ক্রেতা কাছুয়ানি বেগম (৮০) জানান, এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) মরিচ ৯০ টাকা দিয়ে নিয়েছি। এতো চড়া দামে আগে কখনো মরিচ ক্রয় করেনি। আমি বৃদ্ধ মানুষ আমি টাকা কামাই করতে পারিনা। আমাদের মত অভাবি মানুষের চলাচল করা অনেক কষ্ট হয়ে গেছে। এখনো সবজিসহ অন্যান্য জিনিসের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে করে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের চাহিদা বেশি কিছু না। ডাল-ভর্তা খেয়ে জীবন পার করতে চাই কিন্তু ভর্তায় ব্যবহার করা মরিচের যে দাম আমরা যাবো কোথায়।

উপজেলার পান্ডুল থেকে পাইকেরিতে লাউ বেঁচতে আসা কৃষক আব্দুস সাত্তার জানান, ১৪ শতক জমিতে লাউয়ের চাষ করেছি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। লাউচাষে মোট খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত লাউ বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার টাকা। আজ পাইকারিরে বেঁচতে লাউ নিয়ে এসেছেন ১’শ পিচ। প্রতি পিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। যার মূল্য ৫ হাজার টাকা। আরও ক্ষেতে লাউ হবে প্রায় ২’শ থেকে ৩’শ পিচ। যা খরচের থেকে দ্বিগুণ লাভ হবে।

মোস্তাফিজার (৫৫) নামের এক ক্রেতা দলদলিয়া ইউনিয়ন থেকে উলিপুর বাজারের এসেছেন কাঁচা বাজার করতে। তিনি বলেন, সবজির দাম কিছুটা কমলেও কমেনি কাচা মরিচ ও পেঁয়াজের দাম। কেন মরিচ ও পেঁয়াজের দাম কমছেনা তা আমরা বুজতে পারছিনা। মরিচ ও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার দাবী জানান। এছাড়া  দিন দিন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে নিম্ন আয়ের মানুষজন বিপাকে পরেছেন। বাজার গুলো মনিটরিং করার দাবী জানান কর্তৃপক্ষের কাছে।

বিভিন্ন এলাকার গ্রামীন বাজারের সবজি দোকানী মোস্তাফিজার ও সানাউল্লাহ বলেন, বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম কিছুটা কমলেও মরিচের ও পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে মরিচ, পেঁয়াজ ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে এনে গ্রামে বিক্রি করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। বেশি দাম হওয়ায় অনেক ক্রেতাই দাম শোনার পর ফিরে যান। আবার অনেকেই সামান্য পরিমান নিয়ে যায়। আগের থেকে বেঁচাকেনা অনেক কমে গেছে। এতে করে আমাদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।

উলিপুর বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী মিলন মিয়া জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে সবজি নিয়ে এসে বাজারে পাইকারীতে বিক্রি করা হয়। সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যার কারনে সকল সবজির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যার পানিতে মরিচের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় মরিচের আমদানী কমে গেছে। এ কারনে মরিচের দাম দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে।

কাচা বাজারের আড়ৎ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মিয়া (৪৫) বলেন, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন মোকামে কাচা মরিচ, পেঁয়াজ ও অন্যান্য সবজির দাম বৃদ্ধি পেলে আমাদের এখানেও দাম বেড়ে যায়। বেশি দামে মরিচ, পেঁয়াজ ও অন্যান্য  সবজি ক্রয় করার কারনে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া কিছু কিছু সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। কাচা মরিচ, পেঁয়াজ সহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের থেকে বেঁচা কেনা অনেক কমে গেছে। একারণে ক্রয়কৃত সবজিতে পঁচন ধরে লোকশান গুনতে হচ্ছে আমাদের। জিনিসপত্রের দাম যত বাড়বে আমাদের দূর্ভোগও তত বাড়বে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।

আরও খবর

Sponsered content